১। হযরত আব্বাছ (রাঃ) নূর নবী (দঃ)-এর জন্ম প্রসঙ্গে ৯ম হিজরীতে একটি কবিতায় বলেছেন-
وانتَ لَمَّا وَلِدَتَ أَشْرَقَتِ الْأَرْضِ وَضانَت بِنُورِكَ الْأَفق
হে প্রিয় রাসুল, আপনি যখন ভূমিষ্ঠ হন, তখন পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল এবং আপনার নূরের ছটায় চতুর্দিক আলোকময় হয়ে গিয়েছিল
— নশরুত ত্বীব, মাওয়াহিব, বেদায়া ও নেহায়া
২। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হাস্সান বিন সাবিত (রাঃ) মিলাদুন্নবী (দঃ) বর্ণনা প্রসঙ্গে একখানি কবিতাগ্রন্থ লিখেছিলেন এবং হুযুর (দঃ)কে শুনিয়েছিলেন- পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয়েছিল ‘দিওয়ানে হাস্সান বিন সাবিত’। তিনি লিখেন-
إِنَّكَ وَلِدْتَ مُبَرًا مِّن كُلِّ عَيْبٍ كَانَك خَلِقْتَ كَمَا تَشَاء وضَمَّ الْإِلهُ إِسْمَهُ إِلَى إِسْمِهِ إِذَا قَالَ فِي الْخَمْسِ الْمُؤذَنَ إِشْهد وشق له مِنْ اسْمِهِ لِيُجلَّهُ فَذُو الْعَرْشِ مَحْمُودٌ وَمَنَا مُحَمَّدُ
হে প্রিয় রাসুল! আপনি সর্বপ্রকার ত্রুটিমুক্ত হয়েই মাসুম নবী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন। মনে হয়- যেনো আপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই আপনার বর্তমান সূরত পয়দা করা হয়েছে”। “মহান আল্লাহ আযানের মধ্যে আপন নামের সাথে নবীর নাম সংযোজন করেছেন- যখন মোয়াজ্জিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযানে ঊচ্চারণ করেন “আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু; আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ (দঃ)” । আর আল্লাহ আপন নামের অংশ দিয়ে তাঁর প্রিয় হাবীবের নাম রেখেছেন। আরশের অধিপতি হলেন ‘মাহমুদ’ এবং ইনি হলেন ‘মোহাম্মদ (দঃ)’ ।
মাহমুদ থেকে মোহাম্মদ নামের সৃষ্টি হয়েছে এবং আহাদ থেকে আহমদ নামের সৃষ্টি হয়েছে (আল হাদীস)। মাহমুদ থেকে মোহাম্মদ গঠনে একটি ওয়াও অক্ষর বাদ দিতে হয় এবং আহাদ থেকে আহমদ গঠনে একটি মিম (م) অক্ষর যোগ করতে হয়। যোগ বিয়োগের এই প্রক্রিয়াটি সুফী সাধকগণের নিকট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ মাহমুদ ও মোহাম্মদ এবং আহাদ ও আহমদ অতি ঘনিষ্ঠ। আল্লাহ নামটি চার অক্ষর বিশিষ্ট এবং মোহাম্মদ ও আহমদ নামটিও চার অক্ষর বিশিষ্ট। প্রধান ফিরিস্তা, প্রধান আসমানী কিতাব, প্রধান সাহাবী, প্রধান মযহাব ও প্রধান তরিকার সংখ্যা চার চার এবং এবং সৃষ্টির প্রধান উপাদানও চারটি- যথা- আব, আতিশ, খাক, বাদ (আগুন, পানি, মাটি, বায়ু)। কালেমা তাইয়্যেবায় তাওহীদের অংশ বার অক্ষর বিশিষ্ট এবং রিসালাতের অংশও বার অক্ষর বিশিষ্ট। নবী করিম (দঃ)-এর নামকরণ এবং কলেমাতে আল্লাহর সাথে মোহাম্মদ নাম সংযোজন- সবই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। সুতরাং এ পরিকল্পনার তাৎপর্য পূর্ণভাবে উপলব্ধি করাও মানুষের সাধ্যাতীত ব্যাপার।
এখানে উপরোল্লিখিত হযরত আব্বাস ও হযরত হাস্সান সাহাবীদ্বয়ের (রাঃ) কাব্য রচনার ঘটনাটি ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন ও স্মরণিকা প্রকাশের একটি উত্তম দলীল ও প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে সূরা ইউনুছ ৫৮ আয়াতে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদ ও পবিত্র আনন্দানুষ্ঠান পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। সূরা বাকারাতে মুছা (আঃ) ও বনী ইসরাইলগণের নীলনদ পার হওয়া এবং প্রতি বছর এ উপলক্ষে আশুরার রোযা ও ঈদ পালন করা এবং সূরা মায়েদায় ঈছা (আঃ) ও বনী ইস্রাইলের হাওয়ারীগণের জন্য আকাশ থেকে আল্লাহ কর্তৃক যিয়াফত হিসেবে মায়েদা অবতীর্ণ হওয়া উপলক্ষে প্রতি বছর ঐ দিনকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করার কথা কোরআনে উল্লেখ আছে।
বনী ইস্রাইলদের উপর আল্লাহর রহমত নাযিলের স্মরণে যদি প্রতি বছর ঐ দিনে ঈদ পালন করা হয়, তাহলে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত- রাহমাতুল্লীল আলামীন (দঃ)-এর আগমন দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) পালন করা যাবে না কেন? হুযুর করিম (দঃ) কে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ (দঃ)! প্রতি সোমবার আপনার রোযা রাখার কারণ কি? হুযুর (দঃ) বললেন-
এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনেই (সোমবার) ২৭ শে রমযান আমার উপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে ।
উক্ত প্রমাণাদিই ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) পালনের সপক্ষে জোরালো দলীল।
উল্লেখ্য, ঈদ মোট ৯টি যথাঃ
সবগুলোই কোরআনে, হাদীসে ও বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১১) হুযুর (দঃ) ভূমিষ্ঠ হলেন কীভাবে ? | (০১৩) ইন্তেকাল দিবস পালন করা হয় না কেন ? |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |