ঈদের নামাযের নিয়ম-কানুন অন্যান্য নামায হতে একটু আলাদা। দুই রাকআত নামাযে ছয় বার অতিরিক্ত তাকবীর বলতে হয়। তাকবীরে তাহরীমার পর সূরা ফাতিহা শুরু করার পূর্বে প্রথম রাকআতে তিন তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে কিরাআত শেষ করার পর রুকু করার পূর্বে তিন তাকবীর বলতে হয়। ঈদের নামাযে এরূপে ছয় বার তাকবীর বলা ওয়াজিব।
নবী করীম (সাঃ) ও সাহাবীগণ অনুরূপভাবে ছয় তাকবীরের সাথে ঈদের নামায পড়তেন। এ জন্যই হানাফীগণ ছয় তাকবীরের সাথে ঈদের নামায আদায় করে থাকেন। নিচে এর প্রমাণাদি পেশ করা হল।
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِ قَالَ سَأَلْتُ أَبَا مُوسَى وَحُذَيْفَةً كَيْفَ كَانَ رسولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكَبِّرُ فِي الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ فَقَالَ أَبُو مُوسَى يُكَبِّرُ أَرْبَعًا تَكْبِيرَةً عَلَى الْجَنَائِزِ فَقَالَ حُذَيْفَهُ صَدَق
অর্থ: হযরত সাঈদ ইবনুল আস হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি আবূ মূসা (রাঃ) ও হুযায়ফা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের নামাযে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিরূপে তাকবীর বলতেন? অতঃপর হযরত আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, জানাযার তাকবীরের ন্যায় (তাকবীরে তাহরীমাসহ) চারবার তাকবীর বলতেন। তখন হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, হযরত আবূ মূসা (রাঃ) সত্য কথাই বলেছেন।
মিশকাত শরীফ, সালাতুল ঈদাইন অনুচ্ছেদ, পৃঃ-১২৬
روى عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رض أَنَّهُ قَالَ فِي التَّكْبِيرِ فِي الْعِيدَيْنِ تسْعُ تَكْبِيرَاتٍ فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى خَمْسُ تَكْبِيرَاتٍ قَبْلَ الْقِرَأُةِ وفِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ يَبْدَأُ بِالْقِرَأَةِ ثُمَّ يُكَبِّرُ أَرْبَعًا مَعَ تَكْبِيرَةِ الرُّكُوعِ وَقَدْ رُوِيَ عَن غَيْرِ وَاحِدٍ مِّنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَ هذَا وَهُوَ قَوْلُ أَهْلِ الْكُوفَةِ وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِي -
অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি উভয় ঈদের নামাযে নয় তাকবীরের কথা বলেছেন। প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীরসহ মোট পাঁচ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে রুকুর তাকবীরসহ কিরআতের পর মোট চার তাকবীর। অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমার এক তাকবীর এবং দুই রুকুর দুই তাকবীরসহ মোট নয় তাকবীর বলতেন। এই তিন তাকবীর ব্যতীত ঈদের নামাযে মাত্র ছয় তাকবীর বলতেন। নবী করীম (সাঃ)-এর একাধিক সাহাবা হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। এটাই কুফাবাসীদের অভিমত এবং হযরত সুফইয়ান সওরীও অনুরূপ বলেছেন।
জামে তিরমিযী মুতারজম উর্দু, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৯২
أَخْبَرَنَا مَالِكَ أَخْبَرَنَا نَافِعُ قَالَ شَهِدْتُ الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ مَعَ أبي هُرَيْرَةً فَكَبَّرَ فِي الأولى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ قَبْلَ الْقِرَاءَةِ وَ فِي الْآخِرَةِ خَمْس تَكْبِيرَاتٍ قَبْلَ الْقَرَاء ةِ - قَالَ مُحَمَّدٌ قَدْاخْتَلَفَ النَّاسُ فِي التَّكْبِيرِ فِي الْعِيدَيْنِ فَمَا أَخَذْتَ بِهِ فَهُوَ حَسَنُ وَأَفْضَلُ ذلِكَ عِنْدَ نَا مَارَوَى إِبْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهُ كَانَ يُكَبِّرُ فِي كُلِّ عِيدٍ تِسْعًا وَارْبَعًا فِيهِنَّ تَكْبِيرَةُ الافتتاح وتكبيرة الركوع ويُوَالِي بَيْنَ الْقِرَاء تَيْنِ وَيُؤَخِّرُهَا فِي الْأُولَى وَيُقَدِّمُهَا فِي الثَّانِيَةِ وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللهُ -
অর্থ: হযরত নাফে (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামায পড়েছি। তিনি প্রথম রাকআতে কিরআতের পূর্বে সাত তাকবীর দিয়েছেন এবং দ্বিতীয় রাকআতে কিরআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিয়েছেন। ইমাম মুহাম্মদ (রহঃ) বলেছেন, দুই ঈদের সম্পর্কে মানুষের মধ্যে মতভেদ আছে। যে কোন একটির ওপর আমল করলে যথেষ্ট হবে। আমাদের নিকট হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাই উত্তম। তিনি প্রত্যেক ঈদের নামাযে নয় তাকবীর বলেন। প্রথম রাকআতে পাঁচ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে চার তাকবীর বলতেন। তাকবীর তাহরীমা এবং রুকুর তাকবীরসহ এই নয় তাকবীর। তিনি প্রথম রাকআতের প্রথমে এবং দ্বিতীয় রাকআতের শেষে তাকবীর বলতেন। আর তিনি প্রথম রাকআতে তাকবীরের পর এবং দ্বিতীয় রাকআতে তাকবীরের আগে কিরআত পড়তেন। এটাই আবূ হানীফা (রঃ)-এর অভিমত।
উক্ত কিতাবে উল্লেখ হয়েছে যে, দুই ঈদের তাকবীর সম্পর্কে সাহাবাদের মধ্যে অভিমত পেশ করেছেন। হানাফীগণ প্রথম শ্রেণীর সাহাবা এবং নবী করীম (সাঃ)-এর খাদেম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর বর্ণনাকে পছন্দ করেছেন এবং আমল করেছেন। (মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (উর্দু), পৃঃ-১০২)
إِنَّ الْقَاسِمَ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ حَدِيثَهُ قَالَ حَدَّثَنِي بَعْضُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صلعم يَوْمَ عِيدٍ فَكَبَّرَ أَرْبَعًا وَارْبَعًا أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ حِيْنَ انْصَرَفَ قَالَ لَا تَنْسَوْا كَتَكْبِيرِ الْجَنَائِزِ وَأَشَارَ بِاصَابِعِهِ وَقَبَضَ إِبْهَامَهُ قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ فَاحْتَمَلَ بِأَنْ يَكُونَ الْأَرْبَعُ سِوَى تَكْبِيرَةِ إِلَّا فتتاح -
অর্থ: হযরত আবূ আবদুর রহমান কাসিম (রাঃ) বলেছেন: রাসূল (রাঃ)-এর জনৈক সাহাবী আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, এক সময় নবী করীম (সাঃ) আমাদের সংগে ঈদের নামায আদায় করলেন। তিনি উভয় রাকআতেই চার তাকবীর বললেন। নামায শেষ করে তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরায়ে বললেন, তোমরা ভুলে যেও না ঈদের নামাযের তাকবীর জানাযার নামাযের তাকবীরের ন্যায়। এর পর রাসূল (সাঃ) চার আংগুলের দিকে ইংগিত করলেন এবং বৃদ্ধাংগুলি বন্ধ করে ফেললেন। (ইমাম) আবু জাফর বলেছেন, প্রথম রাকআত সম্ভবত তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত চার তাকবীর ছিল।
শরহে মা'আনিউল আছার, ২য় খণ্ড, পৃঃ-৩৩৩
وَفِي الْبَيْهَقِي عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَمَّارِ بْنِ سَعْدٍ وَعُمَرَ بْنِ حَفْصِ بْنِ عُمَرَ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أبَاءِ هِمْ عَنْ أَحَدِهِمْ أَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَبَّرَ فِي الْأَولَى سَبْعًا وَفِي الثَّانِي خَمْسًا لیکن امام اعظم وسفیان ثوری و ابن مسعود الانصاری و ابوموسی اشعری وغيرهم كے نزديك ركعت اولی میں تکبیر احرام کے بعد قبل القرأة تين تكبیر اور رکعت ثانیه میں بعد القرأة تين تكبير -
অর্থ: বায়হাকী হাদীস গ্রন্থে ইরশাদ হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) (ঈদের নামাযে) প্রথম রাকআতে সাত বার এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচ বার তাকবীর বলতেন। কিন্তু ইমাম আযম, সুফইয়ান সওরী, ইবনে মাসউদ আনসারী এবং আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) প্রমুখের নিকটে প্রথম রাকআতে তাকবীরে তাহরীমার পর কিরআতের পূর্বে তিন তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে কিরআতের পর তিন তাকবীরের অভিমত প্রকাশ করেছেন।
তানযীমুল আশতাত (উর্দু) শরাহ মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৭৫
একথা প্রকাশ থাকে যে, প্রথম রাকআতের তাকবীরে তাহরীমা, রুকু ও সেজদার তাকবীরসহ সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআত ও রুকুর তাকবীরসহ পাঁচ তাকবীর বলে উপরোক্ত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে।
نیز طحاوی کی باب التكبير على الجنائز كي ايك طويل حدیث میں هے كه تكبير على الجنائز سات هی یا پانچ یا چار، اس میں اختلاف ہے۔ حضرت ابو بکر صدیق رض کی وفات کے بعد تک رہا، جب حضرت عمر رض خليفه ہوکر به اختلاف دیکھا تو بعض رجال من الصحابه کو جمع کرکے فرمایا كه انظروا امرا تجتمعون عليه فاجمعوا أمرهم على ان يجعلوا التكبير على الجنائز مثل التكبير في الاضحى والفطر اربع تکبیرات، اب عید میں بھی چار تکبیر ھونے پر صحابہ کا اجماع هوگیا۔
অর্থ: তাহাবী শরীফে জানাযা নামাযের তাকবীর সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, জানাযার নামাযের তাকবীর সাত অথবা পাঁচ অথবা চার সম্পর্কে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর ইন্তেকাল পর্যন্ত মতভেদ ছিল।
হযরত উমর (রাঃ) খলীফা হওয়ার পর উক্ত মতভেদ দেখে এক দল সাহাবাকে একত্রিত করে বললেন: তাকবীরের মতভেদ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করে ঐক্যের অবলম্বন কর। অতঃপর তারা ঐক্যমত পোষণ করেন যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার তাকবীর তাহরীমাসহ চার তাকবীরে জানাযার নামায। অতএব প্রমাণিত হয় যে, চার তাকবীরের ঈদের নামায (তাব্বীর তাহরীমাসহ) সাহাবাগণের ঐক্যমত (ইজমা) হয়ে গেছে।
তানযীমুল আশতাত (উর্দু) শরাহ মিশকাতুল মাসাবীহ, ১ম খণ্ড, পৃঃ-৪৭৬
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ رض عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِهِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَبَّرَ فِي عِبْدٍ ثِنْتَى عَشَرَةَ تَكْبِيرَةٌ سَبْعًا فِي الأُولَى وَخَمْسًا فِي الْآخِرَةِ وَلَمْ يُصَلِّ قَبْلَهَا وَلَا بَعْدَهَا -
হযরত আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা হতে- তাঁর দাদা হতে বর্ণিত হয়েছেঃ নবী করীম (সাঃ) ঈদের নামাযে বারটি তাকবীর বলেছেন। তন্মধ্যে সাতটি প্রথম রাকআতে ও পাঁচটি দ্বিতীয় রাকআতে তাকবীর দিয়েছেন। এর পূর্বেও নামায পড়েন নাই, এর পরও না।
উপরোল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও প্রখ্যাত আলিম মাওঃ আবদুর রহীম সাহেব রচিত গ্রন্থ হাদীস শরীফ দ্বিতীয় খণ্ডে যা লিখেছেন, তা নিচে উদ্ধৃত করা হল।
ঈদের দুই রাকআত নামাযে অতিরিক্ত কতটি তাকবীর দিতে হবে এবং তা কোন কোন সময় দিতে হবে এই পর্যায়ে বহু সংখ্যক হাদীস বর্ণিত ও গ্রন্থসমূহে উদ্ধৃত হয়েছে। এর ফলে হাদীসবিদদের মধ্যেও এই উভয় পর্যায়ে কতটি তাকবীর দিতে হবে এবং কোন কোন সময় দিতে হবে- বিরাট মতভেদের উদ্ভব হয়েছে এবং বিভিন্ন লোক (বিদ্বান) বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
আমি সেই সকল মতসমূহের মধ্যে কয়েকটি মত উল্লেখ করলাম।
প্রথম মতটি উপরে উদ্ধৃত ও এই অর্থে বর্ণিত অপর কয়টি হাদীসের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। হযরত হাসানের সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) ঈদের নামাযেই প্রথম রাকআতে সাতটি ও দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি তাকবীর বলেছেন। মূলত এই হাদীসটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর, ইবনে আমর, জাবির ও ও হযরত আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। দ্বিতীয় মতটির উৎস হযরত আবূ মূসা (রাঃ) ও হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রথমে এই মতের সমর্থনে ফতওয়া দিয়েছিলেন। এই মতের ব্যাখ্যা এই যে, হাদীয়ে মোট চারটি তাকবীরের উল্লেখ হয়েছে, তাকবীর তাহরীমাও এর মধ্যে গণ্য। ফলে অতিরিক্ত তাকবীর হয় মাত্র তিনটি। অবশ্য দ্বিতীয় রাকআতের ব্যাপারে এই ব্যাখ্যা অচল। তৃতীয় মত হযরত আবূ মূসা হযরত হুযায়ফা বর্ণিত হাদীস হতে গৃহীত। চতুর্থ মতের উৎস আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীস।
তাকবীরসমূহ এক সংগে ও পরপর মিলিতভাবে দেওয়া হবে, না কোন হামদ বা তাস্বীহ পাঠ দ্বারা এদের মাঝে পার্থক্য করা হবে। এ পর্যায়ে ইমাম মালিক, ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আওযায়ী বলেছেনঃ
তাকবীরসমূহ রুকু-সিজদার তাসবীহ পড়ার মতই মিলিত ও পরপর দিতে হবে। কেননা হাদীসের বর্ণনাসমূহ তাকবীরগুলোর মাঝে পার্থক্য করার ও পরপর না দেওয়ার কোন কথা বলা হয় নাই। অবশ্য ইমাম শাফিয়ী তাকবীরসমূহের মাঝে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বা সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ইত্যাদি দোআ-তাসবীহ পাঠ করে পার্থক্য করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। (নায়লুল আওতার)
হাদীস শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, প্রণেতা-মাওঃ আবদুর রহীম, পৃঃ-২৭১-২৭৪
وَمِنْهَا فِي الأولى ثَلَاثُ بَعْدَ تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ وَفِي الثَّانِيَةِ ثَلَاثَ بَعْدَ الْقِرَأَةِ وَهُوَ رُوِيَ عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ وَأَبِي مُوسَى أَبِي مَسْعُودٍ الْأَنْصَارِي وَهُوَ قَولُ الثَّوْرِي وَأَبِي حَنِيفَة
অর্থাৎ ঈদের নামাযের তাকবীর সম্বন্ধে এটা একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি। তাকবীর তাহরীমার পর রাকআতে তিন তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতে কিরআতের পর তিন তাকবীর। হযরত ইবনে মাসউদ, আবূ মূসা ও আবূ মাসউদ (রাঃ হুম) হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। এটাই সুফইয়ান সওরী ও ইমাম আবু হানীফার অভিমত।
আবু দাউদ শরীফের হাশিয়া, ১ম খণ্ড, পৃঃ-১১৪
"ইমাম দুই রাকআত নামায পড়বে। প্রথম তাকবীর বলে ছানা পড়ে তিনবার তাকবীর বলবে। তারপর উচ্চ শব্দে কিরআত পড়বে, তারপর রুকু-সিজদাহ্ করবে। দ্বিতীয় রাকআতে দাঁড়িয়ে গিয়ে প্রথমে কিরআত পড়ে তারপর তিনবার তাকবীর বলবে। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকূতে যাবে।
ঈদের নামাযে এরূপ অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলতে হয়। তিনবার প্রথম রাকআতে বলতে, হয় এবং তিনবার দ্বিতীয় রাকআতে বলতে হয়। উভয় রাকআতে কিরআত পড়তে হয় এবং অতিরিক্ত তাকবীরসমূহে কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হয়। এক তাকবীর হতে অন্য তাকবীর যেতে তিন তাসবীহ পরিমাণ থামতে হয়। এটা 'তাবিয়ীন' নামক কিতাবে বর্ণিত আছে।
অতিরিক্ত তাকবীরসমূহ বলার সময়ে দু'হাত দু'কান পর্যন্ত উঠিয়ে আবার ছেড়ে দিবে। নামাযের পরে দু'টি খুতবাহ পাঠ করতে হয়। দুই খুতবার মধ্যস্থলে সামান্য সময় ইমামের বসতে হয়। তা হানাফীদের প্রামাণ্য ফতওয়ার কিতাব কাজীখানে বর্ণিত আছে।"
বংগানুবাদ ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃঃ-২৭৭
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ঈদের নামাযে ছয় তাকবীরের আমল সঠিক ও হাদীসসম্মত।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৭) তারাবীর নামায আট রাকআত নয়- বিশ রাকআত | (০০৯) চার তাকবীরে জানাযার নামায |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |