পবিত্র মিলাদুন্নবীর ইতিহাস অতি প্রাচিন । মিলাদুন্নবীর সুচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন । রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন । নবী গনের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী আয়োজক স্বয়ং আল্লাহ । তিনি নিজে ছিলেন মীরে মাজলিস বা সভাপতি । সকল নবীগন ছিলেন শ্রোতা । ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের বেলাদাত, শান ও মান অন্যান্য নবীগনের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা । কোরআন মজিদের ৩য় পারা সুরা আলে এমরানে ৮১-৮২ নং আয়াতে মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ঐ মিলাদুন্নবী মাহফিলের কথা উল্লেখ করেছেন । নবীজীর সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল এবং মিলাদ মাহফিলের উদ্যোগ্ক্তা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা । সুতরাং মিলাদে মাহফিল আনুষ্ঠান হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত বা তরিকা । ঐ মজলিসে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও উপস্থিত ছিলেন । ঐ মজলিসে স্বয়ং আল্লাহ নবীজীর শুধু আবির্ভাব বা মিলাদের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন । সিরাতুন্নবীর উপর কোন আলোচনা সে দিন হয়নি । সমস্ত নবীগন খোদার দরবারে দন্ডায় মান থেকে মিলাদ শুনেছেন এবং কিয়াম করেছেন । কেননা খোদার দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই । পরিবেশটি ছিল আদবের ।
মিলাদ পাঠকারী ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ এবং কিয়ম কারীগন ছিলেন আমবিয়ায়ে কেরাম ।
এই মিলাদ ও কিয়াম কোরআনের " ইকতেদো উন নস " দ্বারা প্রমানিত হলো : উল্লেখ্য যে কোরআনে মজিদের "নস" চার প্রকার যথা : ইবারত , দালালত , ইশারাও ইক্কতিজা ।উক্ত চার প্রকার দ্বারাই দলিল সাবেত হয় । ( নুরূল আনওয়ার দেখুন ) নিম্নে উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে ইবারতের দ্বারা প্রমানিত হয়েছে অঙ্গীকার / দালালাতের দ্বারা নবীগনের মাহফিল , ইশারার দ্বারা মিলাদের ব আবির্ভাবের এবং ইকতিজার দ্বারা কিয়ামের প্রমানিত হয়েছে ।
সুতরং মিলাদুন্নবী মহফিল কেয়াম নবীগনের সম্মিলিত সুন্নাত ও ইজামায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত । কোরআন মজিদে আলে এমরানের আয়াত ৮১-৮২ উল্লেখ করা হলো : আল্লাহ বলেন ( ৮১ )
হে প্রিয় রাসুল ! আপনি স্মরণ করূন ঐ দিনের কথা , যখন আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীগন থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে , যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরন করবো ; তারপর তোমাদের কাছে আমার মহান রাসুল যাবেন এবং তোমাদের নবু্যত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন , তখন তোমরা অবশ্য অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে
আল্লাহ বলেন
তোমরা কি এ সব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহন করে নিয়েছো ( তখন ) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, ----আমরা অঙ্গিকার করছি ।
আল্লাহ বলেন
তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষি থাক । আর আমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম ।
অত:পর যে কোন লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে- সেই নফরমান (কাফের )
উক্ত দুটি আয়াতে মধ্যে নবী করিম (দ) -এর ব্যাপারে ১০ টি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । যথা :
১০ নং দফায় নবীগনের উম্মত তথা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের পরিনতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে । কেননা নবীগগনের অস্বীকারের প্রশ্নই উঠে না । অস্বীকার করেছেন ইয়াহুদী ও নাসারাগন । সুতরাং তারাই কাফের ।
(বিঃ দ্রঃ) বক্ষমান আয়াত দুটিতে রাসুলে পাকের রেসালতের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ১০টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন— যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু খোদার তাওহীদের ব্যাপারে মাত্র একবার ওয়াদা নেয়া হয়েছিল রোজে আজলে। সেখানে কোন তাকিদমূলক অঙ্গীকার ছিলনা এবং সাক্ষী সাবুদও রাখা হয়নি। যেমন : আল্লাহ বলেনঃ [আরবী] আমি কি তোমাদের প্রভূ ও স্রষ্টা নই? সমস্ত বনী আদম তখন উত্তরে বলেছিল [আরবী] অর্থ্যাৎ তারা সবাই বললো- হ্যাঁ!
তাওহীদের ক্ষেত্রে একবার অঙ্গীকার আর সিরালাতের ক্ষেত্রে বার বার অঙ্গীকার একথারই ইঙ্গিত বহন করে যে, তাওহীদের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যার সৃষ্টি হবে না। কিন্তু রিসালাতের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা দেখা দিবে। কেউ মানবে, কেউ মানবেনা। নবী তো মানবীয় সুরতে যাবেন। তাঁর খাওয়া-দাওয়া চলাফেরা, উঠা-বসা, জাগতিক লেন-দেন মানুষের মতই হবে। এগুলো দেখে তাঁর নবুয়ত ও রিসালাত এবং তাঁর বিশেষ মর্যাদার কথা মানুষ খুব কমই অনুধাবন করতে পারবে । তাঁর সাথে বেয়াদবীপূর্ণ আচরণ করবে। এজন্যই নবীজীর নবুয়ত ও রিসালাত সম্পর্কে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও তাঁর সমর্থন উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াবাসীকে নবীজীর শান-মান ও আগমনের গুরুত্ব উপলব্ধি করার তাকিদ করেছেন। মিলাদুন্নবীর মূল আলোচ্য বিষয়ই উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক নিজেই বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহর রবুবিয়াত অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ কোন ফতোয়া দেননি। কিন্তু নবীজীর রিসালাত ও শান-মান অস্বীকারকারীকে কাফের বলেছেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১) মিলাদ ও কিয়ামের বিধান | (০৩) হযরত আদম (আঃ) এর যুগে মিলাদ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |