হযরত মুছা আলাইহিছ ছালাম তুর পাহাড়ে আল্লাহ তাআ'লা কে দেখার জন্যে “আরিনী আরিনী” অর্থাৎ আমাকে দেখা দাও! আমাকে দেখা দাও! বলে আবেদন জানিয়ে ছিলেন। আর আল্লাহ “লান তারানী” - “আমাকে দেখতে পাবে না” বলে উত্তর দিয়েছিলেন।
এ দুনিয়ার পরিমন্ডলে আল্লাহকে দেখা যায় না। এ জন্যে আল্লাহ তাআ'লা রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে দুনিয়া আছমানের সীমানা পার করে রফ রফের মাধ্যমে আপন দরবারে এনে মে'রাজ নছীব করেন। কোরআন পাকের মধ্যে রছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে মুহাম্মাদ, আহমাদ, নবী, রাছুল, উম্মি, হাদী বিভিন্ন নাম উল্লেখ করেছেন। মেরাজের বর্ননায়
[আরবী]
(১) আল্লাহ তাআ'লা তাঁর আবদকে রাতে ভ্রমন করিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। (ছুরা বনি ইছরাইল)
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম আবদ গুনে গুনান্বিত হলে আবদ গুন বিশিষ্ট মুহাম্মাদকে মেরাজে নিয়েছেন। রছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মতদের ব্যপারেও আল্লাহ তাআ'লা এরশাদ করেছেন -
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً - فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي-
(২৭) হে নফছে মুতমাইন্না ! (২৮) তুমি তোমার রবের দিকে ফিরে এসো এমন অবস্থায় যে, (২৯) তুমি তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্ট আর রব ও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। তুমি আমার আবদভুক্ত হয়ে যাও এবং (৩০) আমার (দীদার ও নৈকট্যের জন্যে) জান্নাতে প্রবেশ করো।
(ছুরা ফাজর)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআ'লা নফছে মুত মাইন্নাকে আবদ হতে আদেশ করেছেন। কোরআন মাজীদে নফছের ৭টি স্তরের কথা বলা হয়েছে।
১। নফছে আম্মারাহ বা দুস্কৃতিকারী নফছ। (ছুরা ইউছুফ - ৫৩)। ২। নফছে লাওয়ামাহ বা ভাল কাজে খুশী ও মন্দ কাজে অনুশোচনাকারী নফছ। (ছুরা ক্বিয়ামাহ- ২) ৩। নফছে মুলহিমাহ এলহাম বা নির্দেশ লাভকারী নফছ। (ছুরা শামছ ৭-৮) ৪। নফছে মুতমায়িন্নাহ বা প্রশান্ত নফছ। ৫। নফছে রাদিয়াহ বা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট নফছ। ৬। নফছে মারদিয়াহ বা বান্দার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টির স্বীকৃতি প্রাপ্ত নফছ । (সূরা ফাজর ২৭ - ৩০)। ৭ । নফছে ছাফিয়াহ বা পরিশুদ্ধ নফছ।
নফছের স্বভাব হলো আল্লাহর বিরুদ্ধাচারণ করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআ'লা হযরত দাউদ আলাইহিছ ছালামকে এরশাদ করেন -
হে দাউদ ! তুমি তোমার নফছের বিরুদ্ধে জিহাদ করো। কেননা সে আমার বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত।
(হাদীছে কুদছী)
শরীরের মধ্যে নফছ ও ক্বলব একই সাথে অবস্থান করে। ক্বলবের মূলের মূল যেমন আল্লাহ তাআ'লার দু আঙ্গুলের ফাকে নুরে মুহাম্মাদীতে অবস্থিত। নফছের মূলের মূল ও উক্ত স্থানে অবস্থিত।
আলোর বিপরিতে যেমন অন্ধকার সৃষ্টি হয়। ক্বলবের বিপরিতে তেমন নফছ সৃষ্টি হয়েছে। নুরে মুহাম্মাদীর নূর থেকে আল্লাহ ক্বলব সৃষ্টি করেছেন- যা আলোকিত নূর। আর উক্ত ক্বলবের বিপরিতে নফছ সৃষ্টি হয়েছে যা জুলমাত ও অন্ধকার। ক্বলব আল্লাহ তাআ'লার গুন প্রাপ্ত। সে কারণে ক্বলব স্বচ্ছ, নিষকলুষ, আল্লাহ প্রেমিক ও আল্লাহর অনুগত। তার বিপরিতে নফছ অন্ধকার, আল্লাহর তাআ'লার বিরুদ্ধাচারী ও খারাপ দোষে দুষ্ট।
আল্লাহ তাআ'লা এরশাদ করেন –
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ - ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ
(৪) আমি ইনছান অর্থাৎ মানুষকে উত্তম সার বস্তু দিয়ে সৃষ্টি করেছি (৫) এরপর তাকে নিকৃষ্ট স্থানে ফিরিয়ে দিয়েছি।
(ছুরা ত্বীন)
ক্বলব ও নফছ একই সাথে অবস্থানের কারণে একে অপরের প্রভাবে প্রভাবিত হয় ও একে অপরের গুন গ্রহন করে গুনান্বিত হয়। ক্বলব একটি মাংসপিন্ড। তার স্তর আছে। আর তার স্তর হলো ৭টি। ১। ছদর ২। নশর ৩। শামছি ৪। নুরী ৫। কুরব ৬। মাকিন ৭। নাফছি ।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন –
মু'মিন যখন কোন গোনাহের কাজ করে তখন তার ক্বলবের মধ্যে অন্যায়ের কালো দাগ পড়ে। সে যদি তওবা এস্তেগফার করে তা হলে তার ক্বলবের কালো দাগ উঠিয়ে দেয়া হয়। আর যদি বেশী বেশী অন্যায় করে তবে বেশী বেশী কালো দাগ পড়ে, এমনকি কালো দাগে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এটা ঐ মরিচা যে সম্পর্কে আল্লাহ তাআ'লা বলেছেন – কখনো না, বরং তারা যা করেছে তাই তাদের ক্বলবে মরিচা ধরে গেছে।
(সূরা তাতফীফ ১৪, মেশকাত- ২২৩৩)
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন – প্রত্যেক আদম সন্তানের ক্বলবের মধ্যে দুটি কুঠুরী আছে। তার একটিতে ফেরেশতা ও অন্যটায় শয়তান অবস্থান করে। ক্বলব যখন আল্লাহর স্মরন করে তখন শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আর ক্বলব আল্লাহর স্মরন না করলে শয়তান তার ঠোঁট ক্বলবের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে অছ্অছা বা কুমন্ত্রনা দিতে থাকে।
যদি একজন ভাল মানুষ পাচজন খারাপ মানুষের সঙ্গে থাকে তবে তাদের খারাপ কাজ-কাম, খারাপ আলোচনার কারণে ভাল মানুষটি ভাল কাজের সুযোগ পায় না ও খারাপের প্রতিক্রিয়ায় খারাপ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে একজন খারাপ মানুষ পাচজন ভাল মানুষের সঙ্গে থাকলে তাদের ভাল কাজ-কাম ও ভাল আলাপ-আলোচনার কারণে খারাপ কাজকাম ও খারাপ আলাপ আলোচনার সুযোগ পায় না এবং ভালোর প্রতিক্রিয়ায় সে ভাল হয়ে যায়।
নফছ ও ক্বলব দুই বিপরিত স্বভাবধারী একই সঙ্গে অবস্থান করে। হাদীছ অনুযায়ী নফছে আম্মারার খারাপ আমলের প্রতিক্রিয়ায় ক্বলবের প্রথম স্তর ছদর গোনাহের কালিমায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে রোগগ্রস্থ হয়ে যায়।
مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ - الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الجنَّةِ وَالنَّاسِ
(৪) আমি খান্নাছের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি (৫) যে কুমন্ত্রনা দেয় মানুষের ছদর সমূহে (৬) জ্বেন ও মানুষের মধ্যে থেকে।
(ছুরা নাছ )
ফলে ছদর তার নিজস্ব শক্তি হারিয়ে ফেলে। পক্ষান্তরে ছদর আল্লাহর স্মরণ করলে আল্লাহর কাছে তওবা এস্তেগফার করলে আল্লাহ তার প্রতি রহমত বর্ষণ করে গোনাহের কালো দাগ উঠিয়ে দেন। এ অবস্থায় ছদর আল্লাহর স্মরণে নিয়োজিত থাকলে আল্লাহর গুনাবলীর নূর উক্ত ছদরে পতিত হওয়ার ফলে ছদর আল্লাহর গুন সম্পন্ন হয়।
أَفَمَنْ شَرَحَ اللهُ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ فَهُوَ عَلَى نُورٍ مِنْ رَبِّهِ فَوَيْلٌ لِلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ أُولَئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
(২২) আল্লাহ তাআ'লা যার ছদরকে ইছলামের জন্য প্রসার করে দেন সে আল্লাহর নুরের মধ্যে প্রবেশ করলো।
(ছুরা ঝুমার)
এ গুনের প্রভাবে নফছে আম্মারা তার খারাপ দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর গুন গ্রহনে আগ্রহী হয়। ক্বলব গোনাহমুক্ত হলে ক্বলবের প্রতিটি স্তর আল্লাহর গুনাবলী গ্রহন করে ।
[আরবী]
‘তোমরা আল্লাহ চরিত্রে চরিত্র বান হও’
আল্লাহ পাকের এ হুকুম অনুযায়ী আল্লাহর গুন সম্পন্ন হতে থাকে । সাথে সাথে ক্বলবের প্রভাবে নফছ ও তার খারাপ স্বভাব পরিত্যাগ করে উক্ত গুন গ্রহন করে ক্বলবের গুন সম্পন্ন হতে থাকে ।
ক্বলবের দ্বিতীয় স্তর নশরের প্রভাবে নফছ লাওয়ামাহ অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধ বর্জনে খুশী ও এর বিপরিত কাজে অনুশোচনার গুন অর্জন করে।
ক্বলবের তৃতীয় স্তর শামছীর প্রভাবে নফছ মূলহিমার স্তরে প্রবেশ করে ভাল মন্দের পার্থক্য এবং নিজের লাভ ও ক্ষতির হিসেব বুঝে ক্ষতি ও খারাপ কাজ থেকে সরে যায়। এ স্তরে ক্বলবে অবস্থানকারী ফেরেশতার নিকট থেকে এলহাম বা আদেশ লাভ করার যোগ্যতা অর্জন করে। ফলে নফছ ক্বলবে অবস্থিত শয়তানের প্রভাব মুক্ত হয়ে ফেরেশতার অধীনস্থ হয়ে পড়ে।
ক্বলবের চতুর্থ স্তর নুরীর প্রভাবে নফছ মুতমাইননায় পরিনত হয়। নফছ তখন আল্লাহর প্রত্যেক আদেশ নিষেধ কে তার জন্যে উপকারী মনে করে আল্লাহর প্রতি তার বিরুদ্ধাচারণ দূর করে দেয় এবং আল্লাহর প্রতি খুশী হয়ে যায় ।
ক্বলবের পঞ্চম স্তর কুরব এর প্রভাবে নফছ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে আল্লাহর প্রেমে পাগল হয়ে যায়। প্রেমিক যেমন প্রেমাস্পদের দেয়া গালিগালাজ ব্যথা দুঃখ অবলীলাক্রমে হজম করে
তাকে সুখ মনে করে এখানে নফছ তেমন ছুরা বাকারার ১৫৫ আয়াত অনুযায়ী তার প্রতি ক্ষুধা, জান, মাল ও ফসলাদীর ক্ষয় ক্ষতির পরীক্ষায় নিজের গোনাহ মাফ ও আল্লাহর নেয়ামত মনে করে চরম ধৈর্য ধারণ করে। আল্লাহর প্রতি তার কোন অনুযোগ ও অভিযোগ থাকে না। আল্লাহ তাআ'লার আদেশ নিষেধের বিপরিত ভাব তার হাত পা, চোখ, কান, নাক মুখ এমন কি তার শরীরের কোন অংগ দিয়ে ও প্রকাশ পায় না। বরং আল্লাহর আদেশ নিষেধকে নফছ খুশী মনে গ্রহন করে। তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়েও এ খুশী প্রকাশ পেতে থাকে ।
ক্বলবের ষষ্ট স্তর মাকিনের প্রভাবে নফছ আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা, অনিচ্ছাকে অনিচ্ছা, আল্লাহর খুশী অখুশীকে নিজের খুশী অখুশী মনে করে নিজকে পুর্ণরূপে আল্লাহর উপর ছোপর্দ করে । আল্লাহর প্রতি অটল ও অবিচল থাকে। তখন আল্লাহ তাআ'লা ও তার প্রতি রাজী খুশী হয়ে যান ।
আল্লাহ তাআ'লা এরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ - نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ في فِيهَا مَا تَدَّعُون -
(৩০) যারা বললো আমাদের রব আল্লাহ। এরপর তারা এ কথার উপর অটল থাকলো তাদের কাছে ফেরেশতাগণ এসে বলেন- তোমরা ভয় পেয়োনা, তোমরা দুঃখীত হয়ো না আর সুসংবাদ গ্রহন করো জান্নাতের যা তোমাদের জন্যে ওয়াদা করা হয়েছে। (৩১) (আল্লাহ তাআ'লা সুসংবাদ দেন) আমি তোমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের বন্ধু । তোমাদের মন যা চাবে আর তোমরা যা দাবী করবে তা সবই তোমাদের দেয়া হবে।
(ছূরা-হামীম ছেজদা-৪১ঃ৩০-৩১)
أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ -
(১৫৭) এদের উপর আল্লাহর তরফ থেকে ছলাত এবং রহমত। আর এরাই হেদায়েত প্রাপ্ত।
(ছুরা বাকারা)
এরপর নামাজী ক্বলবের শেষ স্তর নাফছিতে প্রবেশ করলে তার প্রভাবে নফছ ছাফিয়া বা পরিশুদ্ধ নফছ হয়ে আল্লাহ তাআ'লার অনুগত গোলাম বা আবদ হয়ে যায় ।
[আরবী]
(৫০) হে রাছুল ! বলে দাও আমার কাছে যে অহি আসে তা আমি হুবহু অনুসরণ করি। (ছুরা-আনআম)
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى -
(৩) মুহাম্মাদ নিজের ইচ্ছায় কিছু বলে না (৪) যতক্ষন আল্লাহর তরফ থেকে অহি না আসে।
(ছুরা নজম)
আবদ মুহাম্মাদ দ্বীন প্রতি পালনে রোবটের মতো ছিলেন। রোবটের যেমন নিজস্ব কোন শক্তি নেই। মালিকের রিমোট কন্ট্রোলে পুরাপুরি পরিচালিত হয়। তার ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই, নেই কোন মতামত। আবদ মুহাম্মাদ ও তেমন নিজেকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআ'লা যখন মুহাম্মাদকে বললেন- হে মুহাম্মাদ ! তুমি আছ আমি আছি। মুহাম্মাদ জবাবে বললেন – হে আল্লাহ আমি নেই, তুমি আছ । তখন মুহাম্মাদকে আবদ খেতাবে ভুষিত করা হয় ও তাকে দীদার ও নৈকট্য দানের জন্য আল্লাহ নিজের দরবারে মেরাজে নিয়ে যান। আল্লাহ তাআ'লা আবদ মুহাম্মাদকে দেখা দেন, কথা-বার্তা বলেন।
রছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন –
আমি আমার রবকে দেখেছি আমার রবের চোখ দিয়ে ।
রছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম উম্মত ও যখন দ্বীনের ব্যপারে নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছা কাজ কাম সব কিছু আল্লাহর উপর ছোপর্দ করে রোবটের মতো আবদ বা অনুগত দাস হয়ে যায় তখন তাকেও মেরাজের সু সংবাদ দেওয়া হয় ।
হযরত ইবনে আব্বাছ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত – রাছুলে পাক বলেছেন - জিবরিল এসে বললেন, হে রাছুল আল্লাহ আপনাকে ছালাম দিয়েছেন এবং বলেছেন – কোন বান্দা যখন আমার দীদারের জন্যে দাড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে তখন আমার এবং ঐ বান্দার মধ্যের পর্দা উঠিয়ে দেওয়া হয়। (বিস্তারিত হাদীছ ১৩ পৃষ্টায় দেখুন)।
হযরত মুছা আলাইহিছ ছালাম যখন আরিনী আরিনী বলে ফরিয়াদ করেছিলেন তখন আল্লাহ তাআ'লা ৭০ হাজার নুরের পর্দার অন্তরাল থেকে নুরের তাজাল্লী ফেললে হযরত মুছা আলাইহিছ ছালাম বেহুশ হয়ে পড়েন। কিন্তু রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মতের মধ্যে আবদ যোগ্যতা অর্জনকারী নামাজে দাড়ালে আল্লাহ তাআ'লা তার উক্ত ৭০ হাজার নুরের পর্দা সরিয়ে দিয়ে বান্দার মূল শরীর অর্থাৎ ক্বলব রুহকে নিজের দরবারে উঠিয়ে নেন। বান্দা তখন ছুরা ফাতেহার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে কথোপ কথন করে আল্লাহর দীদার ও চরম নৈকট্য লাভ করে।
নামাজী তখন প্রতি নিয়ত আল্লাহর দীদারের জন্য ব্যকুল হয়ে পড়ে। তখন আল্লাহ তাআ'লা তাকে নৈকট্য দানে সৌভাগ্যবান করেন।
عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " إن الله تعالى قال : من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضت عليه وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به وبصره الذي يبصر به ويده التي يبطش بها ورجله التي يمشي بها وإن سألني لأعطينه ولئن استعاذني لأعيذنه وما ترددت أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن يكره الموت وأنا أكره عن شيء مساءته ولا بد له منه " . رواه البخاري
রছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন- আল্লাহ তাআ'লা বলেন— আমি বান্দার জন্যে যা ফরজ করেছি তা ছাড়া এমন কোন প্রিয় ইবাদাত নেই যা দিয়ে বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে। (ফরজ ইবাদাতের নৈকট্য লাভের পর) বান্দা নফল ইবাদাতের মাধ্যমে আমার নিকটবর্ত্তী হতে থাকে। এমনকি আমি নিজে তাকে মুহব্বত করি। আর আমি যখন তাকে মুহাব্বত করি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে, আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে। (বোখারী আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু হতে এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন)।
(বুখারী হাদীছ নং - ৬১৩৭, মেশকাত- ২২৬৬ )
বর্ত্তমান কালের টেলিফোনের উন্নত প্রযুক্তির সেক্রো ফোনে কানে কানে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একে অপরকে দেখতে পায় । পঞ্চ ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ, কান, নাক, জিব ও ত্বক এরা প্রত্যেকে যে উপাদানে সৃষ্টি সে উপাদানকে দেখতে পায়। নাক সুগন্ধ দুর্গন্ধ দেখে জিব তিতু মিষ্টি টক ঝালকে দেখে, ত্বক ঠান্ডা গরম দেখে, চোখ জড়বস্তু দেখে।
আকার প্রকার বিহীন, রং-রূপবিহীন ক্বলব – আকার আকৃতি বিহীন, রং-রূপবিহীন আল্লাহ তাআ'লাকে দেখে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ.........অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ তাঁর বান্দাহ ও রাছুল এ সাক্ষ্য দিয়ে ঈমানের স্তর অতিক্রম করে বুনিয়াদে ইছলামে প্রবেশ করে।
ত্বক, নাক ও জিব এর দেখা যেমন অনুভূতির ব্যপার। সুখ দুঃখের খুশী ব্যথা যেমন মনের অনুভূতি। তেমন ক্বলব বা মনের আল্লাহ দর্শনও তেমন অনুভূতি। এ দেখার কোন রূপ রেখা নেই ।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম যখন ছাহাবাদের বললেন আমি আল্লাহকে দেখেছি। ছাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন আল্লাহ কেমন ? রাছুলে পাক জবাব দিলেন – লাইছা কা মিছলিহি শাইউন । অর্থাৎ কোন সৃষ্টি বস্তুর সঙ্গে তাঁর মিল নেই। স্থল বস্তু সন্দেশ, রস- গোল্লা ও জিলাপির মিষ্টির স্বাদের পার্থক্য যেমন কোন ব্যক্তি ভাষা বা মুখে প্রকাশ করতে পারেনা তেমন আল্লাহ দর্শনের ধরন কেমন তা দর্শনকারী কোনরূপ আকার ইঙ্গিতেও প্রকাশ করতে অক্ষম।
চার ইঞ্চি ডায়াগ্রামের একটি আয়না পৃথিবীর হাজার হাজার কোটী ভাগের এক ভাগ। পৃথিবীর থেকে সূর্য তের লক্ষ গুণ বড়। এ সূর্যের প্রতিবিম্ব চার ইঞ্চি ডায়াগ্রামের আয়নার মধ্যে অনায়াসে ঢুকে যায়। সূর্যের দিকে তাকালে যেমন চোখ ঝলসে যায়, আয়নার মধ্যের সূর্যের দিকে তাকালেও চোখ ঝলসে যায়। সূর্যের দিকে আতসী কাঁচ ধরলে তার থেকে কাগজে আগুন ধরে যায়, আয়নার মধ্যের সূর্যের দিকে আতসী কাঁচ ধরলেও তেমন আগুন ধরে যায়। আয়নার সূর্য, সূর্য নয় আবার সূর্য হতে আলাদাও নয় ।
মু'মিনের ক্বলব আল্লাহ তাআ'লার আঙ্গুলগুলির দু'আঙ্গুলের ফাঁকে অর্থাৎ আল্লাহ তাআ'লার সামনে নূরে মোহাম্মাদীতে অবস্থিত। এ ক্বলব আকার আকৃতিবিহীন, চিন্তা-কল্পনা ও ধারণাবিহীন। আল্লাহ তাআ'লাও তেমন আকার আকৃতিবিহীন, চিন্তা-কল্পনা ও ধারণাবিহীন।
আল্লাহ তাআ'লা তার আবদ্ মোহাম্মদ কে স্বশরীরে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়ে তাকে দীদার দান করেন। আবদ্ গুণ অর্জনকারী বান্দা আল্লাহু আকবার বলে নামাজে দাড়ালে, আল্লাহ তাআ'লা তাঁর ও বান্দার মধ্যকার নূরের পর্দা উঠিয়ে দিয়ে বান্দার ক্বলবকে তাঁর দু'আঙ্গুলের ফাঁকে অর্থাৎ নূরে মোহাম্মাদীর মূলে উঠিয়ে নেন। বান্দা তখন আল্লাহ তাআ'লার সামনে দাড়িয়ে ছুরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহ তাআ'লার সাথে কথা-বার্তা বলতে থাকে। আল্লাহ তাআ'লার সাথে ক্বলবের মাধ্যমে এ কথা-বার্তা বলাই হ'ল মু'মিনের মে'রাজ বা আল্লাহ তাআ'লার সাথে দীদার বা সাক্ষাত। মোহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মতের জন্য এ মে'রাজ লাভই দুনিয়াতে তাদের চরম পাওয়া।
এ দীদার লাভের জন্যে নবী-রাছুলগণও আকাঙ্খা করে বলেছেন - নবী রছুল না হয়ে মোহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মত হতে পারলে আল্লাহ তাআ'লার দীদার লাভের মাধ্যমে জীবন ধন্য হ'ত।
আল্লাহ তাআ'লা তার দীদার লাভের আগ্রহী বান্দাগণকে সালাত কায়েমের মাধ্যমে তার চরম নৈকট্য ও অনন্ত মিলন নছিব করুন, আমীন৷
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৩) মে'রাজ লাভের উপায় | (০৩৪) নামাজের আহকাম |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |