মিলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে অত্র কিতাবে যেসব প্রামাণ্য দলীলাদী পেশ করা হয়েছে- তা নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে সংগৃহীত হয়েছে। হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র বেলাদতের বহু পূর্ব হতেই যিকরে বেলাদত চালু হয়েছে কিয়ামসহ- যার প্রমাণ দিয়েছেন মিলাদ কিয়াম অস্বীকারকারীদেরই শ্রদ্ধেয় আলেম ইবনে কাছির তার বিদায়া-নিহায়া গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন- হুযুর (দঃ) -এর জন্মের ৪ হাজার বৎসর পূর্বে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম খানায়ে কাবা নির্মাণ শেষ করে মিলাদ কিয়ামের মাধ্যমে তার উদ্বোধন করেছিলেন; এবং হযরত ঈছা আলাইহিস সালাম তাঁর হাওয়ারীদেরকে নিয়ে কিয়ামসহ যিকরে বেলাদত করেছিলেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের ৫৭০ বৎসর পূর্বে। হুযুর (দঃ)-এর উপস্থিতিতে হযরত আমের আনসারী (রাঃ) মিলাদ শরীফ পাঠ করেছিলেন এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বন্ধুবান্ধব নিয়ে মিলাদ শরীফ পড়েছিলেন হুযুরের জীবদ্দশায়। উক্ত মিলাদে খুশী হয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের জন্য আল্লাহর রহমত ও নিজের শাফাআতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। (আত্-তানভীর) খোলাফায়ে রাশেদীন মিলাদুন্নবী উদযাপন করার ৪টি ফযিলত বর্ণনা করেছেন। ইমাম শাফেয়ী, মারূফ কারাখী, ছিররি ছাত্রী, জুনায়েদ বাগদাদী, ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি প্রমুখ ইমাম, বুযর্গানেদ্বীন ও সলফে সালেহীন মিলাদুন্নবীর ফযিলত বর্ণনা করেছেন-যার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে মক্কা শরীফের ইমাম ও মুফতীয়ে আযম আল্লামা ইবনে হাজর হায়তামী (রহঃ) রচিত "আন নে'মাতুল কোব্রা” গ্রন্থে ৯৭৪ হিজরীতে। এভাবে প্রতি যুগেই মিলাদ কিয়ামের ফযিলতের উপর অসংখ্য কিতাব লিখা হয়েছে- যার বর্ণনা ও তালিকা দেয়া হয়েছে অত্র কিতাবের ৫৪ পৃষ্ঠায়। কিয়াম বিরোধীরা যেসব হাদীস উল্লেখ করে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে- তার ও সঠিক এবং দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে পরিশিষ্ট-১ এ।
বর্তমানে যেসব প্রতারকদল বলে বেড়াচ্ছে মক্কা মদিনায় কিয়াম নেই, বাংলাদেশী সুন্নীরা কোথায় পেলো মিলাদ কিয়াম? ইত্যাদি- তাদের এই অপপ্রচার বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ১২৮৮ হিজরীতে রচিত মক্কা, মদিনা, জিদ্দা ও হাদীদা-র সর্বমোট ৯০ জন মুফতীর স্বাক্ষরিত ফতোয়া পরিশিষ্ট-২ এ সংযোজন করা হলো ।
সারকথা হলো- মিলাদ ও কিয়ামের উপর সর্বকালের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ও মুফতী ওলামাগণের ইজমা বা ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ইজমার বিরুদ্ধে হাল যামানায় নজদী ওহাবী ও দেওবন্দী ওহাবীরা আপত্তি তুলছে। তাদের দেখাদেখি মউদূদী এবং তাবলীগীরাও আপত্তি করছে। ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে ইজমার খেলাফ তাদের এই ফতোয়াবাজী গ্রহণযোগ্য নয়। ইহাই ফতোয়ার মূলনীতি। যারা ইজমার খেলাফ কথা বলে- তাদেরকে বিদআতী, গোমরাহ্ ও বিপথগামী বলা হয়। এদের অনুসরণ করলে গোমরাহ্ হয়ে যাবে ।
পরিশেষে আরয করবো- আমরা যেন প্রতারকদের খপ্পরে না পড়ি। আমরা যেন নবী, ওলী, সলফে সালেহীন, আইম্মায়ে মোজতাহেদীন, পীর মাশায়েখ এবং মক্কা মদিনার অতিতের মুফতিয়ানে কেরামের পথে ও মতে চলতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত নসীব করুন এবং নবীজীর মুহাব্বত দান করুন। আমীন!
যিলকদ ১৪২৫ হিজরী জানুয়ারী, ২০০৫ইং
পৌষ, ১৪১১ বাংলা
খাকছার
(অধ্যক্ষ মাওলানা) হাফেয মুহাম্মদ আবদুল জলিল (এমএ.বিসিএস)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(২৩) মিলাদ ও কিয়াম সম্পর্কে মক্কা-মদিনার প্রাচীন ৪টি ফতোয়া | (২৫) মিলাদ ও কিয়াম পাঠ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |