শরী'আতের হুকুম আহকাম সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নির্ভরযোগ্য এক বা একাধিক আলিমের উপস্থিতিতে চাঁদ দেখার বিষয় সাক্ষ্য প্রদান করা।
¶ চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদানের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান
যদি চাঁদ প্রত্যক্ষকারী ব্যক্তি নিজে আলিমদের নিকট উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করতে না পারে, তাহলে প্রত্যেক একজনের সপক্ষে দুইজন করে সাক্ষী নির্ধারণ করবে। তারা আলিমগনের নিকট গিয়ে বলবেন যে, অমুক আমাদের নিকট সাক্ষ্য দিয়ে বলেছে যে, আমি অমুক রাতে অমুক স্থানে সচক্ষে চাঁদ দেখেছি। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সে তার সাক্ষ্য প্রদানে আমাকে সাক্ষী নির্ধারণ করেছে। তাই আমি তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করছি।
¶ আঞ্চলিক কমিটি কর্তৃক চাঁদের ফয়সালা প্রদানের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান
যেখানে চাঁদ দেখা গিয়েছে, যদি সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে কোন স্থানীয় 'চাঁদ দেখা কমিটি' থাকে এবং সে কমিটিতে এমন নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরাম থাকেন যাঁদের ফায়ার প্রতি স্থানীয় আলিমগণ ও স্থানীয় জনগণ পূর্ণ আস্থা রাখেন, চাঁদ প্রত্যক্ষকারীরা তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে তাদের চাঁদ প্রত্যক্ষ করার সাক্ষ্য প্রদান করে এবং উক্ত উলামায়ে কিরাম তাদের সাক্ষ্য কবুল করেন, তাহলে তাদের উক্ত এলাকার জন্য উলামায়ে কিরামের এই রায় প্রদান যথাযথ ও কার্যকর বলে বিবেচিত হবে।
কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বত্র তাদের রায় কার্যকর করতে হলে রাষ্ট্রের 'কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটি'র সামনে উক্ত উলামায়ে কিরামের রায় নিম্নোক্ত শর্তাবলীসহ উপস্থাপন করতে হবেঃ
উক্ত আলিমগণ সকলে বা সকলের পক্ষ হতে একজন পত্র মারফত জানাবেন যে, অমুক সময় আমাদের উপস্থিতিতে আমাদের নিকট দুই বা ততোধিক ব্যক্তি চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করে এবং আমাদের নিকট তাদের এই সাক্ষ্য প্রদান নির্ভরযোগ্য ও যথাযথ বলে প্রতীয়মান হওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা চাঁদ উঠার রায় প্রদান করেছি। দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে চিঠিটি লিখে বন্ধ করে তাদের হাতে 'কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটি'র নিকট তা পাঠাতে হবে। তারা চিঠিটি হস্তান্তরের সময় ও এই সাক্ষ্য প্রদান করবেন যে, অমুক আলিমগণ আমাদের উপস্থিতিতে চিঠিটি লিখে বন্ধ করে আমাদের হাতে দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটির নিকট শরী'আতের শর্ত মোতাবিক এই প্রত্র গৃহীত বলে বিবেচিত হওয়ার পর তাঁরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে সারা দেশে চাঁদ দেখার রায় প্রদান করবেন। তাদের এই রায় সারা দেশের সকল মুসলমানের জন্য অবশ্য গ্রহণীয় হবে। সে ক্ষেত্রেও সাধারণ সংবাদ পাঠকের মাধ্যমে তা জানানো যথেষ্ট হবে না। বরং কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটির পক্ষ হতে একজন নেতৃস্থানীয় আলিম স্বয়ং রেডিও বা টেলিভিশন মারফত দেশবাসীকে সাক্ষ্য প্রদানের তিনটি অবস্থার যেইটি এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে তার উল্লেখ করে জানাবেন যে, উক্ত পন্থায় আমাদের নিকট চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার ভিত্তিতে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে চাঁদ উঠার রায় প্রদান করছি এবং সরকারের পক্ষ হতে প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে আমরা তা সারাদেশে প্রচার করছি।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি সহজ হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারেঃ
সরকার চাঁদ সম্পর্কিত মাস'আলা মাসাইলে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কিরাম নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করবেন। অনুরূপ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ও আঞ্চলিক চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করবেন। কেন্দ্রীয় এবং আঞ্চলিক কমিটি সমূহকে চাঁদ দেখার যথারীতি সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্পন করা হবে। আঞ্চলিক কমিটি যথা নিয়মে চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
এর পর এই সংবাদ আঞ্চলিক কমিটি টেলিফোন ও ফ্যাক্স ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটির নিকট এমনভাবে পৌঁছাবেন যেন তার মধ্যে কোন দ্বিধা, দ্বন্ধ বা সন্দেহের অবকাশ না থাকে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি দেশব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা করবে। এরূপ ক্ষেত্রে রেডিও ও টেলিভিশন এবং পত্র পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারিত ঐ সংবাদ যথাযথ বলে গৃহীত হবে (জাওয়াহিরুল ফিকহ)।