আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আদর্শ এই যে, রসুলে আকরম স. এর সাহাবীগণকে সব সময় প্রশংসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। তাঁদেরকে মন্দ বলা, তাঁদের শানে বেআদবী করা, তাঁদেরকে হিংসা করা, অস্বীকার করা- লানতপ্রাপ্ত বা অভিশপ্ত হওয়ার আলামত। কেননা, তাঁরা হজরত নবীয়ে করিম স. এর পবিত্র সংসর্গের কারণে অক্ষয় পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতার অধিকারী হয়েছেন।
সাহাবীগণের মধ্যে যে যুদ্ধবিগ্রহ সংঘটিত হয়েছিলো তা ছিলো ইজতেহাদী ইজতেহাদী ভুলের কারণে । স্বার্থসুবিধা অথবা প্রবৃত্তিপরায়ণতার কারণে নয় ।
হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি র. বলেছেন ‘সাহাবীগণের মধ্যে যে কলহ- বিবাদ ঘটেছিলো, তার উৎকৃষ্ট অর্থ গ্রহণ করতে হবে। ওই সকল ঘটনাকে নফসের আকাঙ্খা বা স্বার্থপরতা, দুরভিসন্ধি ইত্যাদি থেকে দূরবর্তী বলে ধারণা করা প্রয়োজন । ইমাম তাফতাজানী র. হজরত আলী রা.কে অতিরিক্ত মহব্বত করা সত্ত্বেও বলেছেন, তাঁদের মধ্যে যে বাদবিসম্বাদ, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি সংঘটিত হয়েছিলো, তা খেলাফতের অধিকারত্বের কারণে নয়। তা ছিলো বুঝবার ভুলের কারণে। তিনি টিকাভাষ্যে আরো লিখেছেন, নিশ্চয়ই হজরত মুয়াবিয়া রা. এবং তাঁর দল হজরত আলী রা.কে সেই জামানার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং ইমাম মেনে নেওয়া সত্ত্বেও একটি সন্দেহের কারণে হজরত আলী রা. এর প্রতি বিদ্রোহী হয়েছিলেন— তা হচ্ছে, হজরত ওসমান রা. এর হত্যাকারীদের প্রতিশোধ গ্রহণ না করা। ‘কোররা কামাল' পুস্তকের টিকায় হজরত আলী রা. এর বক্তব্য এরকম লিপিবদ্ধ আছে যে, তিনি বলেছেন ‘তাঁরা আমাদের ভ্রাতা, আমাদের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। তাঁরা কাফেরও নন। ফাসেকও নন। কারণ তাঁরা একটি ভাবার্থের উপরে মনস্থির করে আছেন'।
ইজতেহাদে বুঝবার ভুল নিন্দা-অপবাদের বিষয় নয়। নবীয়ে করিম স. এর সংসর্গের সম্মান রক্ষার্থে সকল সাহাবীর সম্মান রক্ষা করা উচিত। তাঁদেরকে ভালোভাবে স্মরণ করা আবশ্যক এবং রসুলে আকরম স. এর ভালোবাসা হেতু তাঁদেরকেও ভালোবাসা প্রয়োজন। রসুল স. এরশাদ করেছেন ‘যে তাদেরকে ভালোবাসবে, সে আমার ভালোবাসার কারণেই ভালোবাসবে এবং যে তাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে, সে আমার প্রতি শত্রুতার কারণেই শত্রুতা করবে'- এর অর্থ এই যে, যে ভালোবাসা আমার সঙ্গে সম্বন্ধিত, সেই ভালোবাসা আমার সাহাবীর সঙ্গেও সম্বন্ধিত। আর আমার সঙ্গে যে শত্রুতা সম্পর্কিত, তা-ই সম্পর্কিত আমার সাহাবীগণের সঙ্গে ।
হজরত আলী রা. এর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারীদের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্ধুত্ব নেই। বরং তাঁদের প্রতি মনক্ষুণ্ণ থাকাই উচিত। কিন্তু তাঁরা যেহেতু আমাদের পয়গম্বর স. এর সহচর এবং তাঁদের প্রতি মহব্বত পোষণ করা এবং হিংসা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা নির্দেশপ্রাপ্ত, তাই আমরা সকল সাহাবীকেই ভালোবাসি এবং তাঁদের প্রতি দ্বেষ, শত্রুতা থেকে বিরত থাকি। যেহেতু, এইরূপ শত্রুতা প্রকারান্তরে নবীয়ে করিম স. পর্যন্ত উপনীত হয়। যাঁরা সত্যের উপরে ছিলেন তাঁদেরকে সত্য বলি। আর যাঁরা ভুলের উপরে ছিলেন, তাঁদেরকে বলি ভুল। হজরত আলী রা. ছিলেন সত্যের উপরে। আর তাঁর বিরোধীপক্ষ ছিলেন ভুলের উপরে । এর চেয়ে অতিরিক্ত বলা বাচালতা মাত্র' ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(২৯) সাহাবীগণের মর্যাদাঃ এক | (৩১) আমলঃ নামাজ প্রসঙ্গ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |