আসমানের অধিবাসী যেমন ফিরিশতা ও জান্নাতবাসী এবং দুনিয়ার অধিবাসী যেমন আম্বিয়া, আউলিয়া, নেককার মু'মিন ও বদকার মু'মিন, এদের ঈমানে মু'মিন হিসাবে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না। কর্মের কারণে মু'মিনের প্রতি প্রতিদানের প্রেক্ষিতে ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধির কথা আল-কুরআনে ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা আনফাল ৮, আয়াত ২-এ বলা হয়েছে : “মু’মিন তো তাঁরাই, যাদের হৃদয় কম্পিত হয় যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের কাছে পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে আর তাঁরা তাদের রবের ওপর ভরসা করে।” হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে ঈমান হ্রাস-বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন : “হাঁ, তা বৃদ্ধি পায়, যতক্ষণ না সে তার ধারককে বিহিশতে প্রবেশ করায়। এবং তা হ্রাস পায়, যতক্ষণ না তার ধারককে দোযখে প্রবেশ করায়।” এখানে ঈমানদারের আমলের কথা বলা হয়েছে। নেক আমলের কারণে ঈমানদার প্রথমেই বিহিশতে প্রবেশ করবে। আর বদ আমলের কারণে গুনাহগার ঈমানদার প্রথমে দোযখে ও পরে বিহিশতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহর স্মরণ ও তিলাওয়াতে কুরআন মু'মিনের ঈমানে দৃঢ়তা দান করে। আসল ঈমান অপরিবর্তিত থাকে। ইমাম আ'যম তাঁর ‘আল অসিয়াত' কিতাবে লিখেছেন যে, ঈমান বাড়েও না কমেও না, কেননা ঈমানের বৃদ্ধি কুফরী হ্রাসের সম্ভাবনা ছাড়া অকল্পনীয় । অনুরূপভাবে ঈমানের হ্রাস হওয়া কুফরী বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছাড়া কল্পনা করা যায় না। এক ব্যক্তি কিরূপে এক অবস্থায় একাধারে মু'মিন ও কাফির হতে পারে ? যে মু'মিন সে নিঃসন্দেহে মু'মিন এবং যে কাফির সে তো নিঃসন্দেহে কাফির। যেমন সূরা নিসা ৪, আয়াত ১৫১-তে বলা হয়েছে : তারা প্রকৃত অর্থে কাফির, আর আমি কাফিরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি লাঞ্ছনাদায়ক আযাব। সূরা ৮ আনফালের ৪ আয়াতে বলা হয়েছে : তারা তো প্রকৃত অর্থে মু'মিন, তাদের জন্য রয়েছে মর্যাদার আসন তাদের রবের কাছে, আরো রয়েছে অনুকম্পা ও সম্মানজনক জীবনোপকরণ ।
মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উম্মতরা সকলেই মু'মিন। তাঁরা কাফির নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত অভিমত হলো যে, গুনাহ ঈমানকে বিদূরিত করে না। একজন মু'মিন গুনাহ করতে পারে এবং গুনাহর কারণে তার ঈমান চলে যায় না। যদিও এ ব্যাপারে মু'তাযিলা ও খারিজিদের মত স্বতন্ত্র ।
আল্লাহর ইবাদত ও রাসূলের আনুগত্য ঈমানের ফসল। ফসলের ক্ষেত্রে কম বেশির সুযোগ রয়েছে। ঈমানের কারণে মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি মহব্বত পয়দা হয়। আমলের কারণে তা বৃদ্ধি পায় ও হ্রাস পায়। তাই হ্রাস-বৃদ্ধি আমলের সাথে সম্পৃক্ত, ঈমানের সঙ্গে নয় ৷
ইমাম রাযীর মতে, ঈমান হ্রাস-বৃদ্ধি কবুল করে না মূল বিশ্বাস হিসাবে, তবে একীনের দিক দিয়ে নয়। কেননা মু'মিনদের স্তর বিভিন্ন। আইনুল একীনের স্তর ইলমুল একীনের স্তরের ঊর্ধ্বে। এ জন্যই ইবরাহীম (আ) বলেছিলেন : হে আমার রব! আমাকে দেখাও কিরূপে তুমি মৃতকে জীবিত কর। আল্লাহ্ তাকে তার ঈমান সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন : তুমি কি ঈমান রাখ না ? তিনি উত্তরে বললেন : অবশ্যই আমি ঈমান রাখি, তবে আমার চিত্ত যাতে প্রশান্ত হয় তার জন্য দেখতে চাই। এতে হযরত ইবরাহীমের ঈমানে কোন হ্রাস-বৃদ্ধি হয়নি। হয়েছে তার অন্তরে প্রশান্তি । তাঁর ইলমুল একীন ছিল, তিনি চাইলেন আইনুল একীন, এদিক দিয়ে ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়। তবে মূল ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না। একজন সাহাবীর ঈমান ও রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ঈমান, একজন সাধারণ মু'মিন ও একজন সাহাবীর ঈমান সমান নয়। হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ সমস্ত মু'মিনের ঈমানের সঙ্গে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)-এর ঈমানের ওজন করলে তাঁর ঈমান নিশ্চিত প্রবল হবে। এ তাঁর একীনের দৃঢ়তার দরুণ। একীন ও বিশ্বাসের দৃঢ়তা ও দুর্বলতার নিরিখে ঈমানে হ্রাস-বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। একজন মু'মিনের প্রকৃত ঈমানের দিক দিয়ে এ সম্ভাবনা নেই ।