নবী করিম (দঃ) যখন ভূমিষ্ঠ হন- তখন এমন কতিপয় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল- যা সচরাচর দেখা যায় না। প্রথম ঘটনাটি স্বয়ং বিবি আমেনা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন এভাবে-
যখন আমার প্রসব ব্যথা শুরু হয়, তখন ঘরে আমি প্রায় একা ছিলাম এবং আমার শ্বশুর আবদুল মোত্তালিব ছিলেন কা’বা ঘরে তাওয়াফরত। আমি দেখতে পেলাম, একটি সাদা পাখির ডানা আমার কলিজায় কি যেনো মালিশ করে দিচ্ছে। এতে আমার ভয়ভীতি ও ব্যথা বেদনা দূরিভূত হয়ে গেল। এরপর দেখতে পেলাম এক গ্লাস শ্বেতশুভ্র শরবত আমার সামনে। আমি ঐ শরবতটুকু পান করে ফেললাম। অতঃপর একটি ঊর্ধ্বগামী নূর আমাকে আচ্ছাদিত করে ফেললো। এ অবস্থায় দেখতে পেলাম- আবদে মোনাফ (কোরাইশ) বংশের মহিলাদের চেহারা বিশিষ্ট এবং খেজুর বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘাঙ্গিনী অনেক মহিলা আমাকে বেষ্টন করে বসে আছেন। আমি সাহায্যের জন্য ‘ওয়া গাওয়াছা’ বলে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম- আপনারা কোথা হতে আমার বিষয় অবগত হলেন? উত্তরে তাঁদের একজন বললেন- আমি ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া। আরেকজন বললেন- আমি ইমরান তনয়া বিবি মরিয়ম এবং আমাদের সঙ্গিনীগণ হচ্ছেন বেহেস্তী হুর। আমি আরও দেখতে পেলাম- অনেক পুরুষবেশী লোক শূন্যে দণ্ডায়মান রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে রূপার পাত্র। আরও দেখতে পেলাম- একদল পাখি আমার ঘরের কোঠা ঢেকে ফেলেছে। আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের সামনের সকল পর্দা অপসারণ করে দিলেন এবং আমি পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম সব দেখতে পেলাম। আরও দেখতে পেলাম- তিনটি পতাকা। একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে স্থাপিত, অন্যটি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি স্থাপিত কাবাঘরের ছাদে। এমতাবস্থায় প্রসব বেদনার চূড়ান্ত পর্যায়ে আমার প্রিয় সন্তান হযরত মোহাম্মদ (দঃ) ভূমিষ্ঠ হলেন
— হযরত ইবনে আব্বাস সূত্রে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া
খাছায়েছে কোবরা ও তারিখুল খামীছ গ্রন্থে যথাক্রমে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রহঃ) এবং আল্লামা আবু বকর দিয়ারবিকরী (রহঃ) বিবি আমেনা (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ
বিবি আমেনা বলেন-
যখন আমার প্রিয় পুত্র ভূমিষ্ঠ হলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম- তিনি সিজদায় পড়ে আছেন। তারপর মাথা ঊর্ধ্বগামী করে শাহাদাৎ অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় পাঠ করেছেন “আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি রাসুলুল্লাহ
— যিকরে জামীল সূত্রে
উপরোক্ত বর্ণনায় কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হলোঃ
পূর্ব যুগের জুলুছ
প্রাচীনকালে ১০৯৫-১১২১ খ্রিস্টাব্দে মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উপলক্ষে ধর্মীয় জুলুছ বের করা হতো। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এতে অংশ নিতেন। উযির আফযলের যুগে এ আনন্দ মিছিল বের করা হতো। এ সময় রাজপথসমূহ লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। পরবর্তীতে এ উৎসবের প্রসার ঘটে আফ্রিকার অন্যান্য শহরে, ইউরোপের স্পেনে এবং ভারতবর্ষে। (মাকরিজী, ইবনে খাল্লেকান)
সুতরাং যারা জশনে জুলুছকে নূতন প্রথা, শিরক ও বিদ্আত বলে- তারা অতীত ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে মূর্খ। নবীবিদ্বেষ তাদেরকে অন্ধ করে রেখেছে। জশনে জুলুছ বের করা কোরআনী আয়াত দ্বারাই প্রমাণিত।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১৩) ইন্তেকাল দিবস পালন করা হয় না কেন ? | (০১৫) মিলাদুন্নবী উৎসব যুগে যুগে |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |