কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআ'লা বিরাশি জায়গায় নামাজের কথা বলেছেন। এর মধ্যে তিন জায়গায় নামাজ পড়া আর বাকী উনাশি জায়গায় নামাজ কায়েম করার কথা বর্ণনা করেছেন। ইছলামের পাচটি বুনিয়াদের দ্বিতীয় বুনিয়াদ হলো নামাজ কায়েম করা, নামাজ পড়া নয় ।
নামাজ পড়ার দৃষ্টান্ত – যেমনঃ কোন ছেলে চাকরীর উদ্দেশ্যে কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিল । পরীক্ষার সময় ছেলেটি জানতে পারল যে, একজন নামাজী ছেলেকে চাকরীতে নিয়োগ করা হবে। ছেলেটি আগে থেকেই অজু ও নামাজের নিয়ম কানুন জানত কিন্তু নামাজ পড়তো না । কর্মকর্তার মনোভাব জানতে পেরে সে নামাজের সময় হলে অজু করল। তারপর কর্মকর্তার পাশে দাড়িয়ে নামাজ পড়ল। ছেলেটির নামাজ পড়া দেখে কর্মকর্তা তাকে চাকরীতে নিয়োগ করলেন। ছেলেটির নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সকলে বলবেনঃ এ নামাজ তার চাকরীর নামাজ হয়েছে, আল্লাহর নামাজ হয়নি। নামাজ পড়ার পরও তার এ নামাজ চাকরীর নামাজ হলো কেন ?
উত্তরঃ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে তিনটি শরীর আছে। (১) আগুন, পানি, মাটি, বাতাস দিয়ে সৃষ্টি দেহ। কোরআন মাজীদে একে নফছ বলা হয়েছে। (২) রুহ বা আত্মা। (৩) ক্বলব বা মন। এই তিনের সমন্বয়ে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। এ কারণে রুহের প্রকাশস্থল মুখ দিয়ে ঈমানের স্বীকারোক্তি, ক্বলব বা মন দিয়ে বিশ্বাস এবং নফছ বা সমস্ত শরীর দিয়ে কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করাকেই পরিপূর্ণ ঈমান বলা হয়।
ঈমানের বিষয়বস্তু সমূহ যেমনঃ আল্লাহ, ফেরেশতা, কেতাব, রাছুল, তাকদীর, কেয়ামত, বেহেশত, দোযখ এগুলিকে যদি কেউ মুখে স্বীকার করে এবং শরীর দিয়ে আমল করে কিন্তু ক্বলব বা অন্তরে বিশ্বাস না করে তবে কোরআন মাজীদে তাকে মুনাফিক বলা হয়েছে। যদি কেউ এগুলিকে মুখে স্বীকার করে এবং অন্তরে বিশ্বাস করে কিন্তু শরীর দিয়ে আমল না করে তবে তাকে ফাছেক বলা হয়েছে।
আর যদি কেউ এ তিনটি দিয়েই আমল করে অর্থাৎ অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও শরীর দিয়ে প্রকাশ, তবে তাকে বলা হয় পূর্ণ মুমিন ।
ভর্তি পরীক্ষায় ছেলেটি নামাজের মধ্যে নিজের রুহের প্রকাশ স্থল জবান এবং নফছ বা বাহ্যিক শরীর দিয়ে নামাজের বিষয়গুলি পালন করেছে। কিন্তু নামাজের সময় তার মন আল্লাহর দিকে ছিল না। এ কারণে কোরআন হাদীছ অনুযায়ী তার নামাজ পড়া হয়েছে, নামাজ কায়েম হয়নি ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২৬) মুনাফিকের নামাজ | (০২৮) নামাজ পড়া ও নামাজ কায়েমের মধ্যে পার্থক্য |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |