আল্লাহ তাআ’লা তার দীদার, নৈকট্য ও দর্শন দানের উদ্দেশ্যে নবুয়তের ১১ সনের ২৬ শে রজব দিবাগত রাতে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে স্বশরীরে নিজের কাছে নিয়ে যান। উক্ত রাতে আল্লাহ তাআ’লা বোরাকসহ হযরত জিবরিল আলাইহিছ ছালামকে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর কাছে পাঠান। হযরত জিবরিল সর্ব প্রথম রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে খানায়ে কাবা হতে বোরাকে চড়িয়ে বায়তুল মোকাদ্দাছ মছজিদে নিয়ে যান। হযরত আদম আলাইহিছ ছালাম হতে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম পর্যন্ত প্রেরিত নবী-রাছুলগণকে সাথে নিয়ে রাছুলে পাক উক্ত মছজিদে দুরাকাত নামাজের ইমামতি করেন। নামাজ বাদ নবী-রাছুলগণের পক্ষ হতে হযরত আদম, হযরত নুহ, হযরত ইবরাহীম, হযরত মুছা, হযরত ঈছা আলাইহিমুছ ছালাম বক্তব্য রাখেন ও আল্লাহ তাআ’লার দীদারে গমনের জন্য রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে মোবারকবাদ জানান। সকল নবী-রাছুলগণও তাদের উম্মতের নাজাতের জন্যে সুপারিশ করার আবেদন পেশ করেন। এরপর হযরত জিবরিল রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বোরাকে চড়িয়ে উর্ধ্বে গমন করেন। প্রথম আসমান হতে সপ্তম আসমান, বেহেশত, ছিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পরিভ্রমন করান ও সেখানকার অধিবাসীগণের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেন।
আল্লাহ তাআ’লা ছিদরাতুল মুনতাহা হতে একমাত্র রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে রফরফে উঠিয়ে আরশ-কুরছী লওহো-ক্বলম, আলমে আরওয়াহ, ৭০ হাজার নূরের পর্দা, ছেফাতে এযাফি,ছেফাতে হাক্বিকী অতিক্রম করে তাকবীন ছেফাতের মূলের মূল অর্থাৎ রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম-এর মূল সৃষ্টি “নুরে মুহাম্মাদী”তে নিয়ে যান। হাদীছ অনুযায়ী এ স্থান আল্লাহ তাআ’লার আঙ্গুলগুলির দু’আঙ্গুলের ফাঁকে অর্থাৎ আল্লাহর সামনে অবস্থিত। এখানে উপনীত হয়ে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম আল্লাহকে লক্ষ্য করে বললেনঃ
আত্তাহিয়্যাতু ওয়াস্ সালাওয়াতু ওয়াত্তাইয়্যেবাতু
উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ
আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম পুনরায় বললেন-
আসসালামু আ’লাইনা ওয়া আ’লা ইবাদিহিল্লাহিস সলিহিন
মুকাররবীন ফেরেশতাগণ এ দৃশ্য দেখে বলে উঠলেন-
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রসুলুহু
এরপর আল্লাহ তাআ’লা রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর সাথে তাঁর ও তাঁর উম্মতগণের ব্যাপারে অনেক আলাপ আলোচনা করেন। এ আলাপ আলোচনা রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর মে’রাজ বা আল্লাহর সাথে দীদার নামে প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তাআ’লা তাঁর উম্মতের গোনাহ মাফ, নৈকট্য ও দীদারের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ হাদিয়া বা উপহার হিসেবে দান করেন। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর মে‘রাজ লাভ হয়েছিল স্বরীরে। আর তাঁর উম্মতের দীদার হবে রুহানীভাবে ক্বলবের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআ’লা এরশাদ করেন-
তুমি ছেজদা করো ও তাঁর নৈকট্য লাভ করো।
— ছুরা আলাক্ব-১৯
...আর আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সাথে আছি যখন তোমরা নামাজ কায়েম কর।...
— ছুরা মায়েদা-১২
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন-
বান্দাহ সবচেয়ে আল্লাহর নিকটবর্তী হয় নামাজের মধ্যে ছেজদার সময়।
— মুছলিম-তাফছীরে মাজহারী , ১০ম ৩০১ পৃঃ
হযরত ইবনে আব্বাছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে-রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন-জিবরিল এসে বললেন- হে রাছুল! আল্লাহ আপনাকে ছালাম দিয়েছেন এবং বলেছেন- কোন বান্দাহ যখন নামাজের জন্যে আল্লাহু আকবার বলে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে যায়, তখন আমার ও ঐ বান্দার মধ্যেকার পর্দা উঠিয়ে দেয়া হয়। ঐ বান্দা নামাজে ক্বলবের মাধ্যমে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে ছুরা ফাতেহা দিয়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বার্তা বলতে থাকে। (নামাজ কি? অধ্যায়ে এ হাদীছ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে)। নামাজের মাধ্যমে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মতগনের এ মে’রাজ প্রাপ্তির কারণে অন্যান্য নবী-রাছুলগণ ও আকাংখা করে বলেছেন- নবী রাছুল না হয়ে রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এর উম্মত হতে পারলে ছলাতের মাধ্যমে আল্লাহর দীদার লাভ করে ধন্য হতাম।
রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম মে’রাজ থেকে ফিরে এসে ছাহাবীগণের সামনে মেরাজের ঘটনাবলী বর্ণনা করে তাঁর উম্মতের জন্যে হাদিয়া বা উপহার স্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ দানের সুসংবাদ প্রদান করেন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৩) নামাজ কি? | (০০৫) নামাজের শিক্ষাদাতা কে ? |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |