রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাঁর বংশতালিকা এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আবদুল মুত্তালিব ইবন হাশিম ইবন আবদ মান্নাফ ইবন কুসাই ইবন কিলাব ইবন মুররা ইবন কা'ব ইবন লুই ইবন গালিব ইবন ফাহর ইবন মালিক ইবন নযর ইবন কিনানা ইবন খুযাইমা ইবন মুদরিকা ইবন ইলুইয়াস ইবন মুযীর ইবন নাযার ইবন সা'দ ইবন আদনান। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী, তাঁর তাঁর বন্ধু, তাঁর বান্দা, তাঁর রাসূল, তাঁর মনোনীত পছন্দিদা ব্যক্তি। নুবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে বা পরে কখনো তিনি মূর্তিপূজা করেননি। আল্লাহর সঙ্গে এক মুহূর্তের জন্যও শরীক করেননি। যদিও মানুষ হিসেবে ছগীরা ত্রুটি-বিচ্যুতি নবীদের থেকে সংঘটিত হওয়া স্বাভাবিক, তবুও তিনি কখনো কোন ছগীরা বা কবীরা গুনাহ করেননি। সূরা তওবা ৯, আয়াত ৪৩-এ আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করেছেন। এখানে ৯ম হিজরীতে তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য মুনাফিকরা ওযর পেশ করলে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের অব্যাহতি দিলে আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াত নাযিল করেন। সেখানে আরো বলা হয়ঃ কেন আপনি ওদের ওযর কবূল করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি দিলেন অথচ আপনার কাছে স্পষ্ট হয়নি কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী। এ আয়াত রাসূলের শানে উত্তম পন্থা পরিহার করার কারণে সতর্ক করার জন্য নাযিল করা হয়। তিনি মুনাফিকদের ওযর কবুল না করে তাদের শাস্তি দিতে পারতেন। তা তিনি না করে তাদের ওযর কবুল করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি দিলেন। একাজ কোন পাপের কাজ নয় । তাই একথা বলা ঠিক নয় যে, আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলুল্লাহ্র পাপ ক্ষমা করেছেন। বরং দুটি বিকল্প ব্যবস্থার মধ্যে একটি গ্রহণ করায় যেটি উত্তম ব্যবস্থা সে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ ছিলেন ইনসানে কামিল। সূরা ইসরা ১৭ঃ আয়াত ১-এ আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর শানে ‘আবদ' শব্দ ব্যবহার করেছেনঃ
পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি রাতে ভ্রমণ করালেন তার বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায়।
তিনি ছিলেন নবী, তিনি ছিলেন রাসূল। নবী ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য—নবী বিশেষ অর্থে এবং রাসূল ব্যাপক অর্থে। নবী তাবলীগের জন্য আদিষ্ট হতে পারেন, নাও হতে পারেন। রাসূল তাবলীগের জন্য আদিষ্ট। তাই সকল রাসূলই নবী। কিন্তু সব নবী রাসূল নন। কারো কারো মতে নবী ও রাসূল সমার্থক । আবার কেউ বলেন, নবী ও রাসূল বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত। মোট কথা নবী ও রাসূল এর সকল গুণই মুহাম্মদ (সা)-এর মধ্যে ছিল। তাই তাঁকে আল-কুরআনে নবী ও রাসূল উভয় সম্বোধনেই ভূষিত করা হয়েছে। যেমন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ এবং খাতামুন্ননবীয়ীন ইত্যাদি ।
চল্লিশ বছর বয়সে মুহাম্মদ (সা) রিসালাত প্রাপ্ত হন। এর পূর্বে তিনি কোন নবীর উম্মত ছিলেন না। তিনি নুবুওয়াতের স্তরে সমাসীন ছিলেন। যা কিছু সত্য ও হক তিনি তা-ই করতেন। এ কারণে তাঁর চল্লিশ উত্তর কালকে নুবুওয়াতের কালে সীমাবদ্ধ না করে বরং চল্লিশপূর্ব জন্মদিন থেকেই তাঁকে অনেকে নুবুওয়াতের সিফাতে বিশেষিত করেন। আবূ হুরায়রা (রা) থেকে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, মি'রাজের সময় আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন : সৃষ্টির দিক দিয়ে আমি আপনাকে নবীদের প্রথম এবং দুনিয়ায় প্রেরণের দিক দিয়ে সর্বশেষ করেছি। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : যখন আদম আত্মা ও দেহের মধ্যবর্তী অবস্থায় ছিলেন তখন আমি নবী ছিলাম ।
তাঁর নুবুওয়াতের দলীল তিনি নিজেই। যারা নবুওয়াতের মিথ্যা দাবী করেছে তাঁদের চরিত্রই প্রমাণ করেছে যে, তারা মিথ্যাবাদী, তারা অজ্ঞ। তিনি ছিলেন নিস্কলুষ, নির্মল, পবিত্র ও অমলিন চরিত্রের অধিকারী। আল-কুরআন রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর রচিত নিজের কথা, এ ধারণা মক্কার মুশরিকদের ছিল। এর উত্তরে সূরা ইউনুস ১০, আয়াত ১৬-তে বলা হয়েছেঃ
আমি তো তোমাদের মাঝে এর পূর্বে দীর্ঘকাল কাটিয়েছি, তবুও কি তোমরা বুঝতে পার না ?
মুশরিকদের সামনে নিজের জীবনের বিগত দিনগুলো তাঁর চরিত্রের সনদ হিসাবে পেশ করলে, তারা কোন উত্তর দিতে পারে নি কেননা তাঁর জীবন ছিল পূত-পবিত্ৰ । তিনি ছিলেন তাদের পরম প্রিয় আল-আমীন, বিশ্বস্ত ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৯) ১৩. নবী-রাসূলরা ছোট-বড় পাপ থেকে পবিত্র | (২১) ১৫. নবীদের পর শ্রেষ্ঠ মানুষ খুলাফায়ে রাশেদূন |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |