নবুয়তের ১১ সনের রজব মাসে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ও তার উম্মতের উপর নামাজ ফরজ হয়। এ বছর হযরত আবু তালেব ও হযরত খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা এর ইন্তিকালের কারণে মক্কার কাফের মুশরিকরা রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ও ছাহাবাগণের উপর সবচেয়ে বেশী জুলুম ও অত্যাচার করতে থাকে । মোশরেকদের অত্যাচারের কারণে ছাহাবাগণের খোলামেলাভাবে নামাজ পড়া, নামাজের আলাপ আলোচনা ও দ্বীনের আলোচনা করা দুরুহ হয়ে ওঠে। এ জন্যে ছাহাবা কেরামগণ যখন নামাজ পড়তেন একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন, নামাজের ছুরা কেরাত শিখতেন, নামাজের মধ্যে থেকে বাইরের লোকদের ছালাম দিতেন এবং তাদের ছালামের উত্তর দিতেন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামও নামাজ পড়া অবস্থায় নামাজের বাইরের লোকের ছালামের উত্তর দিতেন এবং ছালাম করতেন। মদীনা হিযরতের পর কিছুদিন পর্যন্ত এ অবস্থা চালু ছিল। এ ছিল ছাহাবাগণের নামাজ পড়া প্রথম অবস্থা।
হিযরতের কিছুকাল পরে ছুরা আ'রাফের ২০৪ আয়াত “ফাছ্ তামি-উ লাহু” নাজিল হলে নামাজের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে কথা- বার্তা বলা, ছালাম দেয়া, ছালামের জওয়াব নেয়া, হাঁচির জওয়াব দেয়া এ সকল বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে ছুরা বাকারার ২৩৮ নম্বর আয়াত ‘অকুম্ লিল্লাহি কামিতিন' নাজিল হলে বাইরের কোন জিনিস শোনা বা দেখা নামাজের মধ্যে এদিক সেদিক খেয়াল করা, এদিক সেদিক তাকানো এসব নিষেধ হয়ে যায়। এ নিষেধের পরে ছাহাবা কেরাম রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর শেখানো নামাজের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ পড়তে থাকেন কিন্তু কিছু মোনাফিক রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর শেখানো নিয়ম কানুন না মেনে নিজেদের খেয়াল খুশিমত নামাজ পড়তে থাকেন। ছুরা নেছা- ১৪২ আয়াতে তাদের নামাজ সম্পর্কে
[আরবী]
আয়াত নাজিল হয়। এ আয়াতে মুনাফিকদের নামাজের তিনটি অবস্থা বলা হয়েছে ।
মুনাফিদের এ নামাজ হল নামাজ পড়া। আল্লাহ তাআ'লা ছুরা নেছা ১৪০ আয়াতে মুনাফিক ও কাফিরদের একত্রিত করে জাহান্নামে শাস্তি দিবেন বলে উল্লেখ কেেছন। সুতরাং রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর শিখানো নামাজের নিয়ম কানুন না মেনে মুনাফিকদের মত নামাজ পড়াই হল নামাজ পড়া এবং এদের শাস্তি মুনাফিকদের মতই হবে।
তো যে নামাজের দ্বারা নামাজী নাজাত পাবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআ'লা ছুরা মু'মিনুনের ১ ও ২ আয়াতে এরশাদ করেছেন –
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ - الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ حَشِعُونَ
ঐ সমস্ত মু'মিনরা নাজাত পাবে যারা নামাজে খুশু করেছে।
রছুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নামাজের মধ্যে একব্যক্তিকে দাড়িতে হাত বুলাতে দেখে বললেন, এ ব্যক্তির ক্বলবে খুশু থাকলে তার শরীরেও তা প্রকাশ পেত। সকল ইমামের মতে নামাজের মধ্যে দাড়িতে হাত বুলানো মাকরুহ। সুতরাং নামাজ নষ্টকারী বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে নামাজের মধ্যের ফরজ, ওয়াজিব, ছুন্নাত ও মুস্তাহাব সকল আমল পালন করার সঙ্গে নামাজের মধ্যে ৯০টি মাকরুহ পরিত্যাগ করে নামাজ পড়া হল খুশু বা নাজাত পাওয়ার নামাজ।
আল্লাহ তাআ'লা ছুরা আনকাবুতের ৪৫নং আয়াতে এরশাদ করেছেন -
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى
عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ -
হে রাছুল ! অহির মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব এসেছে তা পড় আর নামাজ কায়েম কর নিশ্চয় নামাজ অসৎ কাজ-কর্ম থেকে বিরত রাখে । নিশ্চয় নামাজই উৎকৃষ্ট জিকির।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআ'লা নামাজ কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো-
إِنَّ الصَّلَواةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَ الْمُنْكَرِ
আয়াতের অর্থ কি ? রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বল্লেন-
مَنْ لَمْ تَنْهَهُ صَلَواتُهُ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَ الْمُنْكَرِ فَلَا صَلَوة لَهُ
যে ব্যক্তির নামাজ তাকে লজ্জাহীন খারাপ স্বভাব ও মন্দ কাজ-কর্ম থেকে বিরত না রাখে, তার নামাজ নামাজ-ই নয়।
হযরত ইবনে আব্বাছ ও ইবনে মাছউদ রাদিআল্লাহু আনহুমা বলেন- যার নামাজ তাকে সৎকাজে উৎসাহ দান এবং অসৎ কাজ-কর্ম থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য না করে তাঁর নামাজ তাকে আল্লাহ থেকে আরো দূরে সরিয়ে নেয়।
(তাফছিরে মাজহারী - ৭ম খন্ড- ২০৫ পৃঃ)
রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লা বলেছেন যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে ৪০দিন তাকবীরে উলার সঙ্গে নামাজ পড়বে, তার জন্যে দু'টি মুক্তি লেখা হবে। দোজখের শাস্তি হতে মুক্তি এবং নেফাকের অভিশাপ অর্থাৎ ১। মিথ্যা ২। আমানাতে খেয়ানাত ৩। ওয়াদা খেলাপ ও ৪। অশ্লীল গালি গালাজ থেকে মুক্তি।
(তিরমিজি, আততারগীব ১ম খন্ড- ২৬৩ পৃঃ)
উপরের কোরআনের আয়াত থেকে জানা যায়- নামাজ কায়েম করলে অসৎ স্বভাব, অসৎ চরিত্র দূর হয়ে সৎ চরিত্রে চরিত্রবান হবে এবং নামাজ কায়েমের প্রথম অবস্থাতেই মুনাফেকী অর্থাৎ মিথ্যা, আমানাতে খেয়ানাত, ওয়াদা খেলাপ ও অশ্লীল গালি গালাজ তার চরিত্র থেকে দূর হতে থাকলে তার নামাজ নামাজ কায়েমের দিকে যাচ্ছে এটা বোঝা যাবে।
মুমিনের ক্বলবের মধ্যে কৃপনতা ও অসৎ চরিত্র থাকতে পারেনা। মু'মিন যখন নামাজ কায়েম করে, উপরের হাদীছ অনুযায়ী এ দোষগুলি অর্থাৎ হিংসা, কৃপনতা, অসৎ চরিত্র এ সকল তার মধ্য থেকে দূর হয়ে যায় ।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর নামাজ শিক্ষা দানের পদ্ধতির ষষ্ট অবস্থার মধ্যে হযরত মু'আজ রাদিআল্লাহু আনহু এর হাদীছ থেকে জানা যায়-
যে আমল দ্বারা একমাত্র আল্লাহকে চায়নি এমন ব্যক্তির ইবাদাত আল্লাহ তাআ'লা কবুল না করে তার দিকে ফিরিয়ে দেন। (বিস্তারিত হাদীছ ৬১ পৃষ্টায় দেখুন)
নামাজ কায়েম হলে উপরোক্ত এ দোষগুলি হতে নামাজী মুক্তি পাবে। এসব দোষ নামাজ কায়েমের মাধ্যমে দূরীভূত হয়। যদি নামাজের দ্বারা উপরের দোষগুলি একের পর এক দূর হতে থাকে তাহলে আপনার নামাজ কায়েম হচ্ছে বলে মনে করবেন। আর তা না হলে তা মুনাফেকীর নামাজ বলে গণ্য হবে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২৭) নামাজ পড়ার দৃষ্টান্ত | (০২৯) নামাজ কায়েমের পথে বাধা ও তার প্রতিকার |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |