ইমাম আ'যম আবূ হানীফা (র)-এর সঙ্গে তওহীদ সম্পর্কে আলোচনার জন্য একদল দার্শনিক এলেন। তাঁরা বিশেষ করে তওহীদুর রাবুবিয়্যাত প্রতিষ্ঠার অনুকূলে জানতে চাইলেন। তিনি বললেন : সর্বাগ্রে আপনারা আমাকে ঐ কিস্তিটি সম্পর্কে বলুন যেটি দজলা নদীতে চলাচল করে ; খাদ্যদ্রব্য, আসবাবপত্র ও নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী বোঝাই করে ; যথাস্থানে খালাস করে ; ঘাটে-ঘাটে ভিড়ে ; নোঙ্গর করে ; আবার ফিরে আসে এবং এসবই আপন থেকে হচ্ছে, কেউ তদারকি করছে না । দার্শনিকরা বললেন : না, না, এ হতে পারে না। এতো অসম্ভব কথা। তখন ইমাম আ'যম বললেন : কিস্তির ব্যাপারে এরূপ কাজ অসম্ভব হলে মহাবিশ্বের ব্যাপারে তা হবে না কেন ? অর্থাৎ চালক ছাড়া যেমন কিস্তি চলতে পারে না, স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ্ ছাড়াও তেমনি এ মহাবিশ্ব পরিচালিত হতে পারে না।
সূরা ফাতিহাতে আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে রব এর কথা বলা হয়েছে। রবের পরিচয়ের উপর নির্ভর করে আল্লাহর পরিচয়। বান্দা যখন আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে তখন তাঁর ইবাদত করা বান্দার জন্য জরুরী হবে। মোদ্দাকথা তওহীদুল ‘উবুদিয়াতের জন্য তওহীদুর রবুবিয়্যাত জরুরী। আল-কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ দুধরনের তওহীদের বর্ণনায় পরিপূর্ণ। কখনো আল কুরআনে আল্লাহর যাত, সিফাত, নাম ও কর্ম সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তওহীদে ইলমী। কখনো বান্দাদের প্রতি তাঁর ইবাদতের দাওয়াত এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করার কথা বলা হয়েছে, এ হলো তওহীদ তলবী । আল কুরআনের যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ তওহীদের হক ও পরিপূর্ণতা বিধানের নিমিত্ত। আল কুরআনে আহলে তওহীদের মর্যাদা, দুনিয়াতে ও আখিরাতে তাঁদের প্রতি যে সম্মানজনক আচরণের কথা উল্লেখিত আছে তা, তওহীদের প্রতিদানের কথা। পক্ষান্তরে তওহীদ বিরোধী শিরককারীদের অবস্থা এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যেসব আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো তওহীদ বিরোধিতার প্রতিফলের বর্ণনা ।
সূরা ফাতিহার কথাই ধরা যাক। আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন-সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্, যিনি প্রভু সারা জাহানের। এ তো তওহীদের প্রথম ঘোষণা। আর রাহমান আর রাহীম এ-ও তওহীদের ঘোষণা। মালিক ইয়াওমিদ্দীন-তওহীদেরই ঘোষণা । ইয়্যাকা না'বুদু অ-ইয়্যাকা নাস্তাঈন-একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি, বান্দার তরফ থেকে বন্দেগীর তওহীদের ঘোষণা । শেষে হিদায়াতের প্রার্থনা, স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির আবেদন-নিবেদনের তওহীদের ঘোষণা । বান্দা আল্লাহর কাছে এবং শুধু আল্লাহ্ই কাছে হিদায়াত চাইছে সে পথের, যে পথে আহলে তওহীদরা চলে তাঁর নিয়ামত লাভ করেছে। কিন্তু সে পথ নয়, যে পথে তওহীদ বিরোধীরা বিভ্রান্ত ও অভিশপ্ত হয়েছে।
ইমাম আ'যম তাওহীদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এর মূল এবং কিভাবে ও কোন্ কোন্ বিষয় ঈমান রাখা জরুরী, তার বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহর সত্ত্বা ও বিদ্যমানতা সম্পর্কে বলেন নি। কারণ তা প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত। আসমান ও যমীনের স্রষ্টা কে, জানতে চাইলে কাফিররা উত্তর দিত ‘আল্লাহ'। তাছাড়া সৃষ্টির প্রকৃতিতেই আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ বিদ্যমান। তাই সমস্ত নবী, রাসূলরা আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর সঙ্গে শরীক না করার শিক্ষা মানুষদের দিয়ে গেছেন। পক্ষান্তরে তওহীদের বর্ণনার মধ্যেই সত্ত্বার অস্তিত্বের বর্ণনা বিদ্যমান ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৬) আল ফিকহুল আকবরের তরজমা | (০৮) ২. ঈমান |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |