জানাযার নামায বাস্তবে আল্লাহ পাকের নিকট মৃত ব্যক্তির জন্য দো'আ করা। জীবিত লোকদের মধ্যে যারা মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছে তাদের ওপর জানাযার নামায ফরযে কিফায়া। এই নামাযের নিয়ম হল, প্রথমে নিয়ত করে 'আল্লাহু আকবার' বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমার মত বেঁধে 'ছানা' পড়বে। তারপর দ্বিতীয়বার 'আল্লাহু আকবার' বলবে। কিন্তু হাত বাঁধবে না। তাকবীর বলে দরূদ শরীফ পড়বে। অতঃপর তৃতীয় তাকবীর বলে মৃত ব্যক্তির জন্য দো'আ পড়বে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে দু'দিকে সালাম ফিরাবে। ছানা, দরূদ ও দো'আ পড়বে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে দু'দিকে সালাম ফিরাবে। ছানা, দরূদ ও দো'আ পাঠ করা সুন্নাত। কিন্তু চার তাকবীর। ফরয। আহলে হাদীস (লা-মাযাহাবী) সম্প্রদায় জানাযার নামাযে পাঁচ তাকবীর বলে থাকেন। কিন্তু আমরা হানাফীগণ জানাযার নামাযে চার তাকবীর বলে থাকি। প্রমাণ নিচে পেশ করা হল:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَض أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى عَلَى النَّجَاشِي فَكَبَّرَ ارْبَعًا قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ وَابْنِ أَبِي أوفى وَجَابِرٍ وَيَزِيدَ بْنِ ثَابِتٍ وَأَنَسٍ قَالَ أَبُو عِيسَى وَيَزِيدُ بْنُ ثَابِتٍ هُوَ أَخُوزَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ وَهُوَ أَكْبَرُ مِنْهُ شَهِدَ بَدْرًا وَزَيْدٌ لَمْ يَشْهَدُ بدرًا قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةً حَدِيثُ حَسَنٌ صَحِيحُ وَالْعَمَلُ عَلَى هُذَا عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَغَيْرِهِمْ يَرَوْنَ التَّكْبِيرُ عَلَى الْجَنَارَةِ أَرْبَعُ تكبيراتٍ وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِى وَمَالِكِ بْنِ أَنَسٍ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَ الشَّافِعِي وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ -
অনুবাদ: হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) নাজ্জাশীর জন্য জানাযার নামায আদায় করেন এবং এতে তিনি চারবার তাকবীর পাঠ করেন। এ বিষয়ে ইবনে আব্বাস, ইবনে আবু আওফা, জাবির, আনাস ও ইয়াযীদ ইবনে ছাবিত (রাঃ হুম) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে।
ইমাম আবু ঈসা (রহঃ) বলেন, ইয়াযীদ ইবনে ছাবিত (রাঃ) হলেন যায়দ ইবনে ছাবিত (রাঃ)-এর ভাই। তিনি ছিলেন বড়। তিনি বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। কিন্তু যায়দ বদরে শরীক ছিলেন না। ইমাম আবু ঈসা (রাঃ) আরও বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ্।
অধিকাংশ সাহাবী ও অপরাপর আলিমের এই হাদীসের ওপর আমল রয়েছে। তাঁরা জানাযার নামাযে চার তাকবীর পাঠ করার মত গ্রহণ করেছেন। এটা সুফইয়ান সওরী, মালিক ইবনে আনাস, ইবনে মুবারক, শাফিয়ী, আহমদ ও ইসহাক (রঃ)-দের অভিমত।
জামে তিরমিযী শরীফ, মুতারজম উর্দু, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৭৮
أبو حَنِيفَةَ عَنْ حَمَّادٍ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنْ غَيْرِ وَاحِدٍ أَنَّ عُمَرَبْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ جَمَعَ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم فَسَأَلَهُمْ عَنِ التَّكْبِيرِ قَالَ لَهُمْ أَنْظُرُوا أُخِرَ جَنَازَةٍ كَبَّرَ عَلَيْهَا النَّبِى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَاجَدُوهُ قَدْ كَبَّرَ أَرْبَعًا حتى قَبَضَ قَالَ عُمَرُ فَكَبِّرُوا أَرْبَعًا -
অনুবাদ: অনেক বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীদের থেকে বর্ণিত আছে, হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) নবী করীম (সাঃ)-এর অনেক সাহাবা (রাঃ) কে একত্রিত করে জানাযার তাকবীর সম্পর্কে তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করে বলেন, তোমরা নবী (সাঃ)-এর ঐ শেষ নামাযকে স্মরণ কর, যাতে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং ঐ নামাযে তিনি কয়টি তাকবীর বলেছিলেন। তখন সাহাবায়ে কেরাম চিন্তা করে বললেন, তিনি ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত চার তাকবীর বলেছিলেন। সুতরাং হযরত উমর (রাঃ) জানাযার নামাযে চার তাকবীর বলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
মুসনাদে ইমাম আযম আবূ হানীফা, বাবুল জানায়েয, হাদীস নং ১৯০
চারজন ইমাম এই বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন যে, জানাযার নামাযে চার তাকবীর সঠিক। কেননা, অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের এই বিষয়ে ঐক্যমত রয়েছে। 'হাকীম মুস্তাদরাক' নামক গ্রন্থে এবং 'আবু নাঈম হুলিয়া' নামক গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনা করেন যে, ফিরিশতাগণ হযরত আদম (আঃ)-এর ওপর নামায পড়ার সময় চার তাকবীর বলেছেন এবং আরও বলেছেন, হে বনী আদম! তোমাদের জন্য এটাই সুন্নাত। নবী করীম (সাঃ)-এর জানাযার তাকবীর সর্বশেষ আমল হিসাবে কয়টি ছিল এই ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ ছিল এই যে, তিনি বাইয়াতে রিদওয়ান ও বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জানাযায় নয় তাকবীর এবং যাঁরা শুধু বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের জানাযায় সাত তাকবীর বলেছিলেন। এছাড়া তিনি সকল জানাযায় চার তাকবীর বলেছিলেন।
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى النَّجَاشِي فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيْهِ وَخَرَجَ بِهِمْ إِلَى الْمُصَلَّى فَصَفَ بِهِمْ وَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ -
অনুবাদ: হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রাঃ) হতে বর্ণিত। যেদিন নাজ্জাশীর বাদশাহ মৃত্যুবরণ করেছিলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সংবাদ দিয়েছিলেন এবং লোকদেরকে নিয়ে তিনি ঈদগাহে গেলেন। তারপর তিনি কাতারবন্দি হয়ে চার তাকবীরে জানাযার নামায আদায় করলেন।
মুওয়াত্তায়ে ইমাম মুহাম্মদ, মুতারজম উর্দু, পৃঃ-১৩৫
উল্লেখ্য যে, বুখারী ও মুসলিম হাদীস গ্রন্থদ্বয়ে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
عن جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى عَلَى أَصْحَمَةَ النَّجَاشِي فَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعًا -
অনুবাদ: হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আস্হামাহ নাজ্জাশীর জানাযার নামায আদায় করেছেন এবং নামাযে চার তাকবীর বলেছেন।
মুসলিম শরীফ, কিতাবুল জানায়েয, হাদীস নং-২০৭৪
عنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَض أَنَّهُ قَالَ نَعَى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّجَاشِي صَاحِبَ الْحَبَشَةِ فِي الْيَوْمِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ فَقَالَ اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَحَدَّثَنِي سَعِيدُ بْن المسيب أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَفًّ بِهِمْ بِالْمُصَلَّى فَصَلَّى فَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ -
অনুবাদ: হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আবিসিনিয়ার অধিপতি নাজ্জাশীর যে দিন মৃত্যু হয় সেদিন রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দিলেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। ইবনে শিহাব (রঃ) বলেন, সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব আমাকে বলেছেন যে, আবূ হুরায়রা তাঁর কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সাঃ) তাঁদেরকে নিয়ে নামাযের স্থানে কাতার করলেন। অতঃপর তিনি নামায আদায় করলেন এবং জানাযায় চার তাকবীর বললেন।
মুসলিম শরীফ, কিতাবুল জানায়েয, হাদীস নং ২০৭২
عنِ الشَّعْبِى أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى عَلَى قَبْرٍ بَعْدَ مَا دُفِنَ فَكَبَّرَ عَلَيْهِ أَرْبَعًا قَالَ الشَّيْبَانِي فَقُلْتُ للشعبى مَنْ حَدَّثَكَ بِهذَا قَالَ التَّقَةُ عَبْدُ اللَّهِ بْن عَبَّاسٍ هذا لفظ حَدِيثٍ حَسَنٍ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ نُمَيْرٍ قَالَ انْتَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى قَبْرٍ رُطَبٍ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَصَلُّوا خَلْفَهُ وَكَبَّرَ ارْبَعًا قُلْتُ لِعَامِرٍ مَنْ حَدَّثَكَ قَالَ التَّقَةُ مَنْ شَهِدَهُ إِبْنُ عباس -
অনুবাদ: হযরত শা'বী (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূল (সাঃ) জনৈক মৃত ব্যক্তির দাফন করার পর কবরের সম্মুখে জানাযার নামায আদায় করলেন এবং এতে চার তাকবীর বলেছিলেন। শায়বানী বলেন, আমি শা'বীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনার কাছে এই হাদীস কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, নির্ভরযোগ্য রাবী (বর্ণনাকারী) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)। এই পর্যন্ত হাসান হতে বর্ণিত হাদীসের শব্দাবলী। কিন্তু ইবনে নুমায়ের (রঃ) তার (জনৈক ব্যক্তি) জানাযার নামায আদায় করলেন এবং সাহাবীগণ তাঁর পশ্চাতে দাঁড়ালেন। আর রাসূল (সাঃ) চার তাকবীর বললেন। আমি আমেরকে জিজ্ঞেস করলাম, এই হাদীসটি তোমার নিকটে কে বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)।
মুসলিম শরীফ, কিতাবুল জানায়েয, হাদীস নং ২০৭৮
عن عبدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى لَيْلى قَالَ كَانَ زَيْدٌ يُكَبِّرُ عَلَى جَنَائِزِنَا أَرْبَعًا وَإِنَّهُ كَبَّرَ عَلَى جَنَازَةٍ خَمْسًا فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُهَا -
অনুবাদঃ আবদুর রহমান ইবনে আবু লায়লা (রহঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, যায়দ (ইবনে আরকাম) (রাঃ) জানাযার নামাযে চারবার তাকবীর বলতেন। একবার জানাযায় পাঁচবার তাকবীর বলেছিলেন। তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূল (সাঃ) ও পাঁচবার বলেছেন।
মুসলিম শরীফ, কিতাবুল জানায়েয, হাদীস নং ২০৮৩
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীসটি মুসলিম শরীফ ছাড়া আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহতে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, হযরত যায়দ ইবনে আব্বাস (রাঃ) সাধারণত জানাযার নামাযে চারটি তাকবীরই বলতেন। কিন্তু একবার পাঁচটি তাকবীর বলায় আমি কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি বললেনঃ নবী করীম (সাঃ) এই পাঁচটি তাকবীরই বলতেন।
ইবনে আবদুল বার তাঁর الإسْتدْرَالُ কিতাবে একটি হাদীস উল্লেখ
করেছেন, তাতে বলা হয়েছে:
كانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ عَلَى الْجَنَائِزِ أَرْبَعًا وَخَمْسًا وَسَبْعًا وَثَمَانِيَةً حَتَّى جَاءَ مَوْتُ النَّجَاشِي فَخَرَجَ فَكَبَّرَ أَرْبَعًا ثُمَّ ثَبَتَ عَلَى أَرْبَعٍ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالَى
নবী করীম (সাঃ) জানাযার নামাযে চার, পাঁচ, সাত, আট তাকবীর বলতেন। পরে নাজ্জাশীর মৃত্যুর সংবাদ আসলে নবী করীম (সাঃ) বের হয়ে জানাযার নামায পড়লেন ও তাতে চার তাকবীর বললেন। অতঃপর এই নিয়মের উপরই তিনি মৃত্যু পর্যন্ত অবিচল থেকেছেন।
এ হতে বুঝা যায়, প্রথম দিকে জানাযার নামাযে চারটির অধিক তাকবীর বললেও নবী করীম (সাঃ)-এর শেষ ও স্থায়ী নিয়ম হলো চারটি তাকবীর বলা। তাবরানী হাদীসের কিতাবে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন:
"তোমরা তোমাদের মৃতদের উপর জানাযার নামায রাত দিনে পড়। সে ছোট-বড়, নীচ ও ধনী যে-ই হোক-চার তাকবীর সহকারে।"
এটাই নবী করীম (সাঃ) এর শেষ হিদায়েত।
প্রখ্যাত ইমাম শাওকানী লিখিছেন:
وَإِلَى مَشْرُوعِيَّةِ الْأَرْبَعِ التَّكْبِيرَاتُ فِي الْجَنَازَةِ ذَهَبَ الْجَمْهُورُ
জানাযার নামাযে চারটি তাকবীর বলার বিধি-ব্যবস্থা হওয়াই সর্ব সাধারণ ফিকাহবিদদের মত।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমাম তিরমিযী বলেছেন: "নবী করীম (সাঃ)-এর সাহাবী ও অন্যান্য অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে জানাযা নামাযের এটাই সঠিক নিয়ম। তাঁরা সকলেই জানাযার নামাযে চারটি তাকবীর দেওয়ার মত পোষণ করতেন।
ইবনে আবদুল বার (রঃ) বলেছেন:
وَانْعَقَدَ الْإِجْمَاعُ بَعْدَ ذَلِكَ عَلَى أَرْبَع
জানাযার নামাযের তাকবীর সম্পর্কে সাহাবীদের মতভেদ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চারটি তাকবীর বলার উপরই তাঁদের এজমা হয়েছে। ইবনে লায়লা ছাড়া কেউই চারটির স্থলে পাঁচটি তাকবীর বলার কথা বলেন নাই।
(নায়লুল আওতার দ্রঃ)
বিভিন্ন হাদীস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইমাম আবূ হানীফাসহ অধিকাংশ উলামার মাযহাব এই যে, চার তাকবীরে জানাযার নামায। চার তাকবীরের অধিক যা রাসূল (সাঃ)-এর প্রাথমিক যমানায় ছিল, তা রাসূল (সাঃ)-এর শেষ জীবনে তাঁর এই কার্যক্রম দ্বারা মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে।
নবী করীম (সাঃ) ইন্তেকালের পর অনুরূপভাবে সাহাবাদের এজমা বা ঐক্যমত দ্বারা পাঁচ তাকবীর মানসূখ হয়ে চার তাকবীর নির্ধারিত হয়। বস্তুত হাদীসের বর্ণনায় হযরত যায়দ ইবনে সাবিত (রাঃ) যদিও জানাযার নামাযে পাঁচ তাকবীর বলেছেন বটে, কিন্তু তা শুধু একবার ছিল। সুতরাং এর কোন গুরুত্ব নেই। হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, চার তাকবীর বলাই তাঁর অভ্যাস ছিল। "মা'আনিউল আছার" কিতাবে অনুরূপ লিখিত আছে।
উপরোক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, জানাযার নামাযের তাকবীরের ব্যাখ্যা কত এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে পরিশেষে চার তাকবীরের উপর সকলের এজমা বা ঐক্যমত হয়েছে। বিভিন্ন ফতওয়ার কিতাবে তা উল্লেখিত হয়েছে। (হিদায়া, ১/১৬০ পৃঃ, দুররুল মুখতার, ১/১২২ পৃঃ; শরহে বিকায়া, ১/২৫৩ পৃঃ; নূরুল হিদাযা, ১/২৪৯-২৫০ পৃঃ; বাহরুর রায়েক, ১/১৮৩ পৃঃ; মালাবুদ্দামিনহু, ৯৩ পৃঃ; ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ১/১৬১পৃঃ)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৮) ছয় তাকবীরে ঈদের নামায | (০১০) সূরা ফাতিহা ব্যতীত জানাযার নামায |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |