প্রতি বছরই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সময় বিভিন্ন গোত্রের যাত্রীদের নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম প্রচার করতেন। নবূওতের একাদশ বছরেও তিনি যথারীতি দ্বীন প্রচার করতে থাকেন, মক্কার কাছে ‘হেরা’ ও ‘মিনা’-এর মাঝখানে অবস্থিত ‘আকাবা’ নামক একটি স্থান আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে কয়েকজন লোক দেখে, তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন তারা মদীনাবাসী খযরজ বংশের লোক। তিনি তাঁদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেন এবং কুরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়ে ইসলাম কবুলের আহবান জানান। তখন তারা বলাবলি করতে থাকে যে,
ইনিই তো সে নবী, যার কথা ইয়াহুদীরা সব সময় বলে।
ফলে তারা সকলেই নবী করীম (স.)-এর নিকট ইসলাম কবুল করে মদীনায় ফিরে যায়।
তাঁরা মদীনায় ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করতে থাকে। তাঁদের প্রচেষ্টায় মদীনায় ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। এই সময় ছয় ব্যক্তি ইসলাম কবুল করে, যাঁদের নাম হলো :
১. তায়হানের পুত্র আবুল হায়সাম
২. যুরারার পুত্র আব্ উসামা আস‘আদ
৩. হারিসের পুত্র ‘আওফ
৪. মালিকের পুত্র রাফি‘
৫. আমিরের পুত্র কুৎবা, এবং
৬. ‘আবদুল্লাহ ইবন রবাবের পুত্র জাবির। (ইবনে হিশাম)
নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে একটি বছর কেটে যায়। আবার হজ্জের সময় উপস্থিত হয়। গত বছর যারা আকাবা নামক স্থানে ইসলাম গ্রহণ করেছিলে, তাদের সাথে এবার অনেক লোক হজ্জ করার জন্য আসে। পূর্বোক্ত আকাবা উপত্যকায় তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে দেখা করে ইসলাম গ্রহণ করে। এদের সংখ্যা ছিল বার জন। তাঁদের নাম হলো :
১. যুরারার পুত্র উসামা আসআদ,
২. হারিসের পুত্র আওফ
৩. মালিকের পুত্র রাফি‘
৪. হারিসের পুত্র মু‘আয
৫. আব্দ কায়সের পুত্র যাক্ওয়ান,
৬. সামিতের পুত্র উবাদা
৭. উবাদার পুত্র আব্বাস,
৮. সালাবা,
৯. আমিরের পুত্র ‘উক্বা,
১০. আমিরের পুত্র কুৎবা,
১১. আবুল হায়সাম এবং
১২. সাইদার পুত্র উয়ায়ম।
এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে হাত রেখে এরূপ শপথ গ্রহণ করে :
১. একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবো, তাঁর সাথে অন্য কিছুর শরীক করবো না।
২. ব্যভিচার করবে না,
৩. চুরি করবে না,
৪. নিজের সন্তান সন্তুতিকে হত্যা করবে না,
৫. কারো প্রতি মিথ্যা দোষারোপ বা চোগলখুরী করবে না,
৬. আমি যে সৎকাজের নির্দেশ দেই, তা অমান্য করবে না।
এটিই আকাবার প্রথম বায়‘আত হিসাবে পরিচিত। (সহীহুল বুখারী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭)
তারা যখন মদীনায় ফিরছিল, তখন রাসূল্লুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসআব ইবন উমায়ের (রা.)-কে তাদের সাথে দেন, যিনি কুরআনের অভিজ্ঞ আলিম ছিলেন। তিনি লোকদের কুরআন শিখান, ইসলামের তালিম দেন এবং দ্বীনের পরিপূর্ণ জ্ঞান দান করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে মদীনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে লোক ইসলাম কবুল করে। মদীনাবাসীর অন্তরে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্য দ্বীন প্রবেশ করলো, তখন তাঁরা তাঁকে কাছে আনার জন্য বলাবলি করতে থাকে :
আমরা আর কতকাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দূরে রাখব, আর তিনি কত দিন মক্কায় হয়রান হয়ে তাঁর মদদগার বা সাহায্যকারী খুঁজতে থাকবেন?
— মুসনাদে আহমদ
অবশেষে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, আগামী হজ্জ মওসুমে তাঁরা মক্কায় গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মদীনায় তাশারীফ আনার জন্য আবেদন জানাবেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৩) নবূওতের দশম বছর - ৬২০ খৃষ্টাব্দ, বয়স ৫০ বছর | (১৫) নবূওতের ত্রয়োদশ বছর - ৬২৩ খৃষ্টাব্দ, বয়স ৫৩ বছর |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |