আল-কুরআনের সূরা নিসাঃ ৪, আয়াতঃ ১৬৪ তে বর্ণিত হয়েছে যে—
অনেক রাসূল পাঠিয়েছি যাদের কথা বলেছি আপনাকে আগে এবং অনেক রাসূল যাদের কথা আপনাকে বলিনি। আর কথা বলেছিলেন আল্লাহ মূসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে। মূসা (আ) আল্লাহর কথা সরাসরি শুনেছিলেন। তবে পর্দার আড়ালে থেকে। এজন্যই তো তিনি বলেছিলেন : হে আমার রব! দেখা দাও আমাকে, আমি প্রত্যক্ষ করব তোমাকে।
আল্লাহ্ তো অনাদিকাল থেকেই কথা বলেন, কিন্তু মূসা (আ) তো তদ্রূপ নন। তাকে তো তখন সৃষ্টিও করা হয়নি। যেমন আল্লাহ্ তো শাশ্বত স্রষ্টা। অনাদিকাল থেকেই তিনি স্রষ্টা যখন পয়দা করা হয়নি সৃষ্টি। সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ্ স্রষ্টা। মাখলূকের সৃষ্টির ওপর স্রষ্টার নাম নির্ভরশীল নয়। যেমন 'মৃতকে জীবনদানকারী' নামের জন্য মৃতকে জীবিত করার প্রয়োজন হয় না। তেমনি ‘মাখলূকের স্রষ্টা' নামের জন্য সৃষ্টির দরকার হয় না। তার পূর্বেই 'স্রষ্টা' নাম প্রযোজ্য। কেননা তিনি সর্বশক্তিমান। সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। কোন কিছুই তাঁর মত নয়--না সত্তার দিক দিয়ে, না গুণের দিক দিয়ে । আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। কেউ আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে সত্তার দিক দিয়ে অথবা গুণের দিক দিয়ে তুলনা করলে বা সাদৃশ্য বানালে কাফির হয়ে যাবে। আর কেউ আল্লাহর সেসব সিফাত যা তিনি নিজের জন্য বর্ণনা করেছেন, অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে। যেহেতু আল্লাহ্ শাশ্বত ও অবিনশ্বর, আর সব কিছু নশ্বর ও অনিত্য। তাই কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য হতে পারে না, না গুণের দিক দিয়ে, না নামের দিক দিয়ে, আর না সত্তার দিক দিয়ে। শ্রবণ, দর্শন, জ্ঞান, শক্তি, কথন ইত্যাদি স্রষ্টা ও সৃষ্টির সিফাত, কিন্তু যখন এসব আল্লাহ্ সিফাত, তখন তা সৃষ্টির সিফাত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন তিনি জানেন। তাঁর জানা আমাদের জানার মত নয় । তিনি শক্তি রাখেন, তাঁর শক্তি আমাদের শক্তির মত নয়। তিনি দেখেন, তাঁর দেখা আমাদের দেখার মত নয়। তিনি শুনেন, তাঁর শুনা আমাদের শুনার মত নয় । তিনি বলেন, তাঁর বলা আমাদের বলার মত নয়। কোন কিছু সম্পর্কে আমরা উপকরণের মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করি। কিন্তু আল্লাহ্ তা জানেন কোন উপকরণ ছাড়াই। আমরা কোন কিছু করার শক্তি রাখি সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপায় উপকরণের সহায়তায়। কিন্তু তিনি সর্বশক্তিমান। তাঁর এসবের কিছুরই প্রয়োজন হয় না। আমরা বিভিন্ন আকৃতি ও রঙ দেখি, বিভিন্ন আওয়াজ ও বাক্য শুনি আমাদের দেহে সৃষ্ট শ্রবণেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা কোন উপকরণ ছাড়াই দেখেন ও শুনেন। আমরা যখন কথা বলি তখন জিহ্বা, ঠোঁট, দাঁত, বর্ণ, বাক্য, শব্দ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার জন্য এর কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই ।
আল কুরআন আল্লাহর কালাম । মানুষের কালাম নয়। আল্লাহর কালামকে মানুষের কথা মনে করলে কি শাস্তি তা সূরা মুদ্দাচ্ছির : ৭৪, আয়াত : ২৫-২৯ এ বর্ণিত হয়েছে। কুরায়েশ সরদার ওলীদ ইবন মুগীরা বলেছিলঃ এ কুরআন তো মানুষের কথা ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহ্ বললেনঃ আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাকার নামক জাহান্নামে, তুমি কি জান ‘সাকার' কি ? তা ওদের জীবিতও রাখবে না আর মেরেও ফেলবে না। তা ওদের গায়ের চামড়া জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিবে। সাকারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ১৯ জন প্রহরী। আমরা বিশ্বাস করি, আল-কুরআন মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহর কালাম, যার সাদৃশ্য মানুষের কালাম কখনো হতে পারে না ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১১) ৫. আল-কুরআন | (১৩) ৭. আল্লাহ্ বস্তু তবে সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় নন |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |