যে সমস্ত গুণাবলী ও নাম আল কুরআনে আল্লাহর জন্য উল্লেখিত হয়েছে, সেসব ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা বৈধ। তবে আল্লাহর সিফাত যেখানে يد এসেছে তার অনুবাদ জায়িয নয় । আল্লাহর অন্যান্য সিফাত যেমন وجه (চেহারা), قدم (পা) (এ ইত্যাদি কোন সাদৃশ্য ও তুলনা ব্যতিরেকে ভাষান্তরিত করে ব্যবহার করায় কোন মানা নেই। আল্লাহর নৈকট্য ও দূরত্ব কোন পরিমাপের মানদণ্ডে বিবেচনা করা যাবে না। ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী ও কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ্ থেকে দূরে। এ নিকটবর্তীতা ও দূরবর্তীতার কোন ধরন ও প্রকৃতি জানা নেই। যখন-আল কুরআনে বলা হয়ঃ
আল্লাহর রহমত নেক বান্দাদের নিকটবর্তী।
(৭ঃ ৫৬)
তখন বুঝতে হবে যে, সে বদকারদের থেকে দূরে। তাই যারা তাঁর অনুগত তারা তাঁর নিকটবর্তী আর যারা তাঁর অবাধ্য ও নাফরমান তারা তাঁর থেকে দূরে। মানুষ নিকট ও দূর বলতে সাধারণত : যা বুঝে, এক্ষেত্রে তা নয়। এসব অভিব্যক্তি বান্দার আকুতি ও ব্যাকুলতা প্রকাশের জন্য । যেমন আল-কুরআনে বলা হয়েছেঃ
সিজদা কর ও আমার নিকটবর্তী হও।
(৯৬ঃ ১৯)
অর্থাৎ আল্লাহকে সিজদা কর, তাঁর অনুগত হও, তাহলে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারবে। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে।
বিহিশতে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া, কিয়ামতে তাঁর কাছে অবস্থান, ঘাড়ের রগের চাইতেও বান্দার নিকটবর্তী হওয়া সবই সত্য, তবে কেমন হবে তা এবং কি ধরনের হবে তা জানা নেই। আল-কুরআনের ঘোষণাঃ
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু'টি উদ্যান।
(৫৫ঃ ৪৬)
তবে যে তার রবের সামনে দাঁড়াতে ভয় রাখে, নিবৃত্ত রাখে নিজেকে প্রবৃত্তি থেকে, জান্নাতই হবে আবাসস্থল তার।
(৭৯ঃ ৪০, ৪১)
আমিই সৃষ্টি করেছি মানুষ এবং আমি জানি কি কুমন্ত্রণা দেয় তার প্রবৃত্তি তাকে, আর আমি তার নিকটতর তার ঘাড়ের রগের চাইতে।
(৫০ঃ ১৬)
আল্লাহর নৈকট্য বান্দার প্রতি এবং বান্দার নৈকট্য আল্লাহর প্রতি এমন কথা, যার ধরন ও প্রকৃতি ধারণাতীত। তবে অধিকাংশের মতে বান্দার প্রতি আল্লাহর নৈকট্যের দ্বারা বান্দার আনুগত্যের কারণে তার প্রতি আল্লাহর রহমত বুঝায়। আবার তাঁর নাফরমানীর কারণে যখন তাঁর নিয়ামত ও তওফীক বান্দার থেকে তুলে নেয়া হয়, তখন তা দূরত্বের অর্থে ব্যবহৃত হয়। অনেকে আবার নৈকট্য ও দূরত্বকে এক্ষেত্রে যথাক্রমে মর্যাদা ও অপমানের অর্থে বুঝাতে চেয়েছেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(৪৬) ৪০. কবর, মুনকার ও নকীর, কবর আযাব ইত্যাদি | (৪৮) ৪২. আল-কুরআনের মর্যাদা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |