قَالَ رَسُولُ الله لا يُغْفَرُ لِلْمُوءَذِنِ مُنْتَهَى آذَانِهِ وَيَسْتَغْفِرُ لَهُ كُلُّ رَطَبٍ وَيَابِسٍ سَمِعَهُ – روا هـ احمد
আল্লাহর রাছুল বলেছেন আযান শেষ হওয়ার আগেই মুআজ্জিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর আযান শ্রবনকারী প্রত্যেক ভিজা ও শুকনা বস্তু তার জন্যে মাগফিরাত কামনা করতে থাকে ।
(আহমাদ, আততারগীব ১ম ১৭৫)
১। নামাজের ওয়াক্ত শুরু হলেই মছজিদে অথবা বাড়ীতে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য আযান দিন। (আযান দেয়া ছুন্নাতে মুয়াক্কাদা । অনেক ইমাম ওয়াজিব বলেছেন।
২। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও জুমার নামাজের জন্য কেবলমাত্র আযান ও ইকামত দিন ।
৩। ছুন্নাত, বেতের, নফল, তারাবীহ, জানাযা ও দুই ঈদের নামাজের জন্য আযান ও ইকামত দেবেন না।
৪। মেয়েলোকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজে এবং অন্য যে কোন নামাজের জন্যে আযান ও ইকামত দিবেন না। দিলে গোনাহগার হবেন। কারণ মেয়েদের নামাজের জন্যে আযান ও ইকামত নেই ।
৫। মছজিদে আযান ইকামত ছাড়া ফরজ নামাজ পড়া মাকরুহ।
৬। মছজিদ ব্যতীত অন্য যে কোন জায়গায় বিনা আযানে জামাত করে নামাজ পড়লে মাকরুহ হবে না। ইকামত না দিলে মাকরুহ হবে।
৭। ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দেয়া জায়েজ নেই। ওয়াক্তের আগে আযান দিলে ওয়াক্তের পরে পুনরায় আযান দিতে হবে। এ কারণে ধর্মভীরু, নেককার, মুত্তাকী, নামাজ সম্পর্কে আলেম, কেবলা ও নামাজের ওয়াক্ত চেনে এমন লোকই আযান দেয়ার উপযুক্ত।
৮। অবুঝ নাবালেগ ও পাগলের আযান জায়েজ নেই। এরা আযান দিলে পুনরায় আযান দিতে হবে।
৯। নেশাগ্রস্থ ও মেয়েলোকের আযান দেয়া মাকরুহ। আযান দিলে পুনরায় আযান দেয়া মোস্তাহাব ।
১০। ফাছেকের আযান দেয়া মাকরুহ। দিলে পুনরায় আযান দেয়া লাগবে না ।
১১। যার গোছল ফরজ হয়েছে তার আযান ও ইকামত দেয়া মাকরুহ।
১২। মুছাফির একা নামাজ পড়াকালে আযান দেয়া সম্ভব হলে আযান দেবে। কিন্তু ইকামত না দিলে নামাজ মাকরুহ হবে।
১৩। আযানের সময় দুহাতের শাহাদাত আঙ্গুল দুকানের ছিদ্রের মধ্যে রাখুন।
১৪। কেবলা মুখী হয়ে আযান দিন। অন্যদিক ফিরে আযান দিলে আযান শুদ্ধ হবে না।
১৫। ছেলে মেয়ে ভুমিষ্ট হলে ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়া ছুন্নাত। মেয়েলোক এ আযান ও ইকামত দিলে মাকরুহ হবে না। কারণ এ ফরজ ইবাদাত নয়। এ আযান উচ্চস্বরে দেবে না । কেবল ভুমিষ্টকে শোনাবে।
১৬। রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম ও ছাহাবাগণের সময়ে মুয়াজ্জিনের আযানের আগে ও পরে ছুরা কেরাত বা দোয়া দরুদ পড়ার কোন রেওয়াজ ছিল না। আগে-পরে পড়া বেদআত । আযান ব্যতীত অন্য কোন কিছু পড়লে ছুন্নাতের খেলাপকারী ও গোনাহগার হ'বে ।
ক) আযান দেয়ার সময় আল্লাহু র আ ও আকবার এর বা লম্বা করে বলবেন না। বললে আযান শুদ্ধ হবে না ।
খ) আশ হাদু আল্লা র মধ্যে লা তিন আলিফ পরিমান অর্থাৎ ইল্লাল্লার লা এর টানের চাইতে তিন গুন বেশী টেনে পড়ুন ।
গ) আশ হাদু আন্নার আননা নাকে উঠিয়ে উচ্চারণ করে পড়ুন।
ঘ) এক বাক্য দুবার বলার মধ্যে দুরকম যেমন একবার খাটো ও অন্যবার টেনে পড়বেন না। পড়লে আযান শুদ্ধ হবে না।
ঙ) আযানের মধ্যে গলা খাকরাবেন না। খাকরানো মাকরুহ।
চ) মাইক ব্যতীত আযান দিলে হাইয়া আলাচ্ছলাহ বলার সময় মুখ ডান দিকে ও হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় মুখ বাম দিকে ফিরিয়ে বলুন। মাইকে আযান দিলে মুখ না ফিরিয়ে সোজা রেখে বলুন যেন মাউথ স্পীকারে শব্দ টেনে নিয়ে হর্ণের আওয়াজ বড় হয়ে বের হয়।
ছ) গানের সুরে আযান দেয়া হারাম।
জ) আযানের বাক্যগুলি ধীরে ধীরে ও ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে বলুন ।
ঝ) রেডিও - টেলিভিশণের আযান, শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী শুদ্ধ নয়। এ জন্যে কারীর নিকট থেকে আযান শিখে আযান দিন।
ঞ) আযানের জবাব দেয়া ওয়াজেব। জবাব দু'রকম।
১) কাজের মাধ্যমে জবাব অর্থাৎ নামাজের জন্যে মছজিদে আসা।
২) মৌখিক জবাব হলো মুআজ্জিনের আযানের শব্দ শুনে সেগুলি হুবহু মুখে উচ্চারণ করবে। হাইয়া আলাছছলাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ শুনে তার বদলে লা হাওলা অলা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলবে। ও আছছলাতু খাইরুম মিনান নাউম এর বদলে ‘ছাদ্দাকতা অবারারতা' বলবে।
ট) ছালাম করা ছুন্নাত। আযানের জবাব দেয়া ওয়াজেব। এ কারণে আযানের সময় কারো সঙ্গে ছালাম করবে না অথবা ছালামের জবাব দেবে না। আযানের সময় কথা বার্তা বলা বা কোন কাজ করা মাকরুহ। (শামী)
ঠ) নিচের যে কোন কাজের মধ্যে থাকলে আযানের জবাব দেবে না ।
১। জুমার খোতবা শোনার সময়
২। কোরআন হাদীছ শেখার অথবা
৩। শেখানোর সময়
৪। পেশাব পায়খানার সময়
৫। মিলনের সময়
৬। জানাযার সময়
৭। খাওয়া পেওয়ার সময়
৮। নামাজের সময় (দুররুল মুখতার)
ড) আযানের পর দোয়া পড়া ওয়াজেব এমনকি ছুন্নাতও নয় বরং মোস্তাহাব। আযানের পর দোয়া কবুল হওয়ার সময়। এ জন্যে দোয়া পড়তে হয়। আযানের জবাব দেয়া ওয়াজেব। অধিকাংশ নামাজী আযানের জবাব দেননা। অথচ আযানের দোয়া পড়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরূপ করা ঠিক না। ফরজ, ওয়াজেব, ছুন্নাত ও নফল প্রভৃতি প্রত্যেক আমলের গুরুত্ব লক্ষ্য করে আমল না করলে ছওয়াবের বদলে গোনাহগার হতে হয়। ফরজ ও ওয়াজেব আমল সামনে এলে ফরজের প্রতি, ওয়াজেব ও ছুন্নাত আমল সামনে এলে ওয়াজেবের প্রতি, ছুন্নাত ও নফল আমল সামনে এলে ছুন্নাতের প্রতি গুরুত্ব লক্ষ্য রেখে আমল করতে হবে। আযান শুনে জবাব দেয়ার পর আযানের দোয়া পড়লে গোনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের আশা করা যায়।
হে আল্লাহ তুমিই মালিক ! এই পরিপূর্ণ আহবানের ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত নামাজের আপনিই প্রভু। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াসিলা ও সুমহান মর্যাদা দান করুন এবং তাঁকে ওই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন; নিশ্চয়ই আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।