কিরানের জন্য হজ্জ এবং উমরা উভয়ের ইহরাম মীকাত হতে বাঁধা শর্ত নয়। বরং মীকাতে শুধু যে কোন একটির ইহরাম বাঁধা ওয়াজিব। কেউ যদি মীকাতে শুধু উমরার ইহরাম বাঁধে এবং পরে কিরানের ইচ্ছা করে তবে তাওয়াফের চার চক্কর সম্পন্ন করার পূর্বে হজ্জের ইহরাম বেঁধে থাকলে কারিন হিসাবে গন্য হবে। এমনিভাবে কেউ যদি মীকাতে হজ্জের ইহরাম বাঁধে এবং তারপর কিরানের ইচ্ছা করে তবে উকূফে আরাফার আগে উমরার ইহরাম বেঁধে থাকলে কারিন হিসাবে গন্য হবে। কিন্তু এরূপ করা ঠিক নয়। কেননা মীকাত হতেই এক সঙ্গে উভয়ের ইহরাম বাঁধা সুন্নাত।
কেউ যদি উমরার তাওয়াফ করার পর হজ্জের ইহরাম বাঁধে অথবা উকুফে আরাফার পর উমরার ইহরাম বাঁধে তবে সে কারিন হিসাবে গন্য হবে না। কারিনের উপর ১০ তারিখে জামরাতুল আকাবায় রমী করার পর দমে কিরান আদায় করা ওয়াজিব। একে দমে মুক্তও বলা হয়। দমে কিরানের শর্তাবলী ঠিক কুরবানীর শর্তাবলীর অনুরূপই।
কারিনের জন্য দমে কিরানের গোস্ত খাওয়া জায়িয। কুরবানীর গোল্ডের মত এক তৃতীয়াংশ ফকীর মিস্কীনদেরকে প্রদান করা মুস্তাহাব। বাকী এক তৃতীয়াংশ বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে বন্টন করবে এবং অবশিষ্ট তৃতীয়াংশ নিজের আহার করবে অথবা অবস্থানুযায়ী ব্যবস্থা করবে। এই কুরবানীর গোস্ত সাদাকা করা ওয়াজিব নয়। দমে কিরানের মধ্যে নিয়্যত করা জরুরী। নিয়্যত ছাড়া দমে কিরান আদায় হবে না। দমে কিরান ওয়াজিব হওয়ার জন্য পশু অথবা এর মূল্যের উপর সক্ষম হওয়া এবং কারিনের আকিল, জ্ঞানবান, বালিগ ও আযাদ হওয়া শর্ত। গোলামের উপর দমের পরিবর্তে রোযা ওয়াজিব হবে।
হরমের সীমানার অভ্যন্তরে দমে কিরান যবাহ্ করা জরুরী। কেউ যদি হরমের বাইরে অন্য কোথাও যবাহ্ করে তবে দমে কিরান আদায় হবে না। এমনি ভাবে এ যবাহ্ আইয়ামে নাহর অর্থাৎ ১০ই যিলহজ্জ হতে ১২ই যিলহজ্জের মধ্যে আদায় করা ওয়াজিব। উক্ত দিবস সমূহের পূর্বে যবাহ্ করা জায়িয নয়। পরে করলে জায়িয হবে। কিন্তু এতে ওয়াজিব তরক হবে।
১০ই যিলহজ্জ সবুহে সাদিকের পর হতেই যবাহ্ করা জায়িয। অবশ্য সূর্যোদয়ের পর যবাহ্ করা সুন্নাত। কারিনের জন্য রমী এবং ক্ষৌরকার্যের মধ্যবর্তী সময়ে যবাহ্ করা ওয়াজিব। মক্কা মুকাররমা এবং হরম শরীফের যে কোন জায়গায় যবাহ্ করা জায়িয। কিন্তু মিনায় যবাহ্ করা সুন্নাত। কারিন বা মুতামাত্তি যদি কুরবানী করার পূর্বে মারা যায় তার যবাহ্ করার অসিয়্যত করা তার উপর ওয়াজিব। অসিয়্যত করে গেলে তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে তা পূরা করতে হবে। অসিয়্যত না করে গেলে ওয়ারিসদের জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। কিন্তু তারা যদি মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে যবাহ্ করে দেয় তবে মৃত ব্যক্তি দমে কিরান হতে মুক্ত হয়ে যাবে।
কারিনের জন্য যথাক্রমে রমী, যবাহ এবং ক্ষৌরকার্য সম্পন্ন করা ওয়াজিব। অর্থাৎ প্রথমে রমী তারপর যবাহ্ এবং এরপর ক্ষৌরকার্য সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফে যিয়ারতের ক্ষেত্রে ক্রমানুবর্তিতা ওয়াজিব নয়। যদি কেউ পূর্বোক্ত তিন কাজের পূর্বে অথবা পরে অথবা মাঝখানে তাওয়াফ সম্পন্ন করে তবুও জায়িয হবে। তবে ক্ষৌরকার্যের পর তাওয়াফে যিয়ারত করা সুন্নাত। মুফরিদের জন্য যবাহ্ ওয়াজিব নয়। কিন্তু রমী, এবং ক্ষৌরকার্যের মধ্যে তার জন্যও ক্রমানুবর্তিতা রক্ষা করা ওয়াজিব। ঈদের কুরবানী দমে কিরান বা দমে তামান্ডুর স্থলাভিষিক্ত হবে না।
ঈদের কুরবানী স্থানীয় লোকদের উরপ ওয়াজিব। মুসাফিরের উপর ওয়াজিব নয়। বিদেশী কোন লোক যদি মক্কা মুকাররমায় পৌছে ১৫দিন অবস্থানের নিয়্যত করে তবে তার উপরক্ত ঈদের কুরবানী ওয়াজিব হবে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(১৯৯) হজ্জে কিরানের শর্তসমূহ | (২০১) দমে কিরান আদায় করতে অক্ষম হলে |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |