চার খলিফাসহ দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীকে একত্রে আশারায়ে মুবাশশারা বলা হয়। নবী পাক স. এই দশজনকে জান্নাতী হওয়ায় সুসংবাদ দিয়েছেন। এঁরা হচ্ছেন ১. হজরত আবু বকর ২. হজরত ওমর ৩. হজরত ওসমান ৪. হজরত আলী ৫. হজরত তালহা ৬. হজরত যোবায়ের ৭. হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ ৮. হজরত সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ৯. হজরত সাঈদ ইবনে জায়েদ ১০. হজরত আবু উবায়দাহ্ ইবনে জাররাহ্ ( রদ্বিআল্লাহু আনহুম)।
এঁদের বেহেশতী হওয়া নিশ্চিত। কিন্তু এ কথার অর্থ এরকম নয় যে, অন্য কারো বেহেশতে প্রবেশ নিশ্চিত নয়। কারণ, এঁরা ছাড়া আরো অনেককে রসুল স. বেহেশতী হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন।
হজরত ফাতেমা, হজরত হাসান, হজরত হোসাইন, হজরত খাদিজা, হজরত আয়েশা, হজরত হামযা, হজরত আব্বাস, হজরত সালমান ফারসি, হজরত সুহাইব, হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রদ্বিআল্লাহু আনহুম)- এঁরাও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ।
শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী র. বলেন
‘প্রকৃত ব্যাপার এই যে, চার খলিফা, ইমাম হাসান, ইমাম হোসাইন ও অন্যান্য বুজর্গানে দ্বীনের সুসংবাদপ্রাপ্তি খুবই বিখ্যাত । কিন্তু দশজনের ব্যাপারটি অধিক খ্যাতি লাভ করেছে ।
বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণকে আহলে বদর বলা হয়। তাঁদের সংখ্যা ছিলো তিন শত তেরো জন। ওই যুদ্ধে পাঁচ হাজার ফেরেশতা সাহাবীগণের সহযোদ্ধা ছিলেন । আহলে বদরের শানে হাদিস শরীফে বলা হয়েছে :
‘আল্লাহ্ বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণ সম্পর্কে বলেন, তোমরা যেরকম খুশী আমল করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য জান্নাত অপরিহার্য করে দিলাম'।
হাদিস শরীফে এসেছে, যে সকল ফেরেশতা বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের ফযীলত অন্যান্য ফেরেশতাদের চেয়ে বেশী।
বদরযোদ্ধাদের পরেই উহুদযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণের মর্যাদা। এই যুদ্ধ ছিলো কঠিন পরীক্ষা এবং চরম বিপদকণ্টকিত যুদ্ধ । রসুলে আকরম স. এর পবিত্র দাঁত এই যুদ্ধে ভেঙে গিয়েছিলো। তিনি আহত হয়েছিলেন। শহীদগণের নেতা হজরত হামযা রা. এই যুদ্ধেই শাহাদতের পেয়ালা পান করেছিলেন। এ ছাড়া আরো সত্তর জন সাহাবী এই যুদ্ধে শহীদ হন।
আহলে বায়াতে রিদওয়ানের ফযীলতও অত্যন্ত বেশী। বায়াতে রিদওয়ান ওই বরকতে ভরপুর বায়াত, যা সাহাবায়ে কেরাম হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রসুল আকরম স. এর পবিত্র হাতে করেছিলেন। কোরআন মজীদে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে
‘মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়াত গ্রহণ করলো, তখন আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন...'।
সূরা ফাতহ, ১৮ আয়াত
হাদিস শরীফে এসেছে ‘যারা আমার হাতে রিদওয়ান বৃক্ষের নিচে বায়াত করেছে, আগুনে প্রবেশ তাদের জন্য নিষিদ্ধ । তারা সকলেই বেহেশতী' ।
উল্লিখিত সাহাবায়ে কেরাম ছাড়াও আরো অনেক সাহাবীর মর্যাদা ও ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদিস রয়েছে। কিন্তু সকলের পূর্ণ নাম তালিকা পাওয়া যায় না। সাধারণভাবে একথা জানতে হবে যে, সকল সাহাবীই ছিলেন আল্লাহ্তায়ালার সন্তে ষিভাজন, যেমন কোরআন মজীদ ঘোষণা করেছে ‘রদ্বিআল্লাহু আনহুম ওয়া র′′ আন’হু' (তারা আল্লাহ্ প্রতি এবং আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট)। আর আল্লাহর সন্তোষভাজন যাঁরা, তাঁরাতো অবশ্যই বেহেশতী ।
কোনো কোনো আলেম সাহাবীগণের সন্তান-সন্তুতিকেও তাঁদের বাপ দাদার ফযীলতের কারণে বেশী মর্যাদা দেওয়ার পক্ষপাতি । কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, হজরত ফাতেমা রা. এর বংশধরেরাই বেশী ফযীলত রাখেন। হজরত ফাতেমা রা. বেহেশতী নারীগণের নেত্রী হবেন এবং ইমাম হাসান রা. এবং ইমাম হোসাইন রা. হবেন বেহেশতী যুবকদের নেতা ।
হাদিস শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে
‘আমার আহলে বায়াত নবী নূহের কিশতীতুল্য। যে ব্যক্তি এই কিশতীতে আরোহণ করে, সে নিরাপদ'।
আরো উল্লেখিত হয়েছে
‘আহলে বায়াতের মহব্বত ইমানের অঙ্গ'। খাতেমা বিল খায়েরের (ইমানের সঙ্গে মৃত্যুর) জন্য বনী ফাতেমার মহব্বত খুবই ফলদায়ক।
বুজর্গানে দ্বীনের একটি বিখ্যাত দোয়া এই যে-
এলাহী বাহকে বনী ফাতেমা
কেহ্ বর কওলে ইমা কুনি খাতেমা ।
রসুলে আকরম স. এর পবিত্র সহধর্মিণীগণও বহুবিচিত্র ফযীলত ও মর্যাদার অধিকারিণী। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী মর্যাদার অধিকারিণী হচ্ছেন হজরত খাদিজা রা. এবং হজরত আয়েশা রা.। আমাদের অন্যান্য জননীগণও অনেক ফযীলত রাখেন। এঁদেরকে একত্রে আযওয়াজে মোতাহ্হারাহ্ বলা হয়। এঁদের পবিত্র নামের তালিকা এরকম— ১. হজরত খাদিজা ২. হজরত সাওদা ৩. হজরত আয়েশা ৪. হজরত হাফসা ৫. হজরত জয়নাব বিনতে খুযায়মা ৬. হজরত উম্মে সালমা ৭. হজরত জয়নাব বিনতে জাহাশ ৮. হজরত জুওয়াইরিযা ৯. হজরত উম্মে হাবীবা ১০. হজরত সাফীয়া ১১. হজরত মায়মুনা (রদ্বিআল্লাহু আনহুমা) ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(২৮) খোলাফায়ে রাশেদীনের শ্রেষ্ঠত্ব | (৩০) সাহাবীগণের মর্যাদা : দুই |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |