দেখতে দেখতে আরো একটা বছর শেষ হলো। পুনরায় হজ্জের সময় সমাগত হলো। এবার মদীনা থেকে এক বিরাট কাফেলা হজ্জ করার জন্য মক্কায় আসে। যার মধ্যে ৭৩ জন মুসলিম পুরুষ ও দু’জন মহিলা ছিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনায় নেওয়ার জন্য মক্কায় আসেন।
যদিও তিনি তখনও ইসলাম কবুল করেননি, তবুও আবু তালিবের মৃত্যুর পর হযরত আব্বাসই ছিলেন নবী করীম (স.)-এর সর্বদা সাহায্যকারী। এজন্যই তিনি (স.) ১২ই জিলহজ্জ, নবূওতের ত্রয়োদশ বছরে তাকে সাথে নিয়ে গোপনে ‘আকাবায় উপস্থিত হন। ‘আকাবা উপত্যকায় উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হলে, মদীনাবাসীরা হযরত (স.)-কে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করলে, হযরত আব্বাস (রা.) বলেন :
“হে আওস ও খযরজগণ! আপনারা মুহাম্মদ (স.)-কে মদীনায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন, কিন্তু এটা সহজ ব্যাপার নয়। আপনারা ভেবে দেখুন, তাঁকে নিয়ে গেলে আপনাদের অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। মক্কাবাসীরা আপনাদের উপর ক্ষেপে যাবে এবং তারা আপনাদের বিরুদ্দে অস্ত্রধারণ করবে। তখন যদি আপনারা বিপদ দেখে মুখ ফিরিয়ে নেন, তখন কী হবে?”
তারা হযরত আব্বাসের কথার কোন জবাব না দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন, তা শুনতে চান। তখন নবী করিম (স.) প্রথমে কুরআন তেলাওত করেন, এরপর বলেন : “আমি আমার জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে তোমাদের সাথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমার নিকট তোমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, যেভাবে তোমরা নিজেদের পিতা, পুত্র ও অন্যান্য স্বজনদের সুখে দুখে, বিপদে-আপদে সাহায্য করে থাক, সেভাবে আমাকে এবং আমার সাথী মুহাজিরদের সাহায্য করতে হবে। আর সত্য দ্বীন প্রচার ও প্রসারে নিজেদের জান-মাল কুরবানী করতে হবে। এতে তোমরা সম্মত আছ কি?”
তারা জিজ্ঞাসা করে : “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা যদি আমাদের জান-মাল আল্লাহর জন্য কুরবাণী করি; তবে এর বিনিময়ে আমরা কী পাব?”
জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “এর বিনিময়ে তোমরা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ করবে।”
তখন মদীনাবাসী আনসারদের পক্ষ হতে আবুল হায়সাম বলেন : “ইয়া রাসূলাল্লাহ! বর্তমানে মদীনার ইয়াহুদীদের সাথে আমার সন্ধি চুক্তি আছে, আমরা আপনার হাতে বায়‘আত গ্রহণের পর, তা আর থাকবে না। কিন্তু মুসলিম শক্তি প্রতিষ্ঠিত হলে, আপনি কি আমাদের ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন?”
এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : “কখনো এরূপ হবে না। আমরা তোমাদের এবং তোমরা আমাদের। চিরদিন আমরা এক সাথে থাকবো, আমাদের জীবন-মরণ সব কিছু একসাথে হবে।”
এরপর তারা সন্তুষ্ট হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বায়‘আত গ্রহণ করে বললো :
আমরা আমাদের জান-মাল সবই আল্লাহ্ ও রাসূলের জন্য কুরবাণী করবো।
এটিই ‘আকাবার দ্বিতীয় বায়‘আত।