কিয়াম অর্থ সোজা হয়ে দাঁড়ানো। কিয়াম কয়েক প্রকার। যথা (১) কিয়ামে মুবাহ্ (২) কিয়ামে ফরয (৩) কিয়ামে সুন্নাত (৪) কিয়ামে মোস্তাহাব (৫) কিয়ামে মাকরূহ (৬) কিয়ামে হারাম । প্রত্যেক প্রকারের কিয়াম চেনার নীতিমালা নিম্নরূপঃ
দুনিয়াবী প্রয়োজনে কিয়াম করা (দাঁড়ানো) মুবাহ্ বা জায়েয । যেমন দাঁড়িয়ে কাজ করা । আল্লাহপাক বলেন-
[আরবী]
অর্থাৎ- “যখন তোমরা নামায থেকে অবসর হবে- তখন জমীনে রিযিকের তালাশে ছড়িয়ে পড়ো”।
এখানে জমিনে ছড়িয়ে পড়ার জন্য দাঁড়ানো শর্ত। দাঁড়ানো ছাড়া ছড়িয়ে পড়া সম্ভবই নয় । তাই এই দাঁড়ানোর নির্দেশটি হলো মুবাহ ।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায এবং ওয়াজিব নামাযে কিয়াম করা ফরয। এই কিয়ামটি হচ্ছে আল্লাহর সম্মানে । আল্লাহ তায়ালা বলেন-
[আরবী]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ও তাঁর সম্মানে বিনয় সহকারে দাঁড়িয়ে যাও” ।
দাঁড়ানোর সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কেউ ফরয ও ওয়াজিব নামাযে না দাঁড়িয়ে বসে বসে নামায পড়লে নামায হবে না। সুতরাং এই কিয়াম নামাযের মধ্যে ফরয ।
কয়েকটি বিষয়ে কিয়াম করা সুন্নাত। যেমনঃ
[আরবী]
অর্থাৎঃ “যিয়ারতকারী রওযা পাকের সামনে মুখ করে এভাবে দাঁড়াবে যেভাবে সে নামাযে দাঁড়ায়। আর হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্বাকে এভাবে ধ্যান করবে যে, তিনি আপন রওযা পাকে শুয়ে আরাম করছেন, যিয়ারত কারীকে চিনছেন এবং তার কথা শুনছেন” ।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১ম খন্ড কিতাবুল হজ্বঃ যিয়ারতের আদব অধ্যায়)
[আরবী]
অর্থাৎঃ যিয়ারতকারী জুতা খুলে ক্বিবলার দিকে পিঠ দিয়ে মৃত ব্যক্তির চেহারার দিকে মুখ করে দাঁড়াবে”। এই কিয়ামটিও সুন্নাত।
(ফতোয়া আলমগীরী কিতাবুয যিয়ারত)
এতে প্রমানিত হলো যে, নবীজীর রওযা মোবারক, যমযম ও ওযুর পানি, মুমিনদের কবর ইত্যাদি- সম্মানীত স্থান ও বস্তু। তাই এগুলোর সম্মান কিয়ামের মাধ্যমে সম্পাদন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
অনুরূপভাবে তিনি যতক্ষণ দাঁড়ানো থাকবেন, ততক্ষণ-সকলেরই দাঁড়িয়ে থাকা সুন্নাত। বসে থাকা বেআদবী ও খেলাফে সুন্নাত। যেমনঃ বুখারী শরীফ কিতাবুল জিহাদ বাবুল আসরা ও বাবুল কিয়াম অধ্যায় পৃষ্ঠা-৪০৩ উল্লেখ রয়েছেঃ
হযরত সাআদ ইবনে মাআয রাদিয়াল্লাহু আনহুর আগমনে মদিনার আনসারগণকে তাঁর সম্মানে দাঁড়ানোর জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমবেত সকল আনসারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেননা, হযরত সাআদ (রাঃ) ছিলেন তাঁদের নেতৃস্থানীয় সর্দার ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। এই কিয়ামটি ছিল তা'জীমী কিয়াম বা সম্মানের কিয়াম। এই কিয়াম সুন্নাত । হাদীস দ্বারাই এই সুন্নাত কিয়াম প্রমাণিত ।
ছয় প্রকার কিয়ামের মধ্যে ৪র্থ হলো মোস্তাহাব কিয়াম । নফল নামাযে দাঁড়ানো মোস্তাহাব। বসে পড়লেও জায়েয- কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়লে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। যেমন হাদীসে এসেছে
[আরবী]
অর্থাৎ – “বসে নামায আদায়কারীর সওয়াব দন্ডায়মান অবস্থায় নামায আদাকারীর অর্ধেক” ।
তবে বিতরের পরের দুরাকাত হালকি নফল বসে পড়ায় পূর্ণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। এতে নবীজীর অনুকরণ করা হয়ে থাকে। আগমনকারীর সম্মানে দাঁড়ানোও মোস্তাহাব (দুররে মোখতার)। কোন প্রিয়জনের আলোচনা শুনে অথবা কোন শুভ সংবাদ শুনে দাঁড়ানোও মোস্তাহাব এবং সাহাবায়ে কেরাম ও সলফে সালেহীনদের আমল। মিশকাত কিতাবুল ঈমান তৃতীয় অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে-
হযরত উসমান (রাঃ) বলেন-
"হযরত সিদ্দীকে আকবর (রাঃ) আমাকে কোন একটি শুভ সংবাদ শুনালেন। আমি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম- আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হোক- বরং আপনিই উক্ত শুভ সংবাদের প্রকৃত উপযুক্ত ব্যক্তি”।
(মিশকাত কিতাবুল ঈমান)
হুজুর (দঃ)-এর আগমনের সু-সংবাদ শুনে কিয়াম করা মোস্তাহাব।
কয়েক অবস্থায় কিয়াম বা দাঁড়ানো মাকরূহ। যেমন- যমযম পানি ও অজুর অবশিষ্ট পানি ব্যতিত অন্যান্য পানীয় পান করার সময় দাঁড়ানো মাকরূহ। কোন ওযর থাকলে অন্য কথা। অনুরূপভাবে কোন বিত্তশালীর জন্য লোভের বশবর্তী হয়ে দাঁড়ানো বা দুনিয়াদার লোকের সম্মানে দাঁড়ানো মাকরূহ ।
কারো সম্মানে মূর্তিবৎ দাঁড়িয়ে থাকা হারাম। নতজানু হয়ে কারো সম্মান করা হারাম । এরূপ সম্মান গ্রহণকারীর সম্মান করাও হারাম । (শামী-আলমগীরী কাফেরদের সম্মানে দাঁড়ানো হারাম। মুয়াবিয়া ও আবু ওমামার বর্ণিত ২ ও ৩ নং হাদীস মোতাবেক মূর্তিবৎ ও অহংকারী লোকদের জন্য দাঁড়ানো সম্পর্কে দেখুন ।
উপরোক্ত ছয় প্রকার কিয়ামের মধ্যে ৪র্থ প্রকারের কিয়াম- অর্থাৎ মিলাদ শরীফের কিয়াম মোস্তাহাব ও মুস্তাহসান। মিলাদ শরীফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বেলাদত বর্ণনা কালে ঐ সময় কিয়াম করা মোস্তাহাব ও মোস্তাহসান।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৬) মিলাদের মধ্যে কিয়াম | (১৮) হাদীস দ্বারা কিয়াম করা সুন্নাত প্রমাণিত |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |