রাসূল (সা) যখন নবুওয়াতের লাভ করেননি তখনও তাঁর মূর্তিপূজা ও অন্যান্য পাপকাজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা ছিল। আবূ নামীয় ও ইব্ন আসাকির হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কখনও মূর্তিও উপাসনা করেছেন কি ? তিনি উত্তর দিলেন, না, কখনও করিনি। জিজ্ঞেস করা হলো, মদপান ? তিনি বললেন, তাও কখনও পান করিনি। এসব যে পাপ তা আমি জানতাম,অথচ তখনও আমি আল্লাহর কিতাব এবং ঈমান সম্পর্কে কিছুই জানতান না।
হযরত আব্বাস (রা) রেওয়ায়েত করেন যে, হযরত উম্মে আয়মান বর্ণনা করেছেন- কুরায়শরা বছরে একবার বুয়ালা নামীয় একটি প্রতিমার কাছে জমায়েত হতো। আবূ তালিবও তাঁর নিজ গোত্রের লোকজনসহ তাদের সাথে ঐ প্রতিমার কাছে জমায়েত হতেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) সোজা অসবীকার করতেন। এ কারণে একরার আবূ তালিব নাখোশ হলেন। তাঁর ফুফুরাও এ কারণে সেদিন খুব বেজার হলেন। বললেনঃ আমাদের দেবতাদের প্রতি তোমার অবজ্ঞা দেখে আশংকা হয়, এ দেবতারা না তোমার কোনও ক্ষতি করে বসে। এ ব্যাপারে তারা ভীষণ পীড়াপীড়ি শুরু করলে রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের কাছ থেকে চলে গেলেন। বেশ কিছু দিন উধাও হয়ে থাকেন।
উম্মে আয়মান বলেনঃ এরপর তিনি একদিন ফিরে এলেন। তখন তিনি খুব সন্ত্রস্ত। ফুফুরা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-বল তো তোমার হয়েছে কি ? তিনি বললেঃ জিনদের ব্যাপারে আমার খুব ভয় হয়। তারা বললেনঃ আল্লাহ্ শয়তান থেকে তোমাদের দূরে রাখুন। তোমার মাঝে এমন উত্তম গুণাবলি আছে যার জন্য তুমিই সুযোগ্য। আচ্ছা বলতো, তুমি কি দেখেছো ? তিনি বললেনঃ আমি যখন একটি মূর্তির কাছে গেলাম, তখন সাদা কাপড় পরিহিত দীর্ঘদেহী একজন আমার চোখে পড়ল। তীক্ষ্ণকন্ঠে আমাকে বললঃ ‘হে মুহাম্মদ ! এর কাছ থেকে তুমি দূরে থাক। একে তুমি স্পর্শ করবে না।’ উম্মে আয়মান বর্ণনা করেনঃ এরপর তিনি আর কখনও কুরায়শদের ধর্মীয় কাজে যাননি। তারপর তো তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তই হলেন।
ইব্ন সা’দ এবং ইব্ন আসাকির দাঊস ইব্ন হুসাইন থেকে রেওয়ায়েত করেন- যৌবনে রাসূল (সা) চরিত্রবলে ছিলেন সবার উপর শ্রেষ্ঠ, মুয়ামিল ও চলাফেরায় সকলের উপর সম্মানিত। বিশ্বস্ততায় সর্বসেরা,কথাবার্তায় চূড়ান্ত সত্যাশ্রয়ী, অশ্রীলতা ও বেহুদা বাক্যালাপ থেকে সর্বাধিক দূরত্ব রক্ষাকারী। ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত হতে কখনও তাঁকে দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত সকালে তাঁকে ‘আল-আমীন’ নাম দেয়।