আল্লামা আবদুর রহীম তুর্কমানী (রহঃ) ১২৮৮ হিজরী সনে মক্কা ও মদিনা এবং জিদ্দা ও হাদীদার উলামায়ে কেরামের দ্বারা মিলাদও কিয়াম সম্পর্কে একটি ফতোয়া লিখিয়ে হিন্দুস্তানে নিয়ে আসেন এবং নিজ গ্রন্থ “রওযাতুন নাঈম”-এর শেষাংশে ছেপে প্রকাশ করেন। [আওয়ারে ছাতেয়া দেখুন] উক্ত ফতোয়া নিম্নরূপঃ
[আরবী]
প্রশ্নঃ আল্লাহ তায়ালার অসীম রহমত আপনাদের উপর বর্ষিত হোক। নিম্ন বর্ণিত বিষয়ে আপনাদের অভিমত ও ফতোয়া কী?
“মিলাদ শরীফ পাঠ করা- বিশেষ করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জন্ম বৃত্তান্ত পাঠকালে কিয়াম করে সম্মান প্রদর্শন করা, মিলাদের জন্য দিন তারিখ নির্দিষ্ট করা, মিলাদ মজলিসকে সাজানো, আতর গোলাব ও খুশ্ব ব্যবহার করা, কুরআন শরীফ হতে সূরা কেরাত পাঠ করা এবং মুসলমানদের জন্য খানাপিনা (তাবাররুক) তৈরী করা- এইভাবে অনুষ্ঠান করা জায়েয কিনা এবং অনুষ্ঠানকারীগণ এতে সাওয়াবের অধিকারী হবেন কিনা? বর্ণনা করে আল্লাহর পক্ষ হতে পুরস্কৃত হোন” ।
আবদুর রহীম তুর্কমানী-হিন্দুস্তান, ১২৮৮ হিজরী
[আরবী]
অনুবাদঃ “জেনে নিন- উপরে বর্ণিত নিয়মে (কিয়ামসহ) মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করা মোস্তাহসান ও মোস্তাহাব। আল্লাহ ও সমস্ত মুসলমানদের নিকট ইহা উত্তম। ইহার অস্বীকারকারীগণ বিদ্আতপন্থী ও গোমরাহ্ । হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হুযুর (দঃ)-এর হাদীসে আছে-
“মুসলমানগণ যে কাজকে পছন্দনীয় বলে বিবেচনা করেন- তা আল্লাহর নিকটও পছন্দনীয় I
(মুসলিম শরীফ)এখানে মুসলমান বলতে ঐ সমস্ত মুসলমানকে বুঝায়- যারা কামেল মুসলমান। যেমন- আরব, সিরিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া ও স্পেন ইত্যাদি দেশের উলামাগণ সলফে সালেহীনদের যুগ থেকে অদ্যাবধি (১২৮৮ হিঃ) সকলেই মিলাদও কিয়ামকে মোস্তাহ্সান, উত্তম ও পছন্দনীয় বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। সর্বযুগের উলামাগণের স্বীকৃতির কারণে মিলাদও কিয়ামের বিষয়টি “ইজমায়ে উম্মত” হিসাবে গণ্য হয়েছে। ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে কোন বিষয় বরহক । উহা গোমরাহী হতে পারে না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “আমার উম্মত গোমরাহ্ বিষয়ে একমত হতে পারে না”। [আল-হাদীস ] সুতরাং, যারা মিলাদ ও কিয়ামকে অস্বীকার করবে-শরিয়তের বিচারকের উপর তাদেরকে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব” ।
[ফতুয়া সমাপ্ত]
[আরবী]
অনুবাদঃ “জেনে রাখুন- মিলাদ মাহফিলে যা কিছু করা হয়- যেমন যিয়াফত দেয়া, মুসলমানদের উপস্থিতিতে হুযুরের জন্ম বৃত্তান্ত পেশ করা, উত্তম জিনিস দান করা, রাসুল আল-আমীনের (দঃ) বেলাদাত শরীফ বর্ণনাকালে কিয়াম করা, গোলাব ছিটানো, সুগন্ধি জ্বালানো, মজলিস সাজানো, কুরআন মজিদ থেকে পাঠ করা, নবীজীর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করা, আনন্দ ও খুশীর বহিঃপ্রকাশ করা- ইত্যাদি নিঃসন্দেহে সুন্নাতে হাসানাহ্র অন্তর্ভুক্ত এবং মোস্তাহাব। ইহার উত্তম ফযিলত রয়েছে। একমাত্র বিদ্আতপন্থী গোমরাহ লোক ছাড়া অন্য কেউ ইহা অস্বীকার করতে পারে না। তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করবেনা। তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালকের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ-ই সর্বজ্ঞানের আঁধার। আল্লাহপাক আমাদের মনিব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর এবং তাঁর বংশধর ও সাহাবীগণের উপর অজস্র রহমত বর্ষণ করুন”।
[ফতোয়া সমাপ্ত]
[আরবী]
অনুবাদঃ "জেনে রাখুন- প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে (কিয়ামসহ) মিলাদুন্নবী মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠান শরিয়ত অনুযায়ী বিদআতে হাসানা- অর্থাৎ মোস্তাহাব। যার অন্তরে মোনাফিকির অংশ আছে- সে ছাড়া অন্য কেউই মিলাদ শরীফকে অস্বীকার করতে পারেনা। আর অস্বীকার করাই বা কিভাবে তার পক্ষে সম্ভব- যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআন পাকে ইরশাদ করেছেন- “যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের সম্মান প্রদর্শন করবে তাদের অন্তরে তাকওয়া পয়দা হবে”। আল্লাহ-ই সর্বজ্ঞানের আঁধার।” (মিলাদ শরীফ আল্লাহ্ নিদর্শন স্বরূপ)।
[ফতোয়া সমাপ্ত ]
[আরবী]
অনুবাদঃ “প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে (কিয়ামসহ) মিলাদ শরীফ পাঠ করা শুধু জায়েযই নয়- বরং মোস্তাহাবও বটে। মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠানকারী ব্যক্তিগণ অবশ্যই সাওয়াবের অধিকারী হবেন। উলামায়ে কেরাম মিলাদ শরীফের বৈধতার উপর বহু কিতাব রচনা করেছেন এবং (কিয়ামসহ) মিলাদ শরীফের আমল করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন- একমাত্র বিপথগামী বেদআতী লোক ছাড়া অন্য কেউই মিলাদ শরীফকে অস্বীকার করতে পারেনা। শরিয়তের শাসকের উপর অস্বীকারকারীকে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা ওয়াজিব।"
[ফতোয়া সমাপ্ত ]
[১২৮৮ হিজরী]
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(২২) সংশয় নিরসন | (২৪) সারসংক্ষেপ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |