জানাযার নামায ফরযে কিফায়া। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এতে চার তাকবীর বিধিবদ্ধ হয়েছে। জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা বা কোন কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে না। বাস্তবিক পক্ষে তাই হাদীসসম্মত আমল। নিচে এর প্রমাণ পেশ করা হলঃ
১। তিরমিযী শরীফের 'সালাতুল জানাযার দো'আ' অনুচ্ছেদে বর্ণিত
হয়েছে:
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ أَخْبَرَنَا هَقُلُ بْنُ زِيَادٍ حَدَّثَنَا الْأَوْزَاعِي عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ حَدَّثَنِي أَبُو إِبْرَاهِيمَ الْأَشْهَلِي عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى عَلَى الْجَنَازَةِ قالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرْنَا وَأَنْتَانَا قَالَ يَحْيَى وَحَدَّثَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ . الرَّحْمَنِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلُ ذلِكَ وَزَادَ فِيْهِ اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاحْبِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَن تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيْمَانِ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَعَائِشَةَ وَأَبِي قَتَادَةَ وَعَوْفِ بْنِ مَالِكِ وَجَابِرٍ -
قالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ وَالِدِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ حَدِيثُ حَسَنٌ صَحِيحُ وَرَوَى هِشَامُ الإِسْتِوَائِي وَعَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ يَحْيَى بن أبي كَثِيرٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ وَعَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُرسَلًا وَرَوَى عِكْرِمَةُ بْنُ عَمَّارٍ عَنْ يَحْيَى بْنِ
ابي كثِيرٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ وَعَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَدِيثُ عِكْرِمَةَ بْنِ عَمَّارٍ غَيْرُ مَحْفُوظٍ وَعِكْرِمَةٌ رُبَّمَا بِهِم فِي حَدِيثِ يَحْيَى وَرُوِيَ عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أبي قتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَسَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَقُولُ أَصْحُ الرِّوَايَاتِ فى هذا حَدِيثُ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ عَنْ أَبِي إِبْرَاهِيمَ الْأَشْهَلِي عَنْ أَبِيْهِ وَسَأَلْتُهُ عَنْ اسْمِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ فَلَمْ يَعْرِفُهُ -
অনুবাদ: হযরত আলী ইবনে হুজর (রঃ) হযরত আবু ইবরাহীম আল-আশহালী (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জানাযার নামাযে এই দো'আ পড়তেন: অর্থ- "হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করুন। আমাদের যারা জীবিত, যারা মৃত, যারা উপস্থিত, যারা অনুপস্থিত, যারা ছোট, যারা বড়, যারা পুরুষ ও মহিলা, সকলকে।" ইয়াহইয়া বলেন, আমাকে আবূ সালামা ইবনে আবদুর রহমান হাদীসটি অনুরূপ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) হতে রেওয়ায়েত করেছেন। অর্থ- "হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাদেরকে জীবিত রেখেছেন, তাদেরকে ইসলামের ওপর জীবিত রাখুন। আর যাদেরকে মৃত্যু দিয়েছেন তাদেরকে ঈমানের ওপর মৃত্যু দান করুন।" এই বিষয়ে আবদুর রহমান ইবনে আওফ, আয়েশা, আবু কাতাদা, জাবির, আওফ ইবনে মালিক (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আবূ ইবরাহীম (রঃ)-এর পিতা বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ।
হিশাম আদ-দাসতাওয়াঈ ও আলী ইবনে মুবারক এই হাদীসটি ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর আবূ সালামা ইবনে আবদুর রহমান সূত্রে নবী (সাঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন। ইকরিমা ইবনে আম্মার একে ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর- আবূ সালামা- হযরত আয়েশা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। ইকরিমা ইবনে আম্মার (রঃ)-এর রেওয়ায়েতটি মাহফুষ বা সংরক্ষিত নয়। ইকরিমা অনেক সময় ইয়াহইয়া-এর হাদীস সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে পতিত হন। ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর আবদুল্লাহ ইবনে আবী কাতাদা তাঁর পিতা কাতাদা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) হতে তা বর্ণিত আছে।
ইমাম আবু ঈসা (রঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ আল্ বুখারী (রঃ) কে বলতে শুনেছি যে, হাদীসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত হল, ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর আবূ ইবরাহীম আল্ আশহালী (রঃ)-এর পিতার নাম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন।
জামে' তিরমিযী মুতারজম উর্দু, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৭৯
২। উক্ত কিতাবে আরও উদ্ধৃত হয়েছে:
عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَى مَيْتٍ فَفَهِمْتُ مِنْ صَلَاتِهِ عَلَيْهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَاغْسِلْهُ بِالْبَرْدِ وَاغْسِلْهُ كَمَا يُغْسَلُ الثوبُ قَالَ أَبُو عيسى هذا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ - قَالَ مُحَمَّدٌ أَصَحُ شَيْ فِي هَذَا الْبَابِ هَذَا الْحَدِيثُ -
অনুবাদ: হযরত আওফ ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানাযার নামাযের দো'আ পড়তে শুনেছি। তাঁর দো'আর বাক্যগুলো আমি বুঝতে পারিঃ অর্থ- "হে আল্লাহ! তাকে (মৃত ব্যক্তি) মাফ করুন, তার ওপর রহম করুন এবং তাকে শিশিরের পানি দিয়ে এমনভাবে ধৌত করে দিন যেমনভাবে কাপড় ধৌত করা হয়।
ইমাম আবূ ঈসা (রঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান-সহীহ। মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী (রঃ) বলেন, এই বিষয়ে এই হাদীসটি সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ।
জামে' তিরমিযী মুতারজম উর্দু, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৮০
৩। 'মুসনাদে ইমাম আ'যম আবূ হানীফা' হাদীস গ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَض أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ إذا صلى علَى الْمَيِّتِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأَنْثَانَا -
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সাঃ) যখন জানাযার নামায পড়তেন তখন বলতেন: অর্থঃ "হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জীবিতদের, যারা মৃত, যারা উপস্থিত, যারা অনুপস্থিত, যারা ছোট-বড় এবং পুরুষ ও মহিলা সকলকে মাফ করে দিন।"
অন্য রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত এ বাক্যও রয়েছে:
اللهُمَّ مَنْ أَحْبَبْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِيْمَانِ -
অনুবাদ: 'হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাদেরকে জীবিত রেখেছেন তাদেরকে ইসলামের ওপর জীবিত রাখুন। আর যাদেরকে মৃত্যু দিয়েছেন তাদেরকে ঈমানের ওপর মৃত্যু দান করুন। এ ছাড়া আরও কিছু অতিরিক্ত দো'আর বাক্য রয়েছে।'
'মুসনাদে ইমাম আ'যম আবূ হানীফা', বাবুল জানায়েয, হাদীস নং ১৯১
৪। বুখারী শরীফের হাদীস:
وَعَن طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ فَاتِحَةُ الْكِتَابِ فَقَالَ لِتَعْلَمُوا أَنَّهَا
অনুবাদ: তাবিয়ী হযরত তালহা বিন আবদুল্লাহ বিন আওফ (রঃ) বলেন, আমি হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)-এর পিছনে একটি জানাযার নামায পড়েছি। তিনি এতে সূরা ফাতিহা পড়লেন এবং বললেন, আমি তা এজন্য পড়লাম যে, যাতে তোমরা জান যে, তা সুন্নাত।
মিশকাততুল মাসাবীহ্, কিতাবুল জানায়েয, হাদীস নং ১৫৬৫
ইমাম শাফিয়ীর মত তাই, কিন্তু ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালিক ও ইমাম সুফইয়ান সাওরীর মতে নবী করীম (সাঃ) জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়েছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। কোন কোন সাহাবী যে তা পড়েছেন তা দো'আ বা ছানাস্বরূপই পড়েছেন।
প্রখ্যাত আলিম মাওঃ নূর মুহাম্মদ আ'যমী (রঃ) রচিত বংগানুবাদ মিশকাত শরীফের চতুর্থ খণ্ডে উক্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
৫। জামে তিরমিযীতে উল্লেখ হয়েছে:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَمْ شَرِيكٍ - قَالَ أَبُو
عيسى حَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ حَدِيثُ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذلِكَ القوى. إِبْرَاهِيمُ بْنُ عُثْمَانَ هُوَ أَبُو شَيْبَةَ الْوَاسِطِي مُنْكَرُ الْحَدِيثِ والصَّحِيحُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَولُهُ مِنَ السُّنَّةِ الْقِرَأَةُ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ -
অনুবাদ: হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাঃ) জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। এই বিষয়ে উম্মু শরীক (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম আবূ ঈসা (রঃ) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটির সনদ তেমন শক্তিশালী নয়। রাবী ইবরাহীম ইবনে উসমান হলেন আবূ শায়বা আল্ ওয়াসিতী। তিনি মুনকারুল হাদীস- তাঁর হাদীস প্রত্যাখ্যাত, বিশুদ্ধ হল ইবনে আব্বাসের বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত রেওয়ায়াতটি, তিনি বলেন, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
জামে' তিরমিযী মুতারজম উর্দু, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৮০
৬। উক্ত হাদীস গ্রন্থে আরও বর্ণিত হয়েছে:
عن طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ إِنَّهُ مِنَ السُّنَّةِ أَوْ مِنْ تمَامِ السُّنَّةِ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحُ وَالْعَمَلُ عَلَى هذَا عِنْدَ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَغَيْرِهِمْ يَخْتَارُوْنَ أَنْ يَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الأولى وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِى وَاحْمَد وَإِسْحَاقَ وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ لا يقرأ في الصَّلَاةِ عَلَى الْجَنَازَةِ إِنَّمَا هُوَ تَنَاءُ عَلَى اللَّهِ وَالصَّلُوةُ على النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالدُّعَاء لِلْمَيِّتِ وَهُوَ قَولُ التَّوْرِى وَغَيْرِهِ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ -
অনুবাদ: তাবিয়ী হযরত তালহা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আওফ (রঃ) হতে বর্ণিত যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) একবার জানাযার নামায আদায় করেন এবং এতে সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। এই বিষয়ে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তা হল সুন্নাত, অথবা বললেন, তা হল সুন্নাতের পরিপূর্ণতা বিধানের অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম আবু ঈসা (রঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান-সহীহ। কতক সাহাবী ও অপরাপর আলিম এই অনুসারে আমল করেছেন। প্রথম তকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠের বিধান তাঁরা গ্রহণ করেছেন। তা ইমাম শাফিয়ী, আহমদ ও ইসহাকের অভিমত।
কতক আলিম বলেন, জানাযার নামাযে কোন কিরআত (সূরা ফাতিহা) পাঠ করা হবে না। এতে কেবল আল্লাহর হাম্দ ও ছানা, নবী (সাঃ)-এর ওপর দুরূদ পাঠ ও মৃত ব্যক্তির জন্য দো'আ করা। তা ইমাম সওরী ও অন্যান্য কুফাবাসী আলিমগণের অভিমত।
জামে' তিরমিযী মুতারজম উর্দু, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৮০-৪৮১
৭। মিশকাতুল মাসাবীহ্-এর শরাহ তানযীমুল আশতাত ১ম খণ্ডে (উর্দু) উল্লেখিত হয়েছে যে, ইমাম আ'যম আবু হানীফা, ইমাম মালিক, মুজাহিদ, হাম্মাদ, সওরী, শা'বী, সাঈদ ইবনে যোবায়ের, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব, আতা', আবু হুরায়রা, ইবনে উমর, আলী, উমর (রাঃ হুম) প্রমুখ সাহাবী ও ইমামদের নিকটে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা নেই। উপরোক্ত সাহাবী ও ইমামদের দলীল ঐ সকল হাদীস যাতে কেবল মাত্র দো'আ ও ছানা পাঠ করার কথা উদ্ধৃত হয়েছে, কিন্তু সূরা ফাতিহা পাঠ করার কথা উল্লেখ নেই।
এই মর্মে আবু দাউদ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَض قَالَ صَلَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرُ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) জানাযার নামাযে বললেন,
اللهُمَّ اغْفِرْ لِحَتِنَا وَمَيِّتِنَا عَنْ مَالِكٍ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ رض كَانَ لَا يَقْرَأُ فِي الصَّلوةِ عَلَى الْجَنَازَة - رواه مالك في الموطاء
হযরত মালেক ইবনে উমর (রাঃ) জানাযার নামাযে কিরআত পাঠ করেন নাই। মুওয়াত্তায়ে মালেকে তা বর্ণিত আছে। ইমাম মালেক (রঃ) জানাযার নামাযে কিরআত পাঠ না করার আমল গ্রহণ করেছেন। ইমাম মালেক (রঃ) বলেন, মদীনায় যেখানে সাহাবী ও তাবিয়ীদের কেন্দ্র ছিল, সেখানেও তাঁরা জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন না। তাছাড়া, পরবর্তীতে কুফায় সাহাবী ও তাবিয়ীগণ জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করার আমল করেন নাই। এই কারণেই ইমাম আ'যম আবূ হানীফা (রঃ) জানাযার নামাযে কিরআত পাঠ না করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
উপরোক্ত কিতাবে এই মর্মে আরও হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে:
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ وَابْنِ عُمَرَ رَض أَنَّهُمَا قَالَا لَيْسَ في الجنَازَةِ قِرَاءَهُ شَيْ مِنَ الْقُرْآنِ -
অর্থাৎ হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ এবং হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, জানাযার নামাযে কোরআনের কোন অংশ পাঠ করতে হবে না।
প্রসিদ্ধ ফতওয়ার কিতাব 'ফতওয়ায়ে আলমগীরী'তে উল্লেখ হয়েছে যে, জানাযার নামাযে যদি দো'আর নিয়তে সূরা ফাতিহা পাঠ করা হয়, তবে কোন দোষের কিছু হবে না। যে সকল হাদীসে জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার কথা উল্লেখ হয়েছে, তা দো'আ পাঠ করা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে-কিরআত পাঠ হিসেবে নয়।
ইমাম তাহাবী ও ইমাম ইবনে হুমাম অনুরূপ উক্তি করেছেন। তা আইনী শরহে বুখারী, তা'লীক শরহে মিশকাত ও আওজাযুল মাসালিক প্রভৃতি কিতাবে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ না করার বিষয় উল্লেখ হয়েছে। (তানযীমুল আশতাত (উর্দু), ১ম খণ্ড, পৃঃ-৫১০)
৮। 'ফতওয়ায়ে আলমগীরী'তে লিখিত জানাযার নামায আদায় করার পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হল:
"প্রথমে নামায শুরুর তাকবীর বলবে, তারপর দ্বিতীয় তাকবীর বলে নবী (সাঃ)-এর উপর দরূদ পড়বে। তারপর তৃতীয় তাকবীর বলে মুরদাহ এবং মুসলমানদের (জীবিত ও মৃত) জন্য দো'আ পাঠ করবে। এর জন্য কোন নির্দিষ্ট দো'আ নেই, তবে রাসূলে কারীম (সাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি নিম্নোক্ত দো'আ পাঠ করতেন। যথাঃ
اللهُمَّ اغْفِرْ لِحَيْنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا ……….
যদি মুরদাহ নাবালেগ হয়, তবে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নিম্নোক্তরূপ দো'আ পড়তে হবে। যথা:
وَمُشَفْعًا ……………………اللهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَاجْعَلْهُ
এই দো'আ পাঠ করবার পর চতুর্থ তাকবীর বলবে এবং সালাম ফিরাবে। চতুর্থ তাকবীরের পর এবং সালামের আগে কোন কিছু পড়তে হবে না। তা শরহে জামে' সগীরে বর্ণিত আছে।
এই নামাযে তাকবীর ব্যতীত সমস্ত দো'আ-দরূদ চুপে চুপে পাঠ করবে। তা তাবিয়ীনে বর্ণিত আছে। এই নামাযে কোরআন পাঠ করবে না। তবে সূরা ফাতিহা দো'আর নিয়তে পাঠ করলে কোন দোষ নেই। কিরআতের নিয়তে পড়লে জায়েয হবে না। জাহের রেওয়ায়েত অনুযায়ী জানাযার নামাযে প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য কোন তাকবীরে হাত উঠাবে না। ইমাম ও মুকতাদি উভয়ের প্রতিই এই হুকুম প্রযোজ্য। তা 'কাফী'র মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। উভয় সালামের মধ্যেই মৃত ব্যক্তির নিয়ত করবে না। বরং প্রথম সালামে ডানের লোকের নিয়ত করবে এবং দ্বিতীয় সালামে বামের লোকের নিয়ত করবে। তা সিরাজুল ওয়াহ্হাজে বর্ণিত আছে। (বংগানুবাদ ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৩০৮)
উপরোল্লেখিত প্রমাণাদির ভিত্তিতে সুষ্ঠু প্রতীয়মান হয় যে, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা পাঠ করা যাবে না। তবে দো'আ বা ছানার নিয়তে পাঠ করা যেতে পারে।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ অনুসারে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৯) চার তাকবীরে জানাযার নামায | (০১১) 'কিয়াস' শরীআতের একটি অকাট্য দলীল |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |