আল্লাহ্ তা'আলা এক । আল্লাহ্ তাঁর সত্তার দিক দিয়ে এক। একথা নয় যে, তিনি ছাড়া অন্য কোন এক আল্লাহ্ আছে। বরং তিনি এক এদিক দিয়ে যে, তাঁর কোন অংশীদার নেই--না সত্তার দিক দিয়ে, না সিফাতের দিক দিয়ে, না সাদৃশ্যের দিক দিয়ে। আল্লাহর পরিচয় আল-কুরআনে ১১২ নং সূরা ইখলাসে এভাবে দেয়া হয়েছে ;
তিনি আল্লাহ্, এক'। আল্লাহ্ মুখাপেক্ষী নন কারো, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। নেই তাঁর সমতুল্য কেউ ।
আল্লাহ্ তা'আলা সম্পর্কে মানুষের যে সব অলীক ও উদ্ভট ধ্যান-ধারণা আবহমানকাল ধরে চলে আসছে, এখানে তা অপনোদন করা হয়েছে। মক্কার কাফিররা মনে করতো যে, ফিরিশতারা আল্লাহর কন্যা ; ইয়াহুদীরা মনে করতো যে, উযায়ের (আ) আল্লাহ্ পুত্র ; নাছারারা মনে করতো যে, ঈসা (আ) আল্লাহ্ পুত্র ও তাঁর মা মারঈয়াম (আ) আল্লাহর সহধর্মিণী।
সৃষ্টির কোন কিছুর সাদৃশ্য তিনি নন, আর সৃষ্টির কোন বস্তু ও তাঁর সাদৃশ্য নয়। কোন কিছুই তাঁর মত নয় । আল্লাহ্ বে-নিয়াজ। তাঁর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি ‘ওয়াজিবুল অজুদ'--যার হওয়া জরুরী, এবং তিনি ছাড়া সবসৃষ্টি ‘মুমকিনুল অজুদ'-যার হওয়া না হওয়া সমান ।
তিনি অনাদি, তিনি অনন্ত : তিনি চিরবিদ্যমান তাঁর নামসমূহ ও গুণাবলী, নিয়ে। এসবের কতক সত্তাগত আর কতক গুণগত। যেমন জীবন, শক্তি, জ্ঞান, কথা, শ্রবণ, দর্শন, ইচ্ছা--এগুলো আল্লাহর যাতী, সিফাত বা সত্তাগত গুণ । আর সৃষ্টি করা, আহার্য দান করা, আরম্ভ করা, উদ্ভাবন করা, তৈরি করা ইত্যাদি তাঁর ক্রিয়াগত গুণ বা সিফাতে ফেলিয়া ।
এ দু'ধরনের সিফাত সম্পর্কে দার্শনিকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। আশ'আরীরা মনে করেন, যেসব সিফাত নঞর্থক করলে বিপরীত অর্থ দেয়, তা জাতী বা সত্তাগত । যেমন জীবন--হায়াত--এর বিপরীত মৃত্যু। শক্তি--কুদরত-এর বিপরীত দুর্বলতা। জ্ঞান ‘ইলম-এর বিপরীত অজ্ঞতা। আর যে সব সিফাতের নঞর্থক করলে বিপরীত অর্থ বুঝায়না, তা ক্রিয়াগত বা ফে'লী। যেমন সাহায্য দান করা, উদ্ভাবন করা ইত্যাদি। মু'তাযিলাদের মতে সে সব সিফাত ফে'লী--ক্রিয়াগত, যা হাঁ-সূচক ও না-সূচক হতে পারে, যেমন আল্লাহ্ অমুককে সন্তান দিয়েছেন, অমুককে দেননি ; অমুককে আহার্য দিয়েছেন অমুককে দেননি ইত্যাদি। আর যে সিফাতের ক্ষেত্রে ‘না’ ব্যবহৃত হতে পারে না, তা ‘জাতী’ বা সত্তাগত । যেমন জ্ঞান, ‘ইলম ও শক্তি-কুদরত। এরূপ বলা যায় না যে, আল্লাহ্ তা জানেন না অথবা ঐ জিনিসের শক্তি রাখেন না। ইমাম আবূ মানসূর আল-মাতুরিদীর মতে, যে সিফাতের বিপরীত সিফাত দিয়ে আল্লাহকে বিশেষিত করা যায় না, তা জাতী বা সত্ত্বাগত সিফাত। যেমন কুদরত, ইলম, ইজ্জত, আযমত ইত্যাদি। আর যেসব সিফাত ও তার বিপরীত অর্থ জ্ঞাপক সিফাত দিয়ে আল্লাহকে বিশেষিত করা যায়, তা ফে'লী বা ক্রিয়াগত । যেমন রাহমত, গযব, ইত্যাদি। ক্রিয়াগত সিফাতের প্রকাশ বস্তুর অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৮) ২. ঈমান | (১০) ৪. অনাদিকাল থেকে আল্লাহ্ তা'আলা সিফাতে জাতী ও সিফাতে ফে'লী দ্বারা বিশেষিত |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |