ইছলামের দ্বিতীয় বুনিয়াদ বা মূল ভিত্তি হলো ছলাত বা নামাজ । রাছুলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন –
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ لله عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الصَّلَوةُ عِمَادُ الدِّيْنِ، وَفِيْهَا عَشْرُ خِصَالٍ - زَيَّنُ الْوَجْهِ ، وَنُوْرُ الْقَلْبِ ، وَرَاحَتُ الْبَدَنِ وَأَنِسُ فِي الْقَبْرِ وَمَنْزِلُ الرَّحْمَةِ وَمِفْتَاحُ السَّمَاءِ وَثَقْلُ الْمِيْزَانِ ، وَمَرْضَاتُ الرَّبِّ وَتَمَنُ الْجَنَّةِ ، وَحِجَابٌ مِنْ النَّارِ وَمَنْ أَقَامَهَا فَقَدْ أَقَامَ الدِّيْنَ وَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ هَدَمَ الدِّيْنَ -
নামাজ দ্বীনের খুটি। এর মধ্যে দশটি গুন নিহিত। (১) নামাজ (২) ক্বলবের নূর (৩) দেহের শান্তি (৪) কবরের সাথী (৫) রহমত বর্ষনের স্থান (৬) আছমানের চাবি (৭) মিজানের আল্লাহর সন্তুষ্টি (৯) জান্নাতের পুজি (১০) জাহান্নামের পরদা। যে নামাজকে কায়েম করলো সে দ্বীনকে কায়েম করলো। আর যে নামাজকে ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করলো ।
(মোনাব্বেহাত - ১৩৬ পৃঃ)
وَقَالَ عُثْمَانُ له - مَنْ حَفِظَ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ لِوَقْتِهَا وَدَاوَمَ عَلَيْهَا أَكْرَمَهُ اللَّهُ بِتِسْعِ كَرَامَاتٍ أَوَّلُهَا أَنْ يُحِبَّهُ اللَّهُ وَيَكُوْنَ بَدَنُهُ صَحِيْحًا وَتَحْرِسَهُ الْمَلَائِكَةُ وَ تَنْزِلَ الْبَرَكَةُ فِي دَارِهِ وَ يَظْهَرَ عَلَى وَجْهِهِ سِيْمَا الصَّالِحِيْنَ - وَيُلَتِنَ اللهُ قَلْبَهُ وَيَمرُّ عَلَى الصِّرَاطِ كَالْبَرْقِ الأَمِعِ وَيُنْجِيَهُ اللَّهُ مِنَ النَّارِ وَيُنْزِلَهُ اللَّهُ فِي جَوَارِ الَّذِينَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
হযরত ওছমান রাদিআল্লাহু আনহু বলেন যে কেউ সঠিক সময় অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হেফাজাত করবে আল্লাহ তাআ'লা তাকে ৯টি মর্যাদা দান করে সম্মানিত করবেন। সে গুনগুলি হলো-
- ১। আল্লাহ তাআ'লা তাকে মুহাব্বত করবেন।
- ২। তার শরীরকে সুস্থ্য রাখবেন।
- ৩। ফেরেশতাগণ তার হেফাজাত করবেন।
- ৪ । আল্লাহ তার ঘরে বরকত নাযিল করবেন।
- ৫। তার চেহারায় নেক কারের চিহ্ন প্রকাশ পাবে ।
- ৬। আল্লাহ তার ক্বলবকে নরম করে দিবেন।
- ৭। বিদুৎগতিতে তাকে পুল ছিরাত পার করে দিবেন।
- ৮ । তাকে জাহান্নাম হতে নাযাত দিবেন ।
- ৯। কেয়ামতের দিন যাদের কোন ভয় ভীতি ও দুশ্চিন্তা থাকবেনা এমন লোকদেরকে তার সাথী বানিয়ে দিবেন।
(মোনাব্বাহাত ১১৫পৃঃ)
مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَحَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ – وَمَنْ لَمْ يُحَافِظُ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُوْرٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ ، وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُوْنَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَ أُيِّ بن خَلْفٍ
যে নামাজের হেফাজাত করলো সে নামাজ তার জন্যে নূর, দলীল ও কেয়ামতে নাজাতের অছিলা হবে। আর যে এ নামাজের হেফাজাত করলো না তার জন্যে নামাজ নূর, দলীল ও নাজাতের অছিলা হবে না। আর কারুন, ফেরাউন, হামান, ও উবাই ইবনে খালফ-এর সঙ্গে তার হাশর হবে।
(আহমাদ, বায়হাকী, মেশকাত - ৫৩১)
রাছুলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন -
قَالَ رَسُولُ اللهِ الله اَوَّلُ ما يُحَاسَبُ بِهِ العَبدُ يَومَ الْقِيامَةِ الصَّلوةُ فَإِنْ صَلُحَتْ صَلُحَ سَائِرُ عَمَلِهِ وَإِنْ فَسَدَتْ فَسَدَ سَائِرُ عَمَلِهِ . رَوَاهُ الطَّبَرَانِي فِي الأَوْسَطِ .
কেয়ামতের বিচার দিনে সর্ব প্রথম নামাজের হিসেব নেয়া হবে। যদি নামাজ সঠিক ও শুদ্ধ হয় তবে এ নামাজের কারণে তার অন্যান্য ত্রুটিপূর্ণ আমল কবুল করা হবে। আর নামাজ সঠিক ও শুদ্ধ না হলে অন্য যত ভাল আমলই থাকুক না কেন এ ত্রুটিপূর্ণ নামাজের কারণে তা কবুল করা হবে না।
রাছুলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন -
قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُرُوا أَوْلادَكُم بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ وَفَرِّقُوا سِنِيْنَ وَاضْرِبُوْ هُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشَرِ سِنِيْنَ بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ- رواه ابو داود
যখন তোমাদের সন্তানের বয়স সাত বছর হয় তখন থেকে তাকে নামাজ পড়ার হুকুম করো। আর দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে মারপিঠ করো। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও।
(আবু দাউদ মেশকাত ৫২৬)
জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, বালেগের উপর নামাজ ফরজ।
ক) বালেগ বা বয়োঃপ্রাপ্ত হওয়ার চিহ্ন হলোঃ গোফ দাড়ি ওঠা, নাভির নিচে চুল ওঠা, স্বপ্নদোষ অর্থাৎ স্বপ্নের মধ্যে অথবা কামভাবে ধাতু বের হওয়া। এর যে কোন একটা প্রকাশ পেলে বালেগ হিসেবে ধরতে হবে ।
মেয়েদের যোনী অর্থাৎ পেশাবের মুখের নিচের অঙ্গ দিয়ে রক্তস্রাব হলে অথবা স্বপ্নদোষ হলে বা কামভাবের সঙ্গে বীর্য বা ধাতু বের হলে বালেগা বা বয়োপ্রাপ্তা হিসেবে গন্য করতে হবে। বালেগা হলে স্তন বড় হয়, নাভির নিচে পশম ওঠে। মেয়েদের এ পশম নামাজ কাটতে নেই বরং উঠিয়ে ফেলতে হয়। উঠাতে কষ্ট হলে, বাজারে এক প্রকার লোম নাশক লোশন অথবা লোমনাশক জেলী কিনতে পাওয়া যায় তা ব্যবহার করে উঠিয়ে ফেলতে হবে। ৪০ দিনের মধ্যে না উঠিয়ে ফেললে নামাজ কবুল হবে না। বগলের লোমও উঠিয়ে ফেলতে হয়। পশম কাটলে ঘন ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে কষ্ট পেতে হয় ।
নামাজ শুরু করার আগে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখুন। ক) নামাজের আহকাম অর্থাৎ ১। শরীর পাক ২। কাপড় পাক ৩। জায়গা পাক ৪ । ছতর ঢাকা ৫ । কেবলা মুখি হওয়া ৬। নিয়েত করা এবং ওয়াক্ত চেনার নিয়ম কানুনগুলি পড়ে সে অনুযায়ী আপনার আহকামগুলি ঠিক আছে কি না ভালভাবে দেখে নিন। আহকামগুলির কোন একটা সঠিকভাবে পালন না হলে নামাজ সঠিক হবে না ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫৪) আযান | (০৫৬) নামাজের শ্রেনী বিভাগ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |