রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন
.... فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسٍ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ وَأَمْرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ ، أَوْلاَ هُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا - وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصٍ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ ، فَقَالَ هَذِهِ دَارِئ وَهَذَا عَمَلِي ، وَادٍ إِلَيَّ فَكَانَ يَعْمَلُ وَ يُوَدِّى إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ ، فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُوْنَ عَبْدُهُ كَذَالِكَ، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ ، فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلَا تَلْتَفِتُوْا ، فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلَاتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ -
আল্লাহ তাআ’লা আমাকে পাচটি জিনিষের হুকুম করেছেন যেন আমি সেগুলি আমল করি এবং তোমাদেরকেও আমল করার আদেশ করি। তার মধ্যে উত্তমটি হলো- তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং এ ইবাদাতের মধ্যে কোন প্রকার শিরক করবে না। আর আল্লাহর সাথে শিরক করার দৃষ্টান্তÍ ঐ ব্যক্তির মত যে তার নিজ মূলধনের সোনা অথবা রূপা দিয়ে একটি গোলাম কিনল। এরপর তাকে বললঃ ‘এ আমার বাড়ী এবং এই আমার কাজ’। তুমি আমার হয়ে কাজ করো।
সে তার মালিকের কাজ করতে থাকলো এবং সে কাজের সাথে অন্য মালিকের কাজও করতে থাকল। তোমাদের মধ্যে কেউ কি রাজী হবে যে তার গোলাম এ ধরনের কাজ করুক ? নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা তোমাদেরকে নামাজের হুকু ম করেছেন। যখন তোমরা নামাজ আদায় করবে তখন এদিক সেদিক খেয়াল করো না। কেননা নামাজের মধ্যে বান্দা যতক্ষন এদিক সেদিক খেয়াল না করে ততক্ষন আল্লাহ নিজের চেহারাকে বান্দার চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন।
— আততারগীব ১ম জেলদ- ৩৬৭ পৃঃ
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ اللهِ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ قَامَ
في الصَّلاةِ فَالْتَفَتَ رَدَّ اللهُ عَلَيْهِ صَلَاتَهُ -
হযরত আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন- আমি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে কেউ নামাজে দাড়ালো এরপর এদিক সেদিক খেয়াল করে লা আল্লাহ তাআ’লা তার নামাজকে তার উপর নিক্ষেপ করেন।
— আততারগীব ১ম-৩৭২ পৃঃ
আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেছেন-
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا ، وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا .
আর যারা তার রবের সঙ্গে দেখা করার আশা করে তারা যেন আমলে ছলেহ করে আর তার রবের ইবাদাতের মধ্যে অন্য কাউকে শরীক না করে।
— ছুরা কাহাফ-১১০
আল্লাহ তাআ’লা আরও এরশাদ করেছেন-
أَقِمِ الصَّلاةَ لِذِكْرِى .
আমার স্মরণের জন্যে নামাজ কায়েম করো।
— ছুরা ত্ব-হা-১৪
নামাজের মধ্যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু মনে করা শিরক। হাদীছ অনুযায়ী এ শিরককে ‘শিরকে আখফা’ বলে। এবনে গানাম রাদিআল্লাহু আনহু বলেন-
আমি ও আবু দারদা জাবিয়া নামক মছজিদে ওবাদা ইবনে ছামেত এর সঙ্গে দেখা করলাম। হঠাৎ শাদ্দাদ এবনে আওছ এবং আওছ এবনে মালেক এসে আমাদের কাছে বসলেন।
এরপর শাদ্দাদ বললেন- হে লোক সকল, আমি তোমাদের জন্যে যা সবচেয়ে বেশী ভয় করছি তা হলো গুপ্ত শাহওয়াত ও শেরেক সম্পর্কে যা আমি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বলতে শুনেছি।
তখন ওবাদা ইবনি ছামেত ও আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহু বললেন- তুমি কি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বলতে শোননি, নিশ্চয় শয়তান এই দেশে তার বন্দেগী করান হতে নিরাশ হয়ে গেছে। গোপন শাহওয়াত তো আমরা জানি, তা হলো দুনিয়ায় নারীদের প্রতি গোপন কামভাব ও পার্থিব বিষয়ের প্রতি মায়া-মোহ। কিন্তু হে শাদ্দাদ ! তুমি কোন শিরকের জন্যে বেশী ভয় করছো ?
তখন শাদ্দাদ বললেন, তোমাদের কি ধারনা যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্যে নামাজ পড়লো অথবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে রোজা রাখলো অথবা লোক দেখানোর জন্যে দান করলো, সে তো শিরক করলো। সকলে বললো, হাঁ, আল্লাহর কছম ! যদি কোন লোক কারো সন্তুষ্টির জন্যে নামাজ পড়ে, অথবা রোজা রাখে অথবা দান করে অবশ্যই সে শিরক করলো। তখন শাদ্দাদ বললো আমি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বলতে শুনেছি-
مَنْ صَلَّى يُرائِي فَقَدْ أَشْرَكَ وَمَنْ صَامَ يُرَائِي فَقَدْ أَشْرَكَ -
وَمَنْ تَصَدَّقَ يُرائِي فَقَدْ أَشْرَكَ -
‘যে লোক দেখান নামাজ পড়লো সে শিরক করলো, যে লোক দেখান রোজা রাখলো সেও শিরক করলো, যে লোক দেখান দান করলো সেও শিরক করলো’।
তখন আওফ ইবনি মালেক বললেন- তারা কি চেষ্টা করেনা যে তাদের সকল আমল আল্লাহর উদ্দেশ্যে হোক। তা হলে তার আল্লাহর জন্যের আমল কবুল করা হবে আর শিরক যুক্ত আমল বাদ দেয়া হবে। একথা শুনে শাদ্দাদ বললেন-নিশ্চয় আমি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বলতে শুনেছি
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ يَقُولُ - أَنَا خَيْرٌ قَسِيْمٍ لِمَنْ أَشْرَكَ بِيْ - مَنْ أَشْرَكَ بِي شَيْئًا فَإِنَّ حَشْدَةَ عَمَلِهِ قَلِيْلُهُ وَكَثِيرُهُ لِشَرِيْكِهِ الَّذِي أَشْرَكَ به - وَاَنَا عَنْهُ غَنِئٌّ
নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন- যে আমার সাথে শিরক করে আমি তার উত্তম প্রতিফল দানকারী। যে আমার সঙ্গে কোন প্রকার শিরক করলো নিশ্চয় তার সকল আমল, তা কম হোক বা বেশী হোক তার শরীকের জন্যে হবে যার জন্য সে আমল করেছে এবং আমি ঐ আমলের মুখাপেক্ষী নই।
— আহমাদ-হাদীছ নং ১৭১৪৫
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন-
قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم - الشِّرْكُ فِي أُمَّتِي أَخْفَى مِنْ دَبِيْبِ النَّمْلَةِ الَّتِي تَدُبُّ فِي لَيْلَةٍ مُظْلِمَةٍ عَلَى صَحْرَةٍ سَوْدَاءَ .
আমার উম্মতের মধ্যে আখফা শিরক অন্ধকার রাত্রিতে কালো পাথরের উপর পিপড়ার সারির চলার শব্দ হতেও অধিক নিঃশব্দে প্রবেশ করে।
নামাজের মধ্যে কথা-বার্তা, ছালাম করা, জওয়াব দেয়া প্রভৃতি নিষেধের পর সবশেষে নামাজের মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য চিন্তা-ভাবনা বা অন্য কিছু খেয়াল করা নিষেধ করেছেন।
رُوِيَ عَنْ جَابِرٍ عَنْهُ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : إِذَا قَامَ الرَّجُلُ فِي الصَّلاَةِ أَقْبَلَ اللَّهُ عَلَيْهِ بِوَجْهِهِ ، فَإِذَا الْتَفَتَ قَالَ : يَا ابْنَ أَدَمَ إِلَى مَنْ تَلْتَفِتْ ؟ إِلى مَنْ هُوَ خَيْرُ لَّكَ مِنِّي ، أَقِبِلْ إِلَيَّ ، فَإِذَا الْتَفَتَ الثَّانِيَّةَ قَالَ مِثْلَ ذَلِكَ ، فَإِذَ الْتَفَتَ الثَّالِثَةَ صَرَفَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى وَجْهَهُ عَنْهُ -
হযরত জাবের রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেন-
যখন কেউ নামাজে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তাআ’লা নিজ চেহারাকে তার দিকে ফিরান। যখন সে এদিক সেদিক খেয়াল করে তখন আল্লাহ তাআ’লা বলেন- হে আদম সন্তান ! তুমি কোন দিকে খেয়াল করছো ? তুমি যা খেয়াল করছো, সে কি আমার চেয়ে ভাল ? তুমি আমার দিকে খেয়াল করো। যদি সে দ্বিতীয় বার খেয়াল করে তবে আল্লাহ তাআ’লা অনুরূপ বলেন। যদি সে তৃতীয় বার খেয়াল করে তবে আল্লাহ তাআ’লা তার দিক থেকে নিজ চেহারা ফিরিয়ে নেন। বাজ্জার এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
— আততারগীব ১ম ৩৭০ পৃঃ
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১১) নামাজ মু’মিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্যকারী | (০১৩) নামাজী কোন নামাজে জান্নাতে যাবে |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |