আর একটি বিষয় প্রশ্ন সাপেক্ষ! তা হচ্ছে- নবী করিম (দঃ)-এর শুধু জন্ম তারিখ পালন করা হয় কেন? ইনতিকাল তো একই তারিখে এবং একই দিনে হয়েছিল। সুতরাং একসাথে জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করাইতো যুক্তিযুক্ত। যেমন অন্যান্য মহামানব অলী-গাউসদের বেলায় মৃত্যু দিবসে ওরস পালন করা হয়ে থাকে।
প্রথম উত্তর হলোঃ
আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে নির্দেশ করেছেন নিয়ামত পেয়ে খুশি ও আনন্দ করার জন্য। নিয়ামত পাওয়া জন্ম উপলক্ষেই হয়। যেমন কোরআনে আছেঃ
قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَليفرحوا
হে নবী! আপনি একথা ঘোষণা করে দিন-মুসলমানগণ খোদার ফযল ও রহমত পাওয়ার কারণে যেনো নির্মল খুশি ও আনন্দ উৎসব করে। ইহা তাদের যাবতীয় সঞ্চিত সম্পদ থেকে উত্তম।
তাফসীরে রুহুল মাআনী উক্ত আয়াতে ‘ফযল ও রহমত’ অর্থে মোহাম্মদ (দঃ)-এর নাম উল্লেখ করেছেন- ইহা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর ব্যাখ্যা। রাসুল (দঃ)-এর এক হাজার চারশত নামের মধ্যে ফযল, রহমত, বরকত, নেয়ামত, নূর-প্রভৃতি অন্যতম গুণবাচক নাম- যা গ্রন্থের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং নেয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে শুকরিয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান করাই কোরআনের নির্দেশ। সূরা ইউনুসের উক্ত ৫৮নং আয়াতে নবীজীর জন্মোৎসব পালন করার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুছ কোরআনের আলোকে প্রমাণিত। (তাফসীরে রূহুল মাআনী সূরা ইউনুছ ৫৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা)
মোদ্দাকথাঃ
আল্লাহপাক হুযুর (দঃ)-এর আবির্ভাব উপলক্ষে আনন্দোৎসব করার নির্দেশ করেছেন। কিন্তু ইনতিকাল উপলক্ষে শোক পালন করতে বলেন নি। তাই আমরা আল্লাহর নির্দেশ মানি। ওরা কার নির্দেশ মানে?
দ্বিতীয় উত্তরঃ
নবী করিম (দঃ) নিজে সোমবারের রোযা রাখার কারণ হিসেবে তাঁর পবিত্র বেলাদাত ও প্রথম অহী নাযেলের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ বা ইনতিকাল উপলক্ষে শোক পালন করার কথা উল্লেখ করেন নি। যদি করতেন, তাহলে আমরা তা পালন করতাম। সুতরাং একই দিনে ও একই তারিখে নবী করিম (দঃ)-এর জন্ম এবং ইনতিকাল হলেও মৃত্যুদিবস পালন করা যাবে না। এটাই কোরআন-হাদীসের শিক্ষা।
তৃতীয় উত্তরঃ
নবীজী তো সশরীরে হায়াতুন্নবী। হায়াতুন্নবীর আবার মৃত্যুদিবস হয় কি করে? কেউ কি জীবিত পিতার মৃত্যু দিবস পালন করে? আসলে ওরা কোনটাই পালন করার পক্ষে নয়। শুধু ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) পালনকারীদেরকে ঘায়েল করার লক্ষ্যেই এইসব শয়তানী কুটতর্কের অবতারণা করে থাকে। ওরা শয়তানের প্রতিনিধি। আমরা কোরআন নাযিলের আনন্দ উৎসব করি শবে ক্বদরে এবং নবীজীর আগমনের আনন্দ উৎসব পালন করি ১২ই রবিউল আউয়ালে। ওরা কোনটাই পালন করার পক্ষপাতি নয়। আমরা সূরা ইউনুছের ৮৫নং আয়াতের নির্দেশ পালন করি।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১২) ঈদে মিলাদুন্নবী ও জন্মবার্ষিকী পালন | (০১৪) ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে জুলুছ বা মিছিল বের করা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |