নামাজের মূল হলো খুশু খুজু বা কাকুতি মিনতি সহকারে আল্লাহ পাকের কাছে নিজের গোনাহ মাফির আবেদন পেশ করা। এ কারণে নামাজের মধ্যে চরম বেয়াদবী ও ঔদ্ধত্ব প্রকাশ পায় এমন ধরণের কাজ করা হারাম। করলে আল্লাহর অসন্তুষ্টি প্রকাশ পায় ও নামাজ ফাছেদ বা নষ্ট হয়ে যায়। এ নামাজের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পুনরায় দোহরায়ে পড়তে হয়। এ মোফছেদ আমল ১৩৭টি।
কেয়ামতের বিচার দিনে সর্ব প্রথম ফরজ নামাজের হিসেব নেয়া হবে। এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ না পড়লে অথবা ইচ্ছা করে সঠিকভাবে আদায় না করলে ৮০ হোকবা বা সাতষট্টি লক্ষ বায়ান্ন হাজার বছর দোজখের শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ কারণে কোন ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়ে গেলে ছুন্নাত নফল বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ফরজ রাকাতগুলির কাজা আদায় করতে হয়। ফরজ নামাজ নামাজের মধ্যে যে ছুন্নাত ও মোস্তাহাব আমল আছে তার মধ্যে যে পরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায় অন্যান্য ছুন্নাত নফল নামাজের মধ্যের ফরজ আমল করেও তার শত ভাগের এক ভাগ ও ছওয়াব পাওয়া যায় না। এ কারণে ফরজ নামাজগুলির মধ্যে ছুন্নাত মোস্তাহাবগুলিও যাতে সঠিক ও সুন্দরভাবে আদায় হয় সে দিকে বিশেষ যত্নবান হবেন।
ফরজ নামাজের মধ্যে ঘাটতি পড়লে নফল আমল দিয়ে পূরণ হওয়ার হাদীছ ফরজ নামাজের মধ্যের সুন্নাত-মুস্তাহাব আমলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কারণ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বা ভুলে ফরজ আমল বাদ গেলে নামাজই হবে না ওয়াজেব আমল ইচ্ছা করে বাদ দিলে সোহ সেজদা দিলেও নামাজ হবে না। ১৩৭ টি নামাজ নষ্টকারী বিষয়ের কোন একটি করলে নামাজ ফাছেদ বা নষ্ট হ'য়ে যাবে। নামাজ পূণরায় পড়তে হ'বে। নামাজের যে আমলগুলি ফরজ এগুলি সঠিকভাবে আদায় হ'ল কিনা এর প্রতি লক্ষ্য রাখাও ফরজ। একথা বিশেষভাবে মনে রেখে নামাজ আদায় করবেন।
কারণ ১ঃ মাজুর ব্যক্তি প্রতি ওয়াক্তে নতুন অজু করে সে অজু দিয়ে ঐ ওয়াক্তের ফরজ, ছুন্নাত ও নফল নামাজ পড়তে পারবে। এমন কি কোরআন তেলাওয়াত, দুরুদ বা জেকের আজকারও করতে পারবে। ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার অজু ভেঙ্গে যাবে। সে আগের অজুতে অন্য ওয়াক্তের কোন নামাজ পড়বে না। পড়লে নামাজ আদায় হবে না।
কারণ ২ঃ কোন ওয়াক্তের প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত পুরা সময় ওজরের অবস্থা প্রকাশ পেলে মাজুর হিসেবে গন্য হবে। যদি সম্পুর্ণ ওয়াক্ত ওজর প্রকাশ না পায় তবে মাজুর হিসেবে গণ্য হবে না। কোন ব্যক্তির জোহর ওয়াক্তের কিছু সময় চলে যাওয়ার পর ওজর প্রকাশ পেলে সে মাজুর হিসেবে অজু করে ঐ ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে। এরপর সম্পুর্ণ আছর ওয়াক্তের মধ্যে তার ওজর প্রকাশ না পেলে সে মাজুর হিসেবে গন্য হবে না। ফলে তার আগের জোহরের নামাজ যা সে মাজুর হিসেবে পড়েছিল, শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী তা আদায় হবে না। এ কারণে পুনরায় জোহরের নামাজ কাজা আদায় করে নেবে। অন্য ওয়াক্তের বেলায়ও একই হুকুম।
কারণ ৩ঃ ওজর না থাকা অবস্থায় অজু করার পর অন্য ওয়াক্তের বেলায় একই হুকুম। পুনরায় ওজর প্রকাশ পেলে ঐ অজুতে নামাজ হবে না। নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হবে।
কারণ ৪ঃ যদি ওজর বন্ধ করে নামাজ পড়া যায় তবে তা বন্ধ করে নামাজ পড়া ওয়াজেব। যেমনঃ যখম-পট্টি দিয়ে বন্ধ করা, এস্তেহাজা-কাপড় দিয়ে বন্ধ করা। যদি বন্ধ না করে নামাজ পড়ে তাহলে সে নামাজ আদায় হবে না।
কারণ ৫ঃ নামাজের মধ্যে পট্টি শুকিয়ে পড়ে গেলে।
কারণ ৬ঃ মাজুর অবস্থায় নামাজ শুরু করার পর ওজর দুর হয়ে গেলে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ৭ঃ যদি কোন কাপড়ের অর্ধেক বা তার বেশী পরিমান অংশে নাপাকী লাগে। যদি অন্য কোন কাপড় থাকে তবে ঐ কাপড় পরে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না।
কারণ ৮ঃ মাঠে বা অন্য কোথাও নামাজ পড়ার ইচ্ছা করলে সেখানে নাপাকি ভিজা থাকলে তার উপর নামাজ পড়লে নামাজ হবে না।
কারণ ৯ঃ এমন শুকনা জায়গা যেখানে কাপড় বিছালে কাপড়ে জায়গার ছাপ লাগে এবং উহা নাপাকীযুক্ত হয় তবে উক্ত কাপড়েও নামাজ হবে না।
কারণ ১০ঃ পথে ঘাটে বা মাঠে নামাজ পড়ার সময় যদি দুপায়ের নীচে (রূপার) এক গোল টাকা পরিমানের বেশী নাপাকী দেখা যায় তবে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১১ঃ ছেজদার সময় দুহাটু ও দুহাতের নীচে নাপাকী থাকলে নামাজ হবে না।
কারণ ১২ঃ দু'পায়ের নীচের এবং সেজদার স্থানের নাপাকী একসাথে মিলালে এক গোল টাকা পরিমানের বেশী হলে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১৩ঃ কাপড় বিছিয়ে নামাজ পড়লে যদি দু’পাল্লা এক সাথে সেলাই থাকে তবে নীচের পাল্লায় নাপাক থাকলেও নামাজ বাতেল হবে।
কারণ ১৪ঃ নাপাকের ওপর বিছানা বিছিয়ে নামাজ পড়লে নাপাকের রং-গন্ধ পাওয়া গেলে নামাজ বাতেল হবে।
কারণ ১৫ঃ সেলাই বিহীন দোপাল্লার নিচের পাল্লায় নাপাক লাগলে নাপাকীর রং দেখলে বা গন্ধ পেলে নামাজ বাতেল হবে।
কারণ ১৬ঃ নাপাক জায়গা বা বিছানার উপর পাতলা কাপড় বিছালে যদি নাপাক দেখা যায় বা গন্ধ বোঝা যায় তবে নামাজ বাতেল হবে।
কারণ ১৭ঃ স্ত্রীলোকের দু'কান দু'অংগ, দু’স্তন দু'অংগ, দু'হাত দু'অংগ, মলদ্বার আলাদা একটি অংগ। পেশাবের দুদ্বার দু'অংগ, পিঠ এক অংগ, পেট এক অংগ, রান এক অংগ, হাটু থেকে পায়ের নলা পর্যন্ত এক অংগ। নামাজের মধ্যে তিনবার ‘ছুবহানাল্লাহ’ পড়া পরিমাণ সময় কোন এক অংগের চার ভাগের এক ভাগের বেশী আলগা হয়ে গেলে নামাজ ফাছেদ বা নষ্ট হবে। এমন কি দু’তিন অংগ এক সাথে আলগা হয়ে গেলে সব মিলিয়ে উহাদের ছোট অংগটির চার ভাগের এক ভাগের বেশী হলে এবং তা তিন তছবিহ পড়া পরিমান সময় আলগা থাকলে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১৮ঃ যদি কাপড় এমন পাতলা হয় যা পরার পরেও শরীর দেখা যায় তবে ঐ কাপড় পরে নামাজ পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১৯ঃ মেয়েদের ছেড়ে দেয়া চুলের চার ভাগের একভাগ কাপড়ের বাইরে বের হলে নামাজ ফাছেদ হবে। খোপা বাধা চুলের চার ভাগের একভাগ বের হলেও নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ২০ঃ অন্ধকার রাত্রিতে কেবলার দিক ঠিক করতে না পারলে নিকটে স্থানীয় লোক থাকা অবস্থায় তাদের কাছে জিজ্ঞাসা না করে নিজ ইচ্ছায় কেবলা ঠিক করে নামাজ পড়লে নামাজ হবে না।
কারণ ২১ঃ বিনা চিন্তা ভাবনায় খেয়াল খুশী মত কেবলা মনে করে নামাজ পড়বেন না। পড়লে নামাজ হবে না।
কারণ ২২ঃ কোন নামাজ পড়ছে যদি চিন্তা ছাড়া সে উত্তর দিতে না পারে তাহলে তার নামাজই হবে না।
কারণ ২৩ঃ ক্বলব বা অন্তরে নিয়েত না করে শুধু মুখে উচ্চারণ করলে নামাজ হবে না।
কারণ ২৪ঃ মোকতাদী হলে ইমামের পিছনে একতেদা অর্থাৎ আমি ইমামের পিছনে নামাজ পড়ছি, নিয়েত করুন। মোকতাদী নিয়েত না করলে নামাজ হবে না।
কারণ ২৫ঃ মেয়েলোক মোকতাদী হলে ইমাম অবশ্যই মেয়েলোকের ইমামতির নিয়েত করবে। ইমাম মেয়েদের ইমামতির নিয়েত না করলে মেয়েদের নামাজ হবে না।
কারণ ২৬ঃ মেয়ে মোক্তাদী ইমামের পাশে দাড়ালে আড়াল করুন। না করলে সকলের নামাজ ফাছেদ হবে। পুরুষ মোক্তাদীর পাশে মেয়ে মোক্তাদী দাড়ালে আড়াল করুন। তা না হলে উভয় মোকতাদীর নামাজ বাতেল হবে।
কারণ ২৭ঃ নিয়েত তাকবীরে তাহরীমার আগে করুন। তাকবীরে তাহরীমা বাধার পরে নিয়েত করলে নামাজ হবে না।
কারণ ২৮ঃ ওয়াক্তের আগে নামাজ পড়লে সে নামাজ আদায় হবে না। ওয়াক্ত হওয়ার পরে পুনরায় পড়তে হবে।
কারণ ২৯ঃ কথা বললে।
কারণ ৩০ঃ বাইরের কোন কথা বা শব্দ কান পেতে শুনলে।
কারণ ৩১ঃ মানুষের কাছে যে সব জিনিষ চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে তা চাইলে।
কারণ ৩২ঃ ছালাম করলে।
কারণ ৩৩ঃ ছালামের উত্তর দিলে।
কারণ ৩৪ঃ সরিষা পরিমাণ বাহিরের কোন জিনিষ মুখে দিলে।
কারণ ৩৫ঃ দাঁতের ফাকে বেধে থাকা খাদ্য বুট পরিমাণ চিবাইলে অথবা খেয়ে ফেললে।
কারণ ৩৬ঃ কিছু পান করলে।
কারণ ৩৭ঃ বিনা কারণে গলা খাকরাইলে।
কারণ ৩৮ঃ আহ্ উহ্ শব্দ করলে।
কারণ ৩৯ঃ দুঃখ বা জ্বালা যন্ত্রণার কারণে শব্দ করে কাঁদলে।
কারণ ৪০ঃ হাঁচির উত্তরে ইয়ারহামুকুমুল্লাহ বললে।
কারণ ৪১ঃ কোন প্রশ্নের উত্তরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললে।
কারণ ৪২ঃ দুঃসংবাদ শুনে ইন্না লিল্লাহ বললে।
কারণ ৪৩ঃ সু সংবাদ শুনে আল হামদুলিল্লাহ বললে।
কারণ ৪৪ঃ আশ্চর্য সংবাদ শুনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা ছুবহানাল্লাহ বললে।
কারণ ৪৫ঃ কোন লোকের প্রশ্নের উত্তরে কোন রকম শব্দ করলে।
কারণ ৪৬ঃ কাপড় অভাবে উলঙ্গ হয়ে নামাজ পড়া শুরু করার পর কাপড় পেলে।
কারণ ৪৭ঃ তরতীব ওয়ালা কাজা নামাজ (অর্থাৎ এক সাথে ১/২ ওয়াক্ত হতে একাধারে ৫ ওয়াক্ত পর্যন্ত কাজা নামাজ) বাকী আছে মনে হলে।
কারণ ৪৮ঃ নিজ ইচ্ছায় অজু ভঙ্গ করলে। যেমন কোন জায়গায় চুলকিয়ে রক্ত বের করলে।
কারণ ৪৯ঃ অন্যের দ্বারা অজু নষ্ট হলে। যেমন কারো আঘাতের কারণে রক্ত বের হলে।
কারণ ৫০ঃ বেহুশ হলে।
কারণ ৫১ঃ পাগল হলে।
কারণ ৫২ঃ গোছল ফরজ হলে।
কারণ ৫৩ঃ এক নামাজ শেষ না হতে অন্য নামাজের তাকবীর বললে।
কারণ ৫৪ঃ রুকু বা ছেজদা পরিমাণ সময় অথবা বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পড়া সময় পরিমাণ উলঙ্গ হলে।
কারণ ৫৫ঃ এক ভরি ওজন বা এক গোল টাকা পরিমাণ জিনিষ এক রোকন আদায় করা পর্যন্ত সময় হাতে বা পায়ে থাকলে। নামাজের মধ্যে যে কাজগুলি করা ফরজ,যেমন কেয়াম, কেরাত, রুকু, ছেজদা এর এক একটিকে এক রোকন বলা হয়)।
কারণ ৫৬ঃ ঘুমাইলে।
কারণ ৫৭ঃ পাথর বা লাঠি দিয়ে কাউকে আঘাত করলে।
কারণ ৫৮ঃ কুফরী মূলক চিন্তা ভাবনা করলে।
কারণ ৫৯ঃ কোন রোকন ছেড়ে দিলে।
কারণ ৬০ঃ কোন আহকাম ছেড়ে দিলে। যেমন অজু, ছতর ঢাকা, কেবলার দিকে মুখ করা ইত্যাদি।
কারণ ৬১ঃ তন্দ্রা অবস্থায় উচ্চস্বরে হাসলে।
কারণ ৬২ঃ হজ্জের সময় নামাজের মধ্যে লাব্বাইক বললে।
কারণ ৬৩ঃ নবী পাক (ছাঃ) এর নাম শুনে ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অছল্লাম বললে।
কারণ ৬৪ঃ মুখের মধ্যের কোন দ্রব্য গলে পেটের ভিতর গেলে।
কারণ ৬৫ঃ মাথায় বা দাড়িতে তেল ব্যবহার করলে।
কারণ ৬৬ঃ হাত-পা দিয়ে শব্দ লিখলে।
কারণ ৬৭ঃ সুরমা বা আতর ব্যবহার করলে।
কারণ ৬৮ঃ একই রোকনের মধ্যে এক কাজ তিন বার করলে। যেমন কোন জায়গায় তিনবার চুলকালে।
কারণ ৬৯ঃ আমলে কাছির করলে। অর্থাৎ যে কাজ দেখলে লোকে তাকে নামাজী মনে না করে।
কারণ ৭০ঃ পাগড়ী বাধলে বা স্ত্রীলোক মাথায় রুমাল বাধলে।
কারণ ৭১ঃ জামার বোতাম লাগালে।
কারণ ৭২ঃ জামা, চাদর বা মোজা পরলে।
কারণ ৭৩ঃ রুকু বা ছেজদার সময় দুহাতে কাপড় বা জামা টেনে ধরলে বা উচু করলে।
কারণ ৭৪ঃ ফোস ফোস শব্দ করলে।
কারণ ৭৫ঃ কারো হুকুমে কোন কাজ করলে। যেমন কেউ বললো, ’সামনে এগিয়ে যাও‘। তার হুকুম অনুযায়ী এগিয়ে গেলে।
কারণ ৭৬ঃ দুহাত দিয়ে কোন কাজ করলে।
কারণ ৭৭ঃ বুক ঘুরিয়ে দেখলে।
কারণ ৭৮ঃ একই রোকনের মধ্যে তিনটা মাকরুহ আমল করলে নামাজ ফাছেদ বা নষ্ট হয়ে যাবে যদি লোকে দেখলে তাকে নামাজী মনে না করে।
কারণ ৭৯ঃ আল হামদুর ‘হা’ এর জায়গায় ওয়াও এর পরের ‘হা’ উচ্চারণ করবেন না। আলামিনের ‘আইন’ এর জায়গায় ‘আলিফ’ উচ্চারণ করবেন না। ইহদিনা’র হা’ ডাবল উচ্চারণ করবেন না। আনআমতা’র ‘তা’ স্পষ্ট করে পড়ুন। ভুলে ‘তু’ পড়বেন না। পড়লে এসব জায়গায় অর্থের পরিবর্তন হবে ও নামাজ হবে না।
কারণ ৮০ঃ ইয়্যাকা না’ বুদুও অ ইয়্যাকা নাছতায়ীন এই দু শব্দের তাশদীদ বাদ দিয়ে পড়লে, রব্বিল আলামিনের ‘বা’ এর তাশদীদ উচ্চরণ না করলে অধিকাংশ ইমামের মতে নামাজ ফাছেদ হবে। (আলমগীরি)
কারণ ৮১ঃ একা একা নামাজ পড়লে নামাজের মধ্যে বাইরের কেরাত শুনে কেরাত শিখবেন না। শিখলে নামাজ নষ্ট হবে।
কারণ ৮২ঃ লিখিত কেরাত দেখে পড়বেন না। পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ৮৩ঃ কেরাতের কোন জায়গায় লম্বা সুরে পড়লে যদি অর্থের পরিবর্তন হয়, অক্ষর উচ্চারণের পরিবর্তনের ফলে যদি অর্থের ও পরিবর্তন হয় অথবা জের, জবর, পেশকে গানের সুরে টেনে পড়লে যেমন রব্বিল এর ‘বা’ র জবরকে মদ/লম্বা করে পড়লে নামাজ বাতিল হবে। (গায়াতুল আওতার)
কারণ ৮৪ঃ মদ ও লীনের হরফ গুলি নিয়মের চেয়ে বেশী লম্বা করে পড়লে অর্থ পরিবর্তন না হলেও নামাজ ফাছেদ হবে। ওয়াও ছাকিনের আগের অক্ষরে পেশ, আলিফ ছাকিনের আগের অক্ষরে জবর ও ইয়া ছাকিনের আগের অক্ষরে জের হলে তাকে মদ বলে। মদের স্থানে টেনে পড়তে হবে। ওয়াও ছাকিন বা ইয়া ছাকিনের আগের অক্ষরে জবর হলে তাকে লীন বলে। লীনের স্থানেও টেনে পড়তে হবে। (মেছবাহুল কোরআন)
কারণ ৮৫ঃ এক নামাজী অন্য নামাজীর অলাদ- দ্বল্লীন পড়া শুনে আমিন পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ৮৬ঃ কেরাতের মধ্যে কোরআন মাজীদের আয়াত ছাড়া অন্য কোন দোয়া-কালাম পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ৮৭ঃ ফজর, জোহর, আছর, মাগরীব ও এশার ফরজ নামাজের প্রথম দু’রাকাতের প্রতি রাকাতে ছোট তিন আয়াত অথবা লম্বা এক আয়াত পরিমাণ পড়া ফরজ। না পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ৮৮ঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ছুন্নাত, নফল ও বেতেরের প্রত্যেক রাকাতে কেরাত পড়া ফরজ। এ কেরাত না পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ৮৯ঃ ফজর, মাগরীব ও এশার ফরজ নামাজের প্রথম দু’রাকাতে দুই ঈদের নামাজে, তারাবী ও রমজান মাসের বেতের নামাজের প্রত্যেক রাকাতে ইমামের জেহেরী কেরাত অর্থাৎ কেরাত জোরে পড়া ওয়াজিব। ইচ্ছা করে চুপে চুপে পড়লে ।
কারণ ৯০ঃ মাগরিবের ফরজ নামাজের ৩য় রাকাতে এশার ফরজ নামাজের ৩য়, ৪র্থ রাকাতে জোহর, আসর, বেতের এবং দিনের ছুন্নাত ও নফল নামাজের প্রত্যেক রাকাতে কেরাত আস্তে পড়া ওয়াজিব। ইচ্ছাকরে তিন শব্দের বেশী জোরে পড়লে।
কারণ ৯১ঃ মছজিদের মধ্যে নামাজ অবস্থায় অজু নষ্ট হয়েছে মনে করে মছজিদের বাইরে গেলে।
কারণ ৯২ঃ মছজিদের বাইরে নামাজ পাঠকারী অজু নষ্ট হয়েছে মনে করে কাতার থেকে অথবা একাকী নামাজী নামাজের জায়গা থেকে সরে গেলে।
কারণ ৯৩ঃ অজু অবস্থায় নামাজ শুরু করে ওজু নেই মনে করে কাতার থেকে সরে গেলে ।
কারণ ৯৪ঃ তরতীবওয়ালা নামাজ অর্থাৎ একাধারে এক ওয়াক্ত হতে পাঁচ ওয়াক্ত কাজা নামাজ বাকী আছে মনে করে দাড়ান জায়গা থেকে সরে গেলে।
কারণ ৯৫ঃ রুকু হ'তে মাথা সোজাভাবে না উঠিয়ে ছেজদায় গেলে রুকু আদায় হবে না
কারণ ৯৬ঃ ছেজদার সময় দু’পা এক সঙ্গে মাটির উপরে উঠে গেলে।
কারণ ৯৭ঃ প্রথম ছেজদা দিয়ে মাথা সোজা না তুলে পুনরায় ছেজদা দিলে নামাজ হবে না।
কারণ ৯৮ঃ দুই ছেজদার স্থানে এক ছেজদা দিলে নামাজ বাতিল হবে।
কারণ ৯৯ঃ ফু দিয়ে অথবা দু’হাত দিয়ে ছেজদার স্থানের ধুলা বালি সরালে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১০০ঃ ছেজদার সময় নাক ও কপাল নরম জায়গায় বসে গেলে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১০১ঃ তৃতীয় রাকাতেও কেরাত পড়া ফরজ। না পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১০২ঃ যদি কোন রাকাতে ছুরা ফাতেহা বা অন্য কোন ছুরা কেরাত না পড়ে থাকেন তবে কেরাত পড়া ফরজ রোকন আদায় না হওয়ার ফলে নামাজ হবে না। এ নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। ছেজদা শেষে উঠে বসুন।
কারণ ১০৩ঃ ইমাম মিষ্টস্বরে শুনাবার জন্য সুর করে বা ভাব ভঙ্গী দিয়ে নামাজীর মন আকৃষ্ট করার জন্য কেরাত পড়লে তার পিছনে নামাজ হবেনা।
কারণ ১০৪ঃ ইমামের কেরাত পড়ার স্পষ্ট উচ্চারণ মোকতাদী শুনতে ও বুঝতে না পারলেও নামাজ হবে না। কারণ কেরাত পড়া ফরজ। তাই তারতীল অর্থাৎ পড়ার সঠিক নিয়ম কানুন অনুযায়ী কেরাত না পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১০৫ঃ ফরজ নামাজ দুই তিন বা চার রাকাত হ'লে কেবলমাত্র দু’রাকতে কেরাত পড়া ফরজ। এক রাকাতে কেরাত পড়লে ফরজ আদায় না হওয়ার কারণে নামাজ হবেনা। (আলমগীরী)
কারণ ১০৬ঃ মোকতাদীর পায়ের গিরা ইমামের আগে গেলে।
কারণ ১০৭ঃ ইমাম মেহরাবের মধ্যে দাড়ালে কারো নামাজ হবে না।
কারণ ১০৮ঃ ইমাম উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার চেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি বা অন্য কেউ তার অনুমতি ছাড়া ইমামতি করলে।
কারণ ১০৯ঃ যারা কোরআনকে বিশ্বাস করে না ।
কারণ ১১০ঃ যারা রছুলে পাককে শেষ নবী বলে স্বীকার করে না।
কারণ ১১১ঃ পুরুষ লোক মেয়েদের ইমামতি করলে নিয়েত করার সময়ে মেয়েদের ইমামতির নিয়েত করবে। নিয়েত পরে করলে মেয়েদের নামাজ হবে না। নিয়েত করার সময় মেয়েদের জামাতে হাজির হওয়া শর্ত নয়।(আলমগীরী)
কারণ ১১২ঃ ইমাম অনুপযুক্ত মোকতাদীকে খলিফা করলে।
কারণ ১১৩ঃ মোকতাদী ইমাম ব্যতীত অন্যের ভুলের জন্যে লোকমা দিলে।
কারণ ১১৪ঃ নামাজের ভিতর ইমাম মারা গেলে মোকতাদীর নামাজ বাতেল হবে।
কারণ ১১৫ঃ নামাজীর মন আকৃষ্ট করার জন্যে ইমাম মিষ্টস্বর সুর করে বা ভাব-ভঙ্গি দিয়ে কেরাত পড়লে তার পিছনে নামাজ হবে না।
কারণ ১১৬ঃ ইমামের কেরাত পড়ার স্পষ্ট উচ্চারণ মোকতাদী শুনতে ও বুঝতে না পারলে নামাজ হবে না। কারণ কেরাত পড়া ফরজ। তাই পড়ার সঠিক নিয়ম অনুযায়ী কেরাত না পড়লে নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১১৭ঃ নাবালেগ ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে আদায় হবে না। কারণ নাবালেগ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকের উপর শরীয়ত নাই।
কারণ ১১৮ঃ রুকু ছেজদা ইমামের আগে হলে।
কারণ ১১৯ঃ দাড়নোর সময় মাথা সোজা না করে ছেজদায় গেলে।
কারণ ১২০ঃ ইমাম ছেজদায় যাওয়ার আগে মোকতাদী ছেজদা করলে।
কারণ ১২১ঃ কেবল নাক বা শুধুমাত্র কপাল মাটিতে রাখলে ছেজদা আদায় হবে না।
কারণ ১২২ঃ এক সাথে দু’পা উঠে গেলে।
কারণ ১২৩ঃ ইমাম চতুর্থ রাকাতে না বসে ভুলে পঞ্চম রাকাতের জন্য দাড়িয়ে গেলে মোকতাদী লোকমা দেবে। যদি ইমাম না বসে তবে মোকতাদী না দাড়িয়ে বসে তাশাহুদ পড়ে ছালাম ফিরাবে। যদি ইমাম পঞ্চম রাকাতের ছেজদার আগে বসে ছালাম ফিরায় তবে উক্ত মোকতাদীর নামাজ আদায় হবে। আর যদি ইমাম বসে ছালাম না ফিরিয়ে পঞ্চম রাকাতের ছেজদা করে তবে ইমাম আখেরী ক্সবঠক ফরজ রোকন আদায় না করার কারণে সকলের নামাজ ফাছেদ হবে।(আলমগীরী)
কারণ ১২৪ঃ ইমাম রুকুতে গেলে দাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বাঁধুন। তারপর রুকুতে যান। তাহরীমা বাঁধতে বাঁধতে রুকুতে গেলে নামাজ হবে না।
কারণ ১২৫ঃ ইমাম বা একাকী নামাজী আখেরী ক্সবঠকে না বসে সোজা উঠে দাড়ালে।
কারণ ১২৬ঃ আখেরী বৈঠকের আত্তাহিয়্যাতু শেষে ছোহ ছেজদা করার পর না বসে হঠাৎ দাড়িয়ে গেলে।
কারণ ১২৭ঃ ইমামের ডান দিকে ছালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনি দাড়িয়ে যাওয়ার পর ইমামকে ছোহ ছেজদা দিতে দেখলে পুনরায় বসে ছোহ ছেজদা দিলে।
কারণ ১২৮ঃ আখেরী বৈঠক শেষে ইমাম উচ্চ শব্দে হাসলে বা ইচ্ছা করে অজু ভাঙলে মছবুকের নামাজ ফাছেদ হবে।
কারণ ১২৯ঃ বসে রুকুর সময় মাথা ঝুকিয়ে দিন। মাথা এমনভাবে ঝুকান যেন হাটুর বাইরে না যায়। হাটুর বাইরে গেলে রুকু হবে না। বরং ছেজদা হিসেবে গণ্য হবে ও নামাজ হবে না। (শামী)
কারণ ১৩০ঃ লাহেক অজু করতে যাওয়ার সময় কেরাত পড়লে বা কথাবার্তা বললে।
কারণ ১৩১ঃ নিকটে পানি দেখে দুরে অজু করতে গেলে।
কারণ ১৩২ঃ বিনা ওজরে এক রোকন পরিমাণ সময় দেরি করে অজু করতে গেলে।
কারণ ১৩৩ঃ মেয়েদের অজু নষ্ট হলে বাকী নামাজ আদায়ের আগে অজুর জন্য হাত, পা বা অন্য কোন অঙ্গ হতে কাপড় সরে গেলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে। কেননা নামাজের মধ্যে হাত ঢেকে রাখাও ফরজ। এ কারণে অজু করে পুনরায় নামাজ পড়বে।
কারণ ১৩৪ঃ যদি ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যায় এবং জোহর, আছর বা মাগরিবে উক্ত ফজরের নামাজ না পড়ে এশার সময় আদায় করতে চান তবে ফজর, জোহর, আছর ও মাগরিব ধারাবাহিকভাবে পড়ে নিন। কেননা পুর্বের পড়া জোহর, আছর ও মাগরিবের নামাজ ধারাবাহিকতা না থাকায় বাতিল বলে গণ্য হবে।
কারণ ১৩৫ঃ নামাজ শুরু করার পর তরতীব ওয়ালা কাজা নামাজের কথা মনে হলে।
কারণ ১৩৬ঃ কাজা বাকী আছে মনে করে দাড়ানো স্থান থেকে সরে গেলেও।
কারণ ১৩৭ঃ মুছাফির ব্যক্তির মনে থাকা অবস্থায় দু’রাকাত এর স্থলে চার রাকাত নামাজ পড়লে।