ফরজঃ আল্লাহ তাআ'লা কোরআন মাজীদে যে নামাজের হুকুম করেছেন তা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়। ফরজ নামাজ অস্বীকার করলে অস্বীকারকারী কাফির হবে। ইচ্ছা বা অবহেলা করে এ নামাজ ত্যাগ করলে কাফির হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হঠকারীতা বা তুচ্ছ জেনে ত্যাগ করলে কাফির হবে। ইচ্ছা করে এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় না করলে ৮০হোকবা শাস্তি হবে। ইচ্ছা করে এক ওয়াক্তের নামাজ অন্য ওয়াক্তে আদায় করলে এর জন্যে ও এক হোকবা বা ৮৪ হাজার ৪০০ বছর শাস্তি ভোগ করবে। সে ফাছেক হিসেবে গণ্য হবে।
ফরজ নামাজ ১৭ রাকাত
ওয়াজেবঃ আল্লাহ তাআ'লা যে নামাজের হুকুম কোরআন মাজীদে দেননি। বরং রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি অছাল্লামকে হুকুম করার কারণে তিনি ছাহাবাগণকে আদায় করতে বলেছেন। যেমন- বিতরের নামাজ। এ নামাজ কাজা হলে তার কাজা আদায় করতে রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি অছাল্লাম নিৰ্দ্দেশ দিয়েছেন। (মেশকাত- ১১৯৯)
ছুন্নাতে মুআককাদাহঃ যে নামাজ রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি অছাল্লাম সব সময় আদায় করেছেন। কখনো ছেড়ে দেননি। কখনো ছুটে গেলে তার কাজা আদায় করেছেন। এ নামাজ ১২ রাকাত
এ ব্যতীত রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি অছাল্লাম বিতর নামাজ বাদ বসে দু'রাকাত নামাজ পড়তেন। এ নামাজ রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি অছাল্লাম বসে পড়েছেন ও মা আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা কে বসে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। মা আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বসে পড়েছেন। এ দু'রাকাত নামাজ পড়া ছুন্নাত এবং বসে পড়াও ছুন্নাত । (মেশকাত ১১৮৮–১২১১–১২১২-১২১৩-১২১৪ ) (এ ব্যতীত ইবনু মাজা বাবুল বিতর দেখুন)
ছুন্নাতে গায়ের মুআক্কাদাহ বা নফলঃ যে সকল নামাজ রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি অছাল্লাম সব সময় পড়েননি বরং কখনো কখনো পড়েছেন এ সকল নামাজকে ছুন্নাতে জাওয়ায়েদ বা নফল বলা হয়। তাহাজ্জদ, চাশত, এশরাক, আওয়াবিন প্রভৃতি নফল নামাজের মধ্যে গণ্য। ফরজ নামাজ পুর্ণরূপে করার পর নফল নামাজ পড়লে আল্লাহ তাআ'লার নৈকট্য লাভ হয়। নফল নামাজ পড়লে ছাওয়াব হয় আর না পড়লে গোনাহ হয় না । রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর অনুসরণে নফল নামাজ সব সময় পড়তে নাই। বরং মাঝে মধ্যে ছেড়ে দিতে হয়।
১) ফরজঃ নামাজের মধ্যে যে আমল করা অবশ্য কর্তব্য। ইচ্ছায় অথবা ভুলে আমল না করলে অথবা আমলের ত্রুটি করলে নামাজই হবে না। নামাজের মধ্যের ফরজ আমলকে রোকন বলা হয়। যেমনঃ ১। তাকবীরে তাহরীমা ২। কেয়াম ৩। কেরাত ৪। রুকু ৫। ছেজদা ৬। কায়েদায়ে আখিরা ও ৭। খুরুজ বি ছুনয়িহি। অনেক ইমাম একে ওয়াজেব বলেছেন ।
ওয়াজিবঃ নামাজের মধ্যে যে আমল করা অবশ্য কর্তব্য। ভুলে এ আমল না করলে ছোহ ছেজদাহ অর্থাৎ ভুলের ছেজদা করতে হয়। এ আমল মনে থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করে আমল না করলে নামাজই হবে না। ভুলের ছেজদা করলেও ক্ষতি পূরণ হবে না বরং এ নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
লক্ষ্য রাখুনঃ ওয়াজিবের হুকুম ফরজের মতই। পার্থক্য হলো ফরজ আমল ছুটে গেলে বা আমলে ত্রুটি হলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। আর ওয়াজেব আমল ভুলে আদায় না করলে ভুলের ছেজদা দিলে নামাজ আদায় হবে কিন্তু ইচ্ছা করে বাদ দিলে ফরজ রোকনের মতো নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
ছুন্নাতঃ ফরজ ও ওয়াজেব আমল ছাড়া নামাজের মধ্যে যে আমলগুলি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম সব সময় করেছেন। কোন অবস্থায় বাদ দেননি। এ আমলগুলি বাদ দিলে নামাজ হবে কিন্তু পরিপূর্ণ হবে না। এ আমল বাদ গেলে ছোহ বা আদায় ভুলের ছেজদা দেয়া লাগবে না। লবন ছাড়া তরকারী রান্না করলে যেমন স্বাদবিহীন হয় ছুন্নাত আমল ছাড়া নামাজ পড়লে তেমন হবে। মুস্তাহাব ঃ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম নামাজ পড়ার সময় মাঝে মধ্যে আমল করতেন। এ আমল করলে ছওয়াব আছে কিন্তু না করলে গোনাহ হয় না ।
মাকরুহঃ নামাজের মধ্যে যে আমলগুলি আদব শিষ্ঠাচারের খেলাফ, সেগুলি মাকরুহ। একই রোকনের মধ্যে এক কাজ তিনবার করলে অথবা বিভিন্ন ধরনের তিনটি মাকরুহ আমল করলে নামাজ ফাছেদ বা নষ্ট হয়ে যায়। এ নামাজ পুনরায় পড়তে হয়। দু একটা আমল করলে নামাজ মাকরুহ হয়ে যায়। নামাজের মধ্যের ফরজ, ওয়াজেব, ছুন্নাত ও মুস্তাহাব আমলগুলি সঠিকভাবে আদায়ের সঙ্গে মাকরুহ আমলগুলি ত্যাগ করলে তা হবে খুশুর নামাজ। এ খুশুর নামাজ আদায় করলে নামাজী নাজাত পাবে বলে আল্লাহ তাআ'লা কোরআন মাজীদে এরশাদ করেছেন। নামাজের মধ্যে ৮৭টি মাকরুহ আমল আছে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৫৫) নামাজ | (০৫৭) পাঞ্জেগানা অথবা মছজিদে প্রবেশের নিয়ম |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |