আল্লাহ্ তা'আলা বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে তাঁর হিদায়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দু'লাখ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল প্রেরণ করেন। এদের প্রথম ছিলেন আদম (আ) এবং সর্বশেষ ছিলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা)। এরা সকলেই যাবতীয় ছোট-বড় গুনাহ থেকে পাক-পবিত্র ছিলেন। তাঁরা শিরক, কুফর ও অশ্লীল কাজ যেমন হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, সতী নারীর প্রতি অপবাদ, যাদু, পরনিন্দা, সূদ ও ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ, পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করা ইত্যাদি থেকে মুক্ত ও পবিত্র ছিলেন। ছগীরা ও কবীরা গুনাহের সংখ্যা সম্পর্কে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। ইবন আব্বাস (রা) বলেন যে, কবীরা গুনাহ সাত শতের মত। তবে তওবা ইস্তিগফার করলে কোন কবীরা গুনাহই কবীরা থাকে না। আবার কোন ছগীরা গুনাহ ছগীরা থাকে না যখন তা বারবার করা হয়। ইবন সীরীন (র)-এর মতে যেসব কাজ করতে আল্লাহ্ তা'আলা নিষেধ করেছেন তা সবই কবীরা। সূরা নিসা ৪, আয়াত ৩১-এ বর্ণিত হয়েছেঃ
তোমরা যদি বিরত থাক কবীরাহ গুনাহ থেকে, যা থেকে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তা হলে তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সমূহ বিদূরিত করা হবে তোমাদের দাখিল করব বিহিশতের সম্মানজনক স্থানে।
হাসান বসরী (র), সায়ীদ ইবন জুবাইর (রা), যোহাক (রা) ও অন্যান্যদের মতে, আল-কুরআনে যে পাপের বর্ণনার সাথে ভীতি ও শাস্তির কথা উল্লেখিত হয়েছে তা কবীরা। তাছাড়া ফরয ও ওয়াজিব পরিত্যাগ করা এবং হারাম কাজ করা কবীরা। ছগীরা ও কবীরা তুলনামূলক বিষয়। কারো জন্য একটি কাজ ছগীরা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, অথচ সে কাজটি অন্য একজনের জন্য কবীরা হতে পারে। যেমন বলা হয়-নেক লোকদের ভাল কাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভকারীদের জন্য ছোট গুনাহ । (حسنات الابرار سيات المقربين)
নবীদের পবিত্র ও পাপমুক্ত হওয়ার মানে এ নয় যে, তাঁরা মানবীয় স্বভাবজাত ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেও মুক্ত। নুবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে অথবা পরে তাঁদের থেকে ছোট খাট ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক। যেমন আদম (আ)-এর নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার ব্যাপার । এখানে তাঁর নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করার পেছনে হিকমতে ইলাহী কাজ করেছে। তাই তিনি এরূপ করেছিলেন।