[আরবী]
(পারাঃ ২ সূরা বাকারা, রুকু ১৭)
অর্থাৎ- 'আকাশের পানে আপনার বারংবার তাকানকে আমি অবশ্যই লক্ষ্য করি। অতএব আপনাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি, যা আপনি পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিন।"
জাপান স্থান্ডের উপরোক্ত আয়াত করিমায় সাধারন অর্থে কিবলা পরিবর্তনের আদেশই দেয়া হয়েছে। কিন্তু যদি ঈমানী দৃষ্টি দেয়া যায়, তবে দেখা যাবে এদ্বারা হুজুর আকরম (দঃ) এর মর্যাদা এত অধিক প্রকাশিত হচ্ছে যে, এ আয়াত তো এ কথাই ব্যক্ত করছে সকলের কা'বা এক দিকে আর কা'বার কা'বা অন্য দিকে। হুযুর আকরম (দঃ) হচ্ছেন কা'বারও কা'বা, সুবহানাল্লাহ।
এ আয়াতের শানে নুযুল এই যে, মে'রাজের রাত্রিতেই নামায ফরয হয়েছিল এবং কা'বা শরীফ নামাযের কিবলা নির্ধারিত হলো। হিজরতের পর কা'বা শরীফের পরিবর্তে বায়তুল মুকাদ্দস এর দিকে নামায পড়ার আদেশ করা হল। এটা ইহুদী এবং নাসারাদেরও কিবলা ছিল। এ কারণে ইহুদীরা এ বলে তিরষ্কার করতো যে, হুযুর আকরম (দঃ) সর্ব বিষয়ে আমাদের বিরুধিতা করছে, অথচ আমাদেরই কিবলার দিকে নামায পড়তেছে। তাদের এ ধরণের কথাবার্তা, উপরন্তু পবিত্র কা'বা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর তৈরীকৃত এবং হুযুর পাক (দঃ) নিজেও ইব্রাহীমী- তাই তিনি চাইতেন, তাঁর কিবলা পুনরায় সম্মানিত কা'বার দিকেই হয়ে যাক। সতের মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দস এর দিকে নামায আদায় করার পর একদিন হুযুর আকরম (দঃ) হযরত জিবরাইল (আঃ) কে বললেন, আমার অন্তর চায় যে, আমি পবিত্র কা'বার দিকে নামায আদায় করি। হযরত জিবরাইল (আঃ) আরয করলেন-যে আল্লাহর প্রিয় হাবীব (দঃ)। আমি আল্লাহর বান্দা মাত্র। আল্লাহর হুকুম ব্যতিরেকে আমি কিছুই বলতে পারি না। বরঞ্চ আপনিই আল্লাহর হাবীব, তাই আপনিই আল্লাহর কাছে মুনাজাত করুন। এতটুকু বলেই হযরত জিব্রাইল (আঃ) প্রস্থান করলেন। এদিকে হুযুর আকরম (দঃ) ওহীর অপেক্ষায় বার বার চেহারা মুবারক আসমানের প্রতি তুলে তাকাতে লাগলেন। তাঁর পবিত্র চেহারার ভাব এমন ছিল যে, যদি কিবলা পরিবর্তনের ওহী আসতো। পরওয়ার দেগার আলমের কাছে তার প্রিয় হাবীব (দঃ) এর এ বার বার তাকানো খুবই ভাল লাগলো। অতএব উপরোক্ত আয়াতে ইরশাদ করা হলো, হে আমার প্রিয় দোস্ত (দঃ) আপনি যে বার বার চেহারা মুবারক তুলে আসমানের দিকে তাকাচ্ছেন আপনার এ কোমল চাহনি আমি অবলোকন করছি। ঠিক আছে যেদিকে আপনার ইচ্ছে, আমি সেটিকেই আপনার কিবলা বানিয়ে দিলাম। (রুহুল বায়ান, এই আয়াত) মোট কথা যেদিকেই তাঁর নূরানী দৃষ্টি আপতিত হয়েছে সেদিকই সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এ আয়াত দ্বারা বিভিন্ন ফায়েদা অর্জিত হয়। প্রথমতঃ সকল মানুষ আইনের অধীন আর আইন হুযুর পাক (দঃ) এর ইচ্ছারই অধীন। বস্তুতঃ কা'বা শরীফ যে সকল ওলী, গাউছ কুতুবের কিবলা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, তা আল্লাহর মাহবুব (দঃ) এর ওসীলায়ই হয়েছে। তাঁর ইচ্ছার কারণেই পবিত্র কা'বা কিয়ামত পর্যন্ত কিবলায় পরিণত হলো। তৃতীয়তঃ কোন কোন সময় সিজদাকারী সিজদাকৃত ব্যক্তি হতে শ্রেষ্ঠ হয়। যেমন হযরত ইয়াকুব (আঃ) স্বীয় পুত্র হযরত ইউছুফ (আঃ) কে সিজদা করেছিলেন, অথচ ইয়াকুব (আঃ) স্বীয় পূত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) থেকে শ্রেষ্ঠ। ঠিক একইভাবে হুযুর আকরম (দঃ) কা'বার দিকে সিজদা করেছেন, কিন্তু তিনি কা'বা থেকেও শ্রেষ্ঠ।
যদি কোন ব্যক্তি ফরয অথবা নফল নামায পড়া অবস্থায় থাকে, এবং হুযুর আকরম (দঃ) তখন তাকে ডাক দেয়, তবে নামায ছেড়ে দিয়ে হুযুরের আহ্বানে সাড়া দেয়া তার জন্য ওয়াজিব। (মিশকাত, কুরআনের ফজিলত অধ্যায়)
[আরবী]
একমাএ আয়াতের আলোচনায় সামনে এসম্পর্কিত বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসবে। অনেকেরই মত এই যে, যদি নামাযী নামায ছেড়ে হুযুর পাক (দঃ) এর দরবারে আসে, সকল কাজ সামাধা করে, হুযুর (দঃ) এর সাথে কথাবার্তা ও বলে, পবিত্র কা'বার থেকে অন্য দিকে চেহারাও ফিরে যায় না কেন, তাঁর নামায নষ্ট হবে না। বরঞ্চ সে নামাযে আছে বলেই গণ্য হবে। (দেখুন, আল্লামা কুসতুলানীর শরহে বুখারী, তাফসীর এর অধ্যায় সূরা আনফাল, উপরোক্ত আয়াতেরই ব্যাখ্যা।) কেননা নামাযীর চেহারা যদিও বা কিবলা ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে গিয়েছে, কিন্তু ঐ মহান সত্ত্বার প্রতিই ফিরেছে, যিনি মূলতঃ কিবলারও কিবলা, যদিও নামাযী কথাবার্তা বলেছে, কিন্তু এমন সত্ত্বার সাথেই কথাবার্তা বলেছে, যাঁকে সালাম দেয়া নামাযের ভিতরও ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে।
[আরবী]
পবিত্র কা'বাও হুযুর পাক (দঃ) এর দুনিয়ায় তাশরীফ আনয়নের রাত্রে মাকামে ইব্রাহীমের দিকে সিজদা করেছিল (দেখুন মাদারেজুন নবুয়্যুৎ, পবিত্র জন্ম অধ্যায় ২য় খন্ড) এখন একথাই প্রমাণিত হলো যে, হুযুর আকরম (দঃ) কা'বা শরীফেরও কা'বা।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০১২) আয়াতঃ ৯ | (০১৪) আয়াতঃ ১১ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |