নবূওতপ্রাপ্তির পর যারা প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন এবং পড়ে নেনঃ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। এদের মধ্যে প্রথম হলেন :
১. হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রা.), যিনি নবী করীম (স.)-এর নবূওত প্রাপ্তির সময় পর্যন্ত দীর্ঘ পনের বছরের জীবন সাথী ছিলেন।
২. বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করেন, তিনি হলেন- হযরত আবু বকর সিদ্দীক।
৩. আর কিশোর যুবকদের মধ্যে যিনি দ্বীন কবুল করেন তিনি হলেন- হযরত আলী (রা.)।
উল্লেখ্য যে, প্রথম ওহী নাযিল হওয়ার পর বেশ কিছুদিন ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ ছিল। তখন কুরায়শ কাফিররা বলতে থাকেঃ “মুহাম্মদের রব মুহাম্মদকে পরিত্যাগ করেছে।” তখন ‘সূরা দুহা’ নাযিল হয়। (ওয়াহিদী আসবাবু নুযূলিল কুরআন, পৃ. ৪৮৯-৪৯০)
এরপর একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানের দিক থেকে হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনলেন। তিনি উপরের দিকে তাকিয়ে জিবরাঈল (আ.)কে দেখতে পান যে, তিনি আসমান ও যমীনের মাঝখানে একটা সিংহাসনে উপবিষ্ট আছেন। তিনি ভয় বিহবল চিত্তে ঘরে ফিরে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লে- এ আয়াত নাযিল হয়ঃ
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ قُمْ فَأَنذِرْ
অর্থ : হে বস্ত্রে আচ্ছাদিত ব্যক্তি! উঠুন এবং ভীতি প্রদর্শন করুন।
— আল্-কুরআন, সূরা আল্-মুদ্দাস্সির; আয়াত : ১-২
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার পর জিজ্ঞাসা করেন :
ইয়া রাসূলাল্লাহ (স)! আমার কাজ কী?
জবাবে তিনি (স.) বলেন :
আমার যে কাজ, তোমারও সেই কাজ। লোকদেরকে দ্বীন গ্রহণের জন্য দাওয়াত দাও।
উল্লেখ্য যে, তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে পাঁচ জন প্রসিদ্ধ সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেন। এঁরা হলেন :
১. হযরত উসমান গণী (রা.)
২. হযরত যুবায়র (রা.)
৩. হযরত আব্দুর রহমান (রা.)
৪. হযরত তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ (রা.) এবং
৫. হযরত সা‘আদ ইবন আবু ওক্কাস (রা.)
গোপনে দ্বীন প্রচার
এ সময় সাহাবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেক নর ও নারী ইসলাম কবুল করেন। তাঁরা ছিলেন :
১. হারিসের মেয়ে লুবাবা (রা.) । ইনি ছিলেন হযরত আব্বাস (রা.)-এর স্ত্রী। মহিলাদের মধ্যে হযরত খাদীজা (রা.)-এর পর তিনি ইসলাম কবুল করেন।
২. হযরত খাব্বাব (রা.) যিনি সর্বপ্রথম মুসলমান হওয়ার কথা কুরায়শদের কাছে প্রকাশ করেন। ফলে, তারা তার উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালায়। তাকে তপ্ত আগুনের উপর শুইয়ে বুকে পাথর চাপা দেয়।
৩. হযরত যায়দ ইবন সায়ীদ (রা.) । ইনি হযরত উমরের বোন ফাতিমার স্বামী ছিলেন।
৪. হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ (রা.), যিনি সব সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে থাকতেন।
৫. হযরত উসমান ইবন মাযউন (রা.), যিনি বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। মুহাজিরদের মধ্যে মদীনায় তিনি সর্ব প্রথম ইন্তিকাল করেন এবং ‘জান্নাতুল বাকীতে’ তাঁকে দাফন করা হয়।
৬. হযরত আরকম (রা.) । সাফা পাহাড়ের পাদদেশে তাঁর বাড়ী ছিল। প্রথম দিকে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ীতে মুসলমানদের শিক্ষা দিতেন এবং গোপনে ইসলাম প্রচার করতেন।
৭. হযরত আবু সালিমা (রা.), যিনি সবার আগে হিজরত করেছিলেন।
৮. হযরত আবু উবায়দা (রা.), যিনি প্রথমে হাব্শা ও পরে মদীনায় হিজরতকারী ছিলেন।
৯. হযরত কুদামা (রা.) । ইনি হযরত উমর (রা.)-এর ভগ্নী সুফিয়ার স্বামী ছিলেন। তিনি উভয় হিজরতে এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
১০. হযরত ‘উবায়দা (রা.) । তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হারিসের পুত্র ছিলেন। তিনি মদীনায় হিজরত ও বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
১১. হযরত জাফর (রা.) । ইনি হযরত আলী (রা.)-এর ভাই ছিলেন এবং মুতার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
১২. আব্দুল্লাহ ইবন জহশ (রা.) । যিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন এবং হাময়ার সাথে একই কবরে সমাধিস্থ হন।
১৩.জহশের পুত্র আবূ আহমদ (রা.) । ইনি হযরত যয়নব (রা.)-এর ভাই ছিলেন।
১৪. উসমান ইবন মাযউনের পুত্র সায়িব (রা.) । ‘বুওয়াত’ যুদ্ধের সময় রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মদীনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
১৫. হযরত উমায়র ইবন আবু ওক্কাস (রা.), ইনি সা‘দ ইবন আবূ ওক্কাসের ভাই ছিলেন। তিনি বদর যুদ্ধে শহীদ হন।
১৬. হযরত আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা (রা.) । তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবন যুবায়েরের মাতা ছিলেন।
১৭.হযরত খালিদ ইবন হিয়াম (রা.) । ইনি হযরত খাদিজা (রা.)-এর ভাইয়ের ছেলে ছিলেন।
১৮.হযরত আম্মার ইবন ইয়াসির (রা.) । যিনি সিফ্ফীনের যুদ্ধে নিহত হন।
১৯. হযরত হুযায়ফা (রা.) । যিনি হাব্শা ও মদীনা উভয় হিজরতে এবং বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন।
২০.হযরত সুমাইয়া (রা.) ইনি হযরত ‘আম্মার ইবন ইয়াসিরের মা ছিলেন। ইনি মহিলাদের মধ্যে সর্ব প্রথম শহীদ হন। আবূ জেহেল তাঁর লজ্জাস্থানে বর্শাঘাত করে, ফলে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
এছাড়া আসীমের কন্যা আসমা, সালামার কন্যা আস্মা, হযরত ‘উমরের বোন ফাতিমা (রা.)সহ অনেকে ইসলাম কবুল করেন। উল্লেখ্য যে, আবুল আরকমের পুত্র আরকম (রা.) এগার জনের পর পবিত্র ইসলাম কবুল করেন। সাফা পাহাড়ের পাদদেশে তাঁর বাসস্থান ছিল। সেখানে বসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোপনে নওমুসলিমদের শিক্ষা দিতেন। এভাবে তিন বছর পর্যন্ত তিনি (স.) হযরত আরকমের বাড়ীতে বসে গোপনে দ্বীনের তাব্লীগ ও প্রচারের কাজ সম্পন্ন করেন।