মানুষের দুনিয়ার জীবনের পর আখিরাতের জীবন। আখিরাতের জীবনের জন্য মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর পর আখিরাতের জীবন লাভের পূর্ব পর্যন্ত সময় কবরের জীবন। তা যে অবস্থায় হোকনা কেন। কবরের জীবনে সংকোচন মুনকার নাকীরের প্রশ্ন, সওয়াব ও আযাবের আস্বাদন ইত্যাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন আকীদার বিষয় । আল-কুরআনের ঘোষণা : কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং যারা কবরে রয়েছে নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের জীবিত করে উঠাবেন। (২২ঃ ৭) যখন কবর উন্মোচিত করা হবে, তখন প্রত্যেকে জানবে, সে কী অগ্রে পাঠিয়েছে আর কী পেছনে রেখে গেছে। (৮২ : ৪ ও ৫) তবে কি সে জানেনা যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে এবং অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে। (১০০ : ৯ ও ১০) এ ধরনের আয়াতে কবর সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।
কবরের অবস্থা সম্পর্কে আল-কুরআনের বর্ণনা ঃ যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার রব! আমাকে পৃথিবীতে পুনরায় প্রেরণ করুন, যাতে আমি করতে পারি ভাল কাজ যা আগে করিনি। কক্ষনো এরূপ হবার নয় । এতো তার মুখের উক্তি। তাদের জন্য রয়েছে বারযাখ, যেখানে তারা থাকবে পুনরায় জীবিত হয়ে উঠার দিন পর্যন্ত। (২৩ঃ ৯৯ ও ১০০) তাদের সকাল-সন্ধ্যায় উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে—ফিরআউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে। (৪০ : ৪৬) এখানে ফিরআউনকে ও তার লোকজনদের কিয়ামতের পূর্বেই সকাল-সন্ধ্যায় দোযখের আগুনের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এবং এ শাস্তি হবে রূহের ওপর। এ সম্পর্কে আল কুরআনের ঘোষণা গুরুতর শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদের লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব। (৩২ : ২১) এখানে আযাবে আকবর' দ্বারা দোযখের আযাব এবং ‘আযাবে আদনা’ দ্বারা কবরের আযাব বুঝান হয়েছে। কবরে মুনকার ও নাকীর প্রশ্ন করবে : তোমার রব কে ? তোমার দীন কি ? তোমার নবী কে ? তবে নবীদের, শহীদদের ও শিশুদের প্রশ্ন করা হবে না। ইমাম আ'যম (র)-কে কাফিরদের শিশুদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তারা বিহিশতে যাবে কিনা এবং তাদের মুনকার ও নাকীর প্রশ্ন করবে কি না। জবাবে তিনি নীরবতা অবলম্বন করেন। তারা বিহিশতে খাদেমের ভূমিকা পালন করবে এ কথা বলেন।
কবরে দেহে রূহ ফিরিয়ে আনা হবে। দেহ পরিপূর্ণ হতে পারে, আংশিক হতে পারে। একত্রিত হতে পারে অথবা নানাস্থানে বিক্ষিপ্ত হতে পারে। মু'মিনরা বলবে : আমাদের রব আল্লাহ্, আমাদের দীন ইসলাম এবং আমাদের নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা)। আর কাফিররা বলবে : হায়, হায়! জানি না। বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
কবরের সংকোচন সত্য - কামিল মু'মিনও এর থেকে পরিত্রাণ পাবে না। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : যদি কেউ কবরের সংকোচন থেকে রেহাই পেতো, তাহলে সা'দ ইবন মুয়ায পেতো, যার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল। তবে মু'মিনের ওপর কবরের সংকোচন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তা হবে দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে আসা সন্তানের সঙ্গে স্নেহময়ী মায়ের কোলাকুলীর মত। হযরত আয়েশা (রা)-কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন : শোন, কবরের সংকোচন মু'মিনের জন্য সন্তানের পায়ে মায়ের চুমোর মত এবং মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন চোখ উঠলে তাতে সুরমা লাগানোর মত। একবার রাসূলুল্লাহ্ (সা) হযরত উমর (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন : তোমার কাছে যখন কবরে মুনকার ও নাকীর আসবে তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে ? হযরত উমর (রা) জানতে চাইলেনঃ তখন কি আমার এখন যে অবস্থা ও এখন যে জ্ঞান আছে, তা থাকবে ? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন : হাঁ! হযরত উমর বললেন : তাহলে কোনরূপ ভয় করি না।