মুসলমানদের সংখ্যা ও শক্তি বৃদ্ধি হতে দেখে কুরায়েশরা এরূপ সিদ্ধান্ত নেয় যে, মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর অনুসারী এবং তাঁর সাহায্যকারীদের কঠোর বয়কটের মাধ্যমে শায়েস্তা করতে হবে। তাদের সাথে মেলামেশা, লেন-দেন, কেনা-বেচা, বিয়ে-শাদী সবই বন্ধ রাখা হবে। মোটকথা, তাদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখা যাবে না। তারা নবূওতের সপ্তম বছর, ১লা মুহাররম এক সভার মাধ্যমে স্থির করে যে, এ বয়কট ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকতে, যতক্ষণ না তারা স্বেচ্ছায় মুহাম্মদ (স.)-কে কুরায়েশ কাফিরদের হাতে সমর্পণ করবে। তারা এটা লিখে কাবা ঘরের সাথে টানিয়ে দেয়। (আল্-হাদীস, সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড)
শিআবে আবু তালিবে অন্তরীন জীবন
কুরায়েশদের বৈরীভাব লক্ষ্য করে আবু তালিব হাশিম ও মুত্তালিব গোত্রের সাথে পরামর্শ করে স্থির করেন যে, তারা মুহাম্মদ (স.)ও তাঁর সাথীদের নিয়ে শিআবে আবু তালিবে অবস্থান করবেন। এটি শহর থেকে একটু দূরে অবস্থিত এবং বেশ সুরক্ষিত ছিল। সেখানে এক সাথে থাকলে বিপদ কম হবে এবং অন্যান্য সুযোগ পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য যে, পরামর্শ অনুযায়ী তা-ই করা হলো। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিয়ে বনি-হাশিম ও বনি-মুত্তালিবগণ সেই গিরি দুর্গের মধ্যে আত্মনির্বাসিত হন, যেখানে তারা দীর্ঘ দু’বছর অনেক দু:খ কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত করেন।
এ সময় কুরায়শ কাফিররা মুসলমানদের উপর অমানুষিক অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়। বাহির থেকে তাদের কাছে যাতে কোন খাদ্য-শস্য না পৌঁছে, তারা সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ক্ষুধার যন্ত্রনায় তারা গাছের পাতা, শুকনো চামড়া ভিজিয়ে খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। ছোট শিশু ও মহিলাদের করুণ কান্নায় আল্লাহর আরশ পর্যন্ত প্রকম্পিত হয়, কিন্তু কুরায়েশ কাফিরদের পাষাণ হৃদয় তাতে এতটুকু বিচলিত হয়নি। অবশেষে আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাদের মতো বিভেদ সৃষ্টি করে দেন এবং কিছু ব্যক্তির মধ্যে শুভবুদ্ধি সৃষ্টি করেন, যারা বয়কটের বিরোধিতা শুরু করে। এ সাথে তারা সম্মিলিতভাবে বয়কটের পক্ষে যে প্রতিজ্ঞাপত্র তৈরী করে কাবা ঘরের দেয়ালের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল, আল্লাহর হুকুমে পোঁকায় খেয়ে তা নষ্ট করে দেয়। একথা শুনে অনেকে বলে :
যদি এটি সত্য হয়, তবে মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসূল, এতে কোন সন্দেহ নেই।
এভাবে দীর্ঘ দু’বছর তাঁরা অন্তরীন বা বন্দী থাকার পর সেখান থেকে বের হয়ে আসেন এবং আবার ইসলাম প্রচার শুরু করেন।
(ইবনে হিশাম, তাবারী ও সীরাতে হালবিয়া)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১১) নবূওতের ষষ্ঠ বছর - ৬১৬ খৃষ্টাব্দ, বয়স - ৪৬ বছর | (১৩) নবূওতের দশম বছর - ৬২০ খৃষ্টাব্দ, বয়স ৫০ বছর |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |