[আরবী]
(পারার ৩ সুরা আলে ইমরান - রুকু ৪)
অর্থাৎঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ। "আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদিগকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল আর পরম দয়ালু।'
এ আয়াত খানিতে লোকদেরকে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার পথ বাতানো হয়েছে। যদ্বারা আল্লাহর হাবীব (দঃ)রই উচ্চ মর্যাদা খুব ভালভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। মক্কার মুশরিকরা দাবী করতো যে, আমরাই আল্লাহর প্রিয়। এই প্রেক্ষিতে তাদেরকে আদেশ দেয়া হলো, সত্যিই যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে প্রথম আমার মাহবুব (দঃ) এর গোলামী মেনে নাও। এদ্বারা এমন হবে যে, এখন তো তোমরা আল্লাহকে খুঁজে বেড়াচ্ছ এবং আল্লাহকে তোমাদের বন্ধু বলে দাবী করছ। কিন্তু হাবীব (দঃ) এর গোলামীর কারণে স্বয়ং আল্লাহ্ তোমাদেরকে টেনে নিবেন এবং তোমাদেরকে তাঁর দোস্ত করে নিবেন এবং তোমাদের সমস্ত গুণাহ্ মাফ করে দিবেন।
অতএব এই আয়াত দ্বারা ভালভাবেই বুঝা গেল যে, হুযুর আকরম (দঃ) এর গোলামীর বদৌলতে আল্লাহর দরবার হতে বহিষ্কৃত বান্দাও পুনরায় আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায় এবং এতে তার জীবনের সমস্ত গুনাহও মাফ হয়ে যায়।
[উর্দূ]
অর্থাৎ-হে রাসূল (দঃ)। 'গুণাহগারদের উপর যখন আপনার করুণা বর্ষিত হবে, তখন আপনার নিকট ভাল মন্দের কোন ব্যবধান থাকবে না।
পশ্চাতে পশ্চাতে চলাকেই অনুসরণ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াতের মধ্যে একথাই বলা হচ্ছে যে, যদি আল্লাহর ভালবাসা অর্জন করতে চাও, তবে আমার প্রিয় মাহবুব (দঃ) এর পেছনে পেছনে আস। ভাই হয়ে তাঁর সমর্যাদায় আসার চেষ্টা করো না অথবা বাবা হয়ে তাঁকে অতিক্রম করারও চেষ্টা করো না। বরঞ্চ আমার হাবীব (দঃ) এর গোলাম হয়ে তাঁর পশ্চাৎ অনুসরণ কর। টেনের ঐ বগিটিই টেনের সাথে থাকবে, যেটি ইঞ্জিনের পেছনে নিজকে জুড়ে নেয়। আর যে বগিটি বিচ্ছিন্ন হয়ে আগে বেড়ে যায়, সেটি সেখানেই থেকে যায়। প্রথম শ্রেণীর বগিটি ও যদি ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে কেউই সেটিতে উঠেও না এবং সেটির টিকেটও নেয় না। অথচ যদি তৃতীয় শ্রেণীর বগিও ইঞ্জিনের সাথে জুড়ে যায়, তবে সেটিতে সবাই উঠতে চায়। বুঝা গেল যে, ইঞ্জিনের সাথে সংযোগের কারণে বগিগুলোর মর্যাদা, নতুবা এগুলোর কোন মূল্য নেই। উপরন্তু ইঞ্জিন তার পশ্চাতের বগি সমূহের অবস্থা কিরূপ, তা দেখে না। বরঞ্চ শুধু এটাই দেখে যে, তার সাথে বগির কড়ি আটকানো হয়েছে কি, হয়নি। তৃতীয়, দ্বিতীয় এবং প্রথম সকল শ্রেণীর বগিকেই ইঞ্জিন একই গতিতে তার লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। শুধু শর্ত হচ্ছে এই যে, বগিগুলোকে লাইনের উপর থাকতে হবে। ইঞ্জিন যেন বগিগুলোকে উদ্দেশ্য করে এ কথাই বলছে তোমরা যদিও বা দুর্বল, কিন্তু আমি তো সবল। আর এজন্যই কুরআন ইরশাদ করেছেন
[আরবী]
অর্থাৎ তুমি যত দুর্বলই হও না কেন, আমি রাসূলকে অনুসরণ করে চল।
আমি তোমার অবস্থা দেখব না বরঞ্চ আমি আমাকে এবং আমার সাথে তোমার সম্পর্ককেই দেখব। মাওলানা রুমী বলেন-
[উর্দূ]
অর্থাৎ 'শত কিতাব আর তার পাতা অগ্নিতে নিক্ষেপ কর। স্বীয় দিলকে মাহবুবে খোদা (দঃ) এর সাথে সম্পৃক্ত করে দাও, (তখনই সত্যিকার ইলম অর্জিত হবে, নতুবা নয়।)
আনুগত্য তিন ধরণের হয়ে থাকে। ভয়ের কারণে আনুগত্য, লোভের কারণে আনুগত্য আর ভালবাসার কারণে আনুগত্য। এখানে আয়াতে ভালবাসার আনুগত্যকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা ভয় এবং লোভের আনুগত্য মুনাফিকদের কাছেও ছিল। এজন্যই আয়াতখানাকে 'মুহাব্বত' এই বিশেষ শব্দ দিয়েই শুরু করা হয়েছে।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, মুহাব্বত বা ভালবাসা তিন প্রকার, ছোটদেরকে মুহাবত বা স্নেহ করা, দ্বিতীয়তঃ সমমর্যাদার ব্যক্তির প্রতি মুহাব্বত বা ভালবাসা। আর তৃতীয়তঃ উচ্চ মর্যাদার লোককে শ্রদ্ধার সাথে ভালবাসা। আয়াতে اتبعوا (অনুসরণ কর) দ্বারা বুঝা যায় যে, এখানে তৃতীয় প্রকারের ভালবাসার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ শ্রদ্ধার সাথে ভালবাসতে হবে। পুনরায় শ্রদ্ধার সাথে ভালবাসা, তাও আবার দু'প্রকার- দ্বীনি এবং জুনিয়াবী। আয়াতে "ইউহবিবকুমুল্লাহ" দ্বারা বুঝা যায় যে, হুযুর আকরম (দঃ) এর মুহাব্বত দ্বীনি হতে হবে। অর্থাৎ বড় ভাই হিসেবে হুযুর (দঃ) এর মুহাব্বত করলে হবে না, বরঞ্চ রিসালতের মহান মর্যাদার ভিত্তিতে প্রিয় নবী (দঃ) কে মুহাম্মত এবং শ্রদ্ধা করতে হবে।