রাছুলে পাক (সঃ) বলেন
যখন তোমাদের কেউ নামাজে দণ্ডায়মান হয় সে যেন নামাজ শেষ না করা পর্যন্ত নামাজের মধ্যে গভীরভাবে মনোযোগ রাখে, আর বিশেষ করে যেন এদিক সেদিক খেয়াল করা থেকে বিরত থাকে । কেননা তোমাদের কেউ যতক্ষণ নামাজের মধ্যে থাকে ততক্ষণ সে আল্লাহ্র সাথে কথাবার্তা বলতে থাকে ।
— তিবরানী-আততারগীব , ১ম জেলদ-৩৭৩ পৃঃ
রাসুলে পাক (সঃ) বলেন
হে লোক সকল ! নামাজী যখন নামাজ পড়ে, নিশ্চয় সে তাঁর রবের সঙ্গে কথা বার্তায় লিপ্ত থাকে । সুতরাং সে তাঁর রবের সঙ্গে কি বলছে তা যেন খেয়াল রাখে এবং তোমাদের একে অপরের স্বরকে উঁচু না করে ।
— মুছনাদে আহমাদ , হাদীস নং ৬১৩২
যখন তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ায় সে যেন সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা সে আল্লাহর সাথে গোপনে কথা-বার্তায় লিপ্ত আছে, যতক্ষন সে নিজ জায়নামাজে আছে।
— বুখারী ও মুছলিম-মেশকাত, ৬৫৮
হযরত জাবের রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, রাছুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন - যখন কেউ নামাজে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তাআ’লা নিজ চেহারাকে তার দিকে ফিরান। যখন সে এদিক সেদিক খেয়াল করে তখন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান তুমি কোন্ দিকে খেয়াল করছ ? তুমি যাকে খেয়াল করছ সে কি আমার চেয়ে ভাল ? তুমি আমার দিকে খেয়াল করো। যদি সে দ্বিতীয় বার এদিক সেদিক খেয়াল করে তখন আল্লাহ তাআ’লা অনুরূপ বলেন । যদি সে তৃতীয়বার অন্যদিকে খেয়াল করে তখন আল্লাহ তা’আলা তার দিক থেকে নিজ চেহারা ফিরিয়ে নেন । বাজ্জার এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ।
— আততারগীব ১ম জেলদ, ৩৭০ পৃঃ
হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতেও অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত আছে। (আততারগীব ১ম জেলদ-৩৭০ পৃঃ)
হযরত আবু যর (রাঃ) বর্নিত আছে, রছূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআ’লা সব সময় বান্দার নামাজের মধ্যে হাজির থাকেন। যদি না সে এদিক সেদিক খেয়াল করে। যদি সে অন্যদিকে মুখ ফিরায় তখন আল্লাহ তাআ’লাও তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আহমাদ, আবু দাউদ, নাছায়ী, ইবনু খোজায়মা তার ছহীহ কেতাবে এবং হাকেম এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
— আততারগীব ১ম জেলদ ৩৬৯ পৃঃ, মেশকাত হাদীছ নং ৯৩২
ইবনে মাছউদ ও আনাছ রাদিআল্লাহু আনহুমা হতেও অনুরূপ হাদীছ বর্ণিত আছে। (আততারগীব ১ম জেলদ- ৩৭১, ৩৭২ পৃঃ)
হযরত আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামকে বলতে শুনেছি – যে ব্যক্তি নামাজে দাঁড়াল এরপর এদিক সেদিক তাকাল আল্লাহ তাআ’লা তার নামাজ কবুল না করে তার দিকে ফিরিয়ে দেন।
— আততারগীব ১ম ৭২
হযরত ইবনে আব্বাছ রাদিআল্লাহু আনহুমা হ'তে বর্ণিত আছে - রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম বলেছেনঃ জিবরাইল এসে বললেনঃ হে রাছুল আল্লাহ তাআ’লা আপনাকে ছালাম দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ কোন বান্দা যখন নামাজের জন্যে আল্লাহর দরবারে দাড়িয়ে আল্লাহু আকবার বলে তখন আমার এবং ঐ বান্দার মধ্যেকার পর্দা উঠিয়ে দেয়া হয়।
নামাজী যখন বলেঃ আলহামদু (সকল প্রশংসা )।
আল্লাহ তখন বলেনঃ লিমানিল হামদ (কার জন্যে প্রশংসা)?
নামাজী বলেঃ লিল্লাহি (আল্লাহর জন্যে)।
আল্লাহ বলেনঃ মানিল্লাহ (আল্লাহর পরিচয় কি)?
নামাজী বলেঃ রব্বিল আলামীন (বিশ্ব প্রতিপালক)।
আল্লাহ বলেনঃ অমার রব্বুল আলামীন (বিশ্ব প্রতিপালক কে)?
নামাজী বলেঃ আর রহমানির রহীম (অনন্ত অসীম দয়াময়)।
আল্লাহ বলেনঃ অমানির রহমানুর রহীম (কে অনন্ত অসীম দয়াময়)?
নামাজী বলেঃ মালিকি ইয়াও মিদ্দীন (বিচার দিনের মালিক)।
আল্লাহ বলেনঃ ইয়া আবদী আনা মালিকি ইয়াও মিদ্দীন। (হে আমার বান্দা আমিই বিচার দিনের মালিক)।
নামাজী বলেঃ ইয়্যাকা না’বুদু অইয়্যাকা নাছতায়ীন (আমরা শুধু তোমারই এবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই)।
আল্লাহ বলেনঃ ইয়া আবদী উ’বুদলী অছতায়িন (তুমি আমারই এবাদাত করো এবং আমারই কাছে সাহায্য চাও)।
নামাজী বলেঃ ইহ্ দিনা (আমাদেরকে পথ দেখাও)।
আল্লাহ বলেনঃ আছ ছিরাত্বল মুছতাকীম (সরল সঠিক পথ, কোন্ পথ তুমি চাও)?
নামাজী বলেঃ ছিরাত্বল্লাজীনা আন আমতা আলাইহিম (তাদের পথ যাদের তুমি পুরস্কার দান করেছ)।
আল্লাহ ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য করে বলেনঃ হে ফেরেশতাগণ তোমরা সাক্ষী থাক, আমি আমার বান্দাকে পুরস্কৃত বান্দা তথা নবী, ছিদ্দিক ও শহীদগনের দলভুক্ত করে নিলাম।
নামাজী বলেঃ গায়রিল মাগদূবি আলাইহিম অলাদ্দল্লীন (তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তুমি গজব নাজিল করেছ এবং যারা পথভ্রষ্ট)।
আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাকো আমি তাকে পুরষ্কৃত বান্দাদের দলভুক্ত করেছি আর কোপগ্রস্থ তিরষ্কৃত লোকদের অন্তর্ভুক্ত করিনি।নামাজী বলেঃ আমীন (হে আল্লাহ তুমি কবুল করো)।
ফেরেশতাগণ ও বলেনঃ আমীন।
আল্লামা ইবনুল জাওযী স্বীয় কেতাব “শরহুল কুলুবে” এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
— তাফছীরে নুরুল কোরআন ১ম খন্ড ১৮৮ পৃঃ
মুছলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে নামাজের মধ্যে আল্লাহ ও বান্দার কথাবার্তা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
— মেশকাত হাদীছ নং- ৭৬৬, আহমাদ হাদীছ নং- ৯৯৪৫
আল্লাহ তাআ’লা কোরআন মজীদে এরশাদ করেন-
ঐ আল্লাহ তাআ’লা তোমাদের উপর নামাজ পড়েন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও, আর তোমাদের মধ্যের জুলমাতকে দূর করে দিয়ে নূর প্রবেশ করান। তিনি মোমেনদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল।
— আহযাব-৪৩
আল্লাহ তাআ’লার তরফ থেকে বান্দার প্রতি নামাজের অর্থ রহমত বর্ষণ করা। আর আল্লাহর প্রতি বান্দার নামাজ হলো কাকুতি-মিনতি সহকারে গোনাহ মাফের আবেদন পেশ করা। ফেরেশতাদের নামাজের অর্থ বান্দার জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফেরাতের দোয়া করা। রছূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লাম এরশাদ করেন-
নামাজ মুমিনদের জন্য আল্লাহর দীদার
উপরোক্ত কোরআন মজীদের আয়াত ও হাদীছসমুহ হতে স্পষ্টভাবে জানা গেল যে, নামাজ হলো আল্লাহ পাকের সঙ্গে বান্দার দীদার ও গোপনে কথা-বার্তা বলা ।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০২) "নামাজ প্রশিক্ষণ" পাঠকারীদের প্রথমে জানা দরকার | (০০৪) নামাজ মুমিনের জন্য উপহার |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |