কোন কোন ইমাম ‘নামাজের ওয়াক্ত চেনা’ ফরজ উল্লেখ করে নামাজের সপ্তম আহকাম বলে গণ্য করেছেন। শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামাজ পড়লে তা আল্লাহ কবুল করেন না বরং গোনাহ হয়। আবার ইচ্ছা করে ওয়াক্তের পরে নামাজ পড়লেও গোনাহ হয়। নামাজের ওয়াক্ত চেনা নামাজীর জন্য ওয়াজিব। নামাজ শুরু করার আগে নামাজের অন্যান্য আহকাম পালনের মতো নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন। রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মতগণের উপর আল্লাহ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যথা
১। ফজর
২। জোহর
৩। আছর
৪। মাগরিব ও
৫। এশা
২৮
ওয়াক্তের আগে নামাজ পড়লে সে নামাজ আদায় হবে না। ওয়াক্ত হওয়ার পরে পুনরায় পড়তে হবে।
ছোবহে ছাদেক হলেই ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়। বেলা উঠার আগে পূর্ব আকাশ জুড়ে সাদা আলোর রশ্নি দেখা যায়। এ অবস্থাকে ছোবহে ছাদেক বলে। এ অবস্থার আগে পূর্ব আকাশে লম্বাভাবে সাদা রশ্মি দেখা যায়। পাঁচ মিনিট পরেই তা আবার অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। এ সময়কে ছোবহে কাজেব বা মিথ্যা সকাল বলে। এ সময় ফজরের ওয়াক্ত না হওয়ার কারণে খাওয়া পেওয়া করলে রোজার কোন অসুবিধা হয় না। পূর্ব আকাশে সূর্যের কিনারা দেখা গেলেই ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।
আলো নিভিয়ে দিলে ছেজদার জায়গা দেখা গেলে ফজরের নামাজ শুরু করতে হবে। (মোস্তাহাব )
ফজরের ফরজ নামাজে ছুরা ফাতেহার পরে তেওয়ালে মোফাচ্ছাল অর্থাৎ ছুরা হুজুরাত থেকে ছুরা বুরুজ পর্যন্ত ৩৬টি ছুরার মধ্যে হতে দু রাকাতে যে কোন দু’টি ছুরা পড়া ছুন্নাত। যদি নামাজ ফাছেদ হয়ে যায় তবে যেন সূর্য ওঠার আগে দু রাকাতে উক্ত পরিমাণ ছুরা পড়ে নামাজ শেষ করতে পারে এমন সময়ে জামাত শুরু করবে। (ছুন্নাত)
ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলে, কাজের ব্যস্ততা থাকলে অথবা মুছাফির হলে প্রয়োজনে ছোট ছুরা পড়তে পারেন।
বেলা ওঠা থেকে ২৩মিনিট সময় পর্যন্ত নামাজ পড়া হারাম।
ফজরের ফরজ নামাজ পড়ার পর বেলা ওঠা পর্যন্ত সময়ে ছুন্নাত ও নফল নামাজ পড়া নিষেধ।
ফজরের ফরজ নামাজের আগে দু’রাকাত ছুন্নাত ব্যতীত অন্য কোন নফল পড়বেন না। পড়া মাকরুহ।
ফজরের ছুন্নাত আগে না পড়ে থাকলে বেলা ওঠার ২৩মিনিট পরে তা পড়ে নিতে পারেন।
ফজরের ফরজ নামাজের দ্বিতীয় রাকাত অপেক্ষা প্রথম রাকাতে কেরাত লম্বা করা সকল ইমামের মতে ছুন্নাত।
ফজরের নামাজ কাযা হলে ফজরের ছুন্নাত নামাজসহ ফরজ আদায় করবে।
দুপুর বেলা সূর্য যখন মাথার উপর আসে তখন একটি কাঠী মাটির উপর সোজাভাবে রাখলে যে ছায়া পড়ে ঐ ছায়াকে ছায়ায়ে আছলী বা প্রকৃত ছায়া বলে। যখন ঐ ছায়া হেলে পূর্ব দিকে যায় তখনই জোহর ওয়াক্ত শুরু হয়। উক্ত কাঠীর প্রকৃত ছায়া বাদে দুই কাঠী পরিমাণ ছায়া হলে জোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়। কোন কোন ইমাম প্রকৃত ছায়া বাদে এক কাঠী পরিমাণ ছায়ার মধ্যে জোহরের নামাজ আদায় করতে বলেছেন।
গরমকালে জোহরের নামাজ দেরী করে পড়বে।
শীতকালে প্রথম ওয়াক্তে পড়বে। (মোস্তাহাব)
জোহরের ফরজ নামাজে তেওয়ালে মোফাচ্ছাল অর্থাৎ ছুরা হুজুরাত হতে ছুরা বুরুজ পর্যন্ত ৩৬টি ছুরার মধ্যে হতে যে কোন দুটি ছুরা দু রাকাতে পড়া ছুন্নাত।
জোহর, মাগরিব ও এশার ফরজ নামাজের ছালাম ফিরানোর পরে সেখানে বসে থাকা মাকরুহ। বরং সাথে সাথে উঠে ছুন্নাত নামাজ আদায় করবে। যেখানে ফরজ নামাজ পড়েছে তার আশে পাশে জায়গা থাকলে সেখানে সরে গিয়ে ছুন্নাত পড়বে। রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ঘরে যেয়ে ছুন্নাত পড়তে বলেছেন।
যে কোন কাঠীর ছায়ায়ে আছলী বা প্রকৃত ছায়া বাদে উক্ত কাঠীর দুই কাঠী পরিমাণ ছায়ার বেশী হলেই আছর ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে।
আছরের নামাজে আওছাতে মোফাচ্ছাল অর্থাৎ ছুরা বুরুজ হতে ছুরা বাইয়েনাহ পর্যন্ত ১৩টি ছুরার মধ্যে যে কোন দুটি ছুরা দু’রাকাতে পড়া ছুন্নাত।
বেলা ডুবার আগে সূর্যের রং লাল হলে নামাজ পড়া মাকরুহ। এ সময়ে উমরি কাযা, নফল নামাজ ও তেলাওয়াতের ছেজদা করা মাকরুহ। বেলা ডোবার ২০মিনিট আগে সূর্যের রং লাল হয়।
বেলা ডোবার সময় কেবলমাত্র ঐ দিনকার আছরের নামাজ পড়লে তা আদায় হবে কিন্তু ঐ সময় পর্যন্ত দেরী করার কারণে গোনাহগার হবে।
সূর্য ডোবার পর হতে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়। পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার পর যে লাল রং প্রকাশ পায় তা মিলিয়ে যাওয়ার পর সাদা রং প্রকাশ পায়। উক্ত সাদা রং মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে।
মাগরিবের ফরজ নামাজে ছুরা বাইয়েনাহ হতে ছুরা নাছ পর্যন্ত মোট ১৭টি ছুরার যে কোন দুটি ছুরা দু’রাকাতে পড়া ছুন্নাত।
মাগরিবের আযানের পরে অন্ততঃ ৫ মিনিট দেরী করে জামাত শুরু করবে যেন আযান শুনে মুছল্লীরা অজু করে জামাতে হাজির হয়ে তাকবীরে তাহরীমা বা প্রথম তাকবীর ধরতে পারে।
মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর পরই এশা এবং বেতেরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ছোবহে ছাদেক পর্যন্ত বাকী থাকে। এশা এবং বেতেরের একই ওয়াক্ত। তবে এশার নামাজ না পড়ে বেতের পড়লে তা আদায় হবে না।
এশার ফরজ নামাজে আওছাতে মোফাচ্ছাল অর্থাৎ ছুরা বুরুজ হতে ছুরা বাইয়েনাহ পর্যন্ত ১৩টি ছুরার মধ্যে যেকোন দু’টি ছুরা দু’রাকাতে পড়া ছুন্নাত
জরুরী কাজ থাকলে অথবা রেল, বাস, লঞ্চ, ষ্টিমার ও ট্রেনে ভ্রমনের সময় প্রয়োজনে ছোট ছুরা পড়তে পারেন।