ওয়াজিব ই'তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। সুতরাং রমযানে হোক, অথবা রমযান ছাড়া অন্য সময়ে- সর্বাবস্থায় এই প্রকার ই'তিকাফের মধ্যে রোযা রাখা জরুরী।
কেউ যদি একদিন ই'তিকাফ করার মানত করে তবে তার উপর শুধু দিনের ই'তিকাফই ওয়াজিব হবে। সুতরাং সে সুবহে সাদিকের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে এবং সূর্যাস্তের পর বের হবে। আর যদি সে ই'তিকাফের মানত করার সময় রাতসহ নিয়্যত করে থাকে, তবে রাতও অন্তর্ভুক্ত হবে (বাহরুর রাইক, ২য় খণ্ড)।
কেউ যদি নির্দিষ্ট দিনের বা কোন নির্দিষ্ট তারিখের ই'তিকাফের মানত করে তবে তাকে ঐ নির্দিষ্ট দিনে বা তারিখেই তা আদায় করতে হবে। শরয়ী ওযর ব্যতীত তা আদায়ে বিলম্ব করা জায়েয নয়। অবশ্য ওযর থাকলে জায়িয হবে। কেউ যদি মানত করে যে, সে রাতে ই'তিকাফ করবে, তাহলে তার মানত সহীহ হবে না। কেননা মানতের ই'তিকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। আর রাত রোযা রাখার সময় নয় (বাহরুর রাইক, ২য় খণ্ড)।
কেউ যদি একদিনের ই'তিকাফের মানত করে তবে তার উপর শুধু দিনের ই'তিকাফ-ই ওয়াজিব হবে। আর যদি কেউ একদিনের ই'তিকাফের মানত করে এবং দিন-রাত উভয়েই নিয়্যত করে তবে তার উপর একদিন একরাতের ই'তিকাফ ওয়াজিব হবে।
কেউ যদি দুই তিন বা ততোধিক দিনের ই'তিকাফের মানত করে তবে দিন রাত উভয় সময়ের-ই ই'তিকাফ করতে হবে।
যদি কেউ এই মানত করে যে, দুই বা তিন অথবা এরচেয়ে বেশী সংখ্যক রাতে ই'তিকাফ করবে এবং এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য শুধু রাতই হয়ে থাকে, তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। পক্ষান্তরে যদি রাত বলে তার উদ্দেশ্য রাতসহ দিনও হয়ে থাকে, তবে দিন-রাত উভয়েরই ই'তিকাফ করতে হবে (আহসানুল ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড ও শামী, ২য় খণ্ড)।
রামাযানুল মুবারকের বিশ তারিখ আসরের পর সূর্যাস্তের পূর্বে শেষ দশকের ই'তিকাফের নিয়্যত করে ই'তিকাফকারী মসজিদে প্রবেশ করবে শরয়ীভাবে ঈদের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে ই'তিকাফ খতম করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে চার ইমামের সকলের-ই এ মত যে একমাস ই'তিকাফ করার ইচ্ছা থাকুক বা দশদিন উভয় অবস্থায়ই ই'তিকাফকারী ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে আগের দিন সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে (মিল্কাত, ৪র্থ খণ্ড)।
মহিলাগণ নিজেদের ই'তিকাফের স্থানে এবং পুরুষগণ মসজিদের প্রবেশ করার সময় অথবা প্রবেশ করে মনে মনে এরূপ নিয়্যত করবে যে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রামাযানুল মুবারকের শেষ দশদিনের সুন্নাত ই'তিকাফ শুরু করছি।
সুন্নাত ই'তিকাফের নিয়্যত বিশ তারিখ রামাযান সূর্যাস্তের পূর্বেই করতে হবে। যদি সূর্যাস্তের পর নিয়্যত করা হয়, তবে এ ই'তিকাফ সুন্নাত থাকবে না, বরং নফল হয়ে যাবে। কেননা, নিয়্যত করার পূর্বে শেষ দশদিনের কিছু অংশ এ রূপ অতিবাহিত হয়ে গেছে, যেখানে ই'তিকাফের নিয়্যত করা হয়নি। সুতরাং পুরো দশদিনের ই'তিকাফ হয়নি।
নফল ই'তিকাফ বলা হয়, যে ই'তিকাফের মধ্যে দিন বা সময়ে কোন নির্ধারিত সীমা থাকে না। অর্থাৎ ওয়াজিব ও সুন্নাত ই'তিকাফ ব্যতীত যে পরিমাণ সময়ের জন্যই হোক, তা নফল ই'তিকাফ।
নফল ই'তিকাফের জন্য এরূপ নিয়্যত করবে: হে আল্লাহ্! যতটুকু সময় আমি এ মসজিদে থাকব, ততটুকু সময়ের জন্য ই'তিকাফের নিয়্যত করছি। আর শুধু মনে মনে নিয়্যত করলেই যথেষ্ট হবে, মুখে বলা জরুরী নয় (বাহরুর রাইক)।
যদি দশদিনের কম সময়ের নিয়্যত করা হয় তবে তা নফল ই'তিকাফ হয়ে যাবে। নফল ই'তিকাফ বছরের যে কোন সময়েই করা যায়। তবে রামাযান শরীফে করলে সাওয়াব বেশী হয়। যদি কোন ব্যক্তি নামাযের জন্য মসজিদে প্রবেশ করে ই'তিকাফেরও নিয়্যত করে, তবে সে ই'তিকাফেরও সাওয়ার পাবে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৭৬) ই'তিকাফের শর্তাবলী | (০৭৮) ই'তিকাফের আদাবসমূহ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |