اِنَّا اَرۡسَلۡنٰكَ بِالۡحَقِّ بَشِيۡرًا وَّنَذِيۡرًا وَلَا تُسۡـَٔلُ عَنۡ اَصۡحٰبِ الۡجَحِيۡمِ
(পারা:১ সূরা বাকারা, রুকু ১৪)
অর্থাৎ- 'নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্যসহ শুভসংবাদ দাতা ও সতর্ক কারীরূপে পাঠিয়েছি। আর জাহান্নামীদের সম্বন্ধে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না।'
এ আয়াতে হুযুর আকরম (দঃ) এর বিবিধ ফজিলত এবং মর্যাদার বর্ণনা এসেছে। প্রথমত: এই আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, কাফির এবং মুনাফিকদের অবস্থা দর্শনে হুযুর আকরম (দঃ) খুবই চিন্তিত এবং বিচলিত হতেন। রাহমাতুল লিল আলামীন এর রহমাতের দাবী এবং একান্ত আন্তরিক ইচ্ছা এ ছিল যে, আল্লাহর সকল বান্দাহ যেন ঈমান আনয়ন করে এবং জান্নাতী হয়ে যায়। অপর দিকে পরওয়ারদেগারে আলমের ইচ্ছা এই যে, হে আমার প্রিয় দোস্ত (দঃ)। যে আপনার শত্রু এবং আপনার শানে কটু বাক্য ব্যবহার করে, সে আমার বেহেশতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না। মোট কথা, কাফিরদের কুফরী এবং গোঁড়ামী হুযুর পাক (দঃ) এর কোমল অন্তরে বড় আঘাত দিত। এই অবস্থায় প্রিয় নবী (দঃ) এর অন্তরকে শীতঙ্গ করার জন্য এই আয়াতে পাক নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ হে আমার মাহবুব (দঃ) শুধু মাত্র দ্বীনের আওয়াজ পৌছিয়ে দেয়াই ছিল আপনার দায়িত্ব। আপনি তা সঠিক ভাবেই পালন করেছেন। এখন কাফিরদের ঈমান না আনার ব্যাপারে কিয়ামতের ময়দানে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। আপনি তাদের জিম্মাদার নন। এটি তো হুযুর পাক (দঃ) এর একটি মহান মর্যাদা যে, রাব্বুল আলামীন স্বীয় হাবীব (দঃ) এর সামান্যতম চিন্তিত হওয়াও পসন্দ করতেন না এবার আয়াতের প্রতি দৃষ্টি দিন। আয়াতের প্রথম অংশ এই যে,
[আরবী] অর্থাৎ আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি। যদ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, দুনিয়ায় হুযুর আকরম (দঃ) এর আগমন দুনিয়াবাসীর জন্য মহান আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ তোহফা বা উপটৌকন। বাদশাহের উপটৌকন অন্যান্য উপঢৌকন সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়। অতএব আল্লাহর সকল নেয়ামত সমূহের মধ্যে হুযুর পাক (দঃ) ই সবচেয়ে বড় নেয়ামত।
দ্বিতীয়তঃ পাঠানো হয় ঐ বস্তুই, যা প্রথম হতেই নিজের কাছে থাকে। বুঝা গেল, হুযুর আকরম (দঃ) দুনিয়ায় আগমনের পূর্ব হতেই রাঘুল আলামীনের বিশেষ দরবারে হাজির ছিলেন। আর সে হাজিরী কি ধরণের ছিল, এ সম্পর্কে তাফসীরে রুহল বায়ান এর মধ্যে لقد جاءكم رسول রেওয়ায়েত আনা হয়েছে। একবার হুযুর পাক (দঃ) হযরত জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বয়স কত? তিনি আরয করলেন, এটা আমি বলতে পারব না। তবে হাঁ আমি এতটুকু পর্যন্ত জানি যে, সত্তর হাজার বৎসর পর পর একটি তারকা উদিত হতো। সে তারকা আমি মোট বাহাত্তর হাজার বার দেখেছি। হুযুর পাক (দঃ) ইরশাদ করলেন, হে জিব্রাইল। সেই নক্ষত্রটি আমিই ছিলাম। যে সত্ত্বা আল্লাহ্ রাবুল আলামীনের বিশেষ দরবারে এভাবে হাজির ছিলেন, তাঁর মর্যাদা বর্ণনাতীত। একটি অনুকনাও মাত্র একটি রাত ফুলের সান্নিধ্যে থেকে ফুলের মতই সুগন্ধি অর্জন করে নেয়। অতত্রব হুযুর পাক (দঃ) কেন আল্লাহর গুনদ্বারা গুনান্তিত হবেন না? শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী (রঃ) তার "মাদারেজুন নবুয়্যত” কিতাবের ভূমিকায় লিখেছেন যে, হুযুর আকরম (দঃ) আল্লাহর গুনে গুণান্বিত।
মিশকাত শরীফে যিকিরের ফজিলত অধ্যায়ে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর প্রদত্ত শক্তিদ্বারা মূহর্তে একস্থান হতে অন্য স্থানে যাওয়া আসা করেন। এর পরে ইরশাদ হচ্ছে, হে রাসূল। আপনি দুনিয়ায় রিক্তহস্ত আসেননি। বরঞ্চ তিনটি জিনিষ নিয়েই এসেছেন। আর তা হচ্ছে ন্যায়ের পথ, মুমিনদের জন্য সুসংবাদ আর হক অস্বীকার কারীদের জন্য আযাবের দুঃসংবাদ। তারপর বলা হয়েছে, অন্যদের মত আপনার কাছে এ প্রশ্ন করা হবে না, অমুক ব্যক্তি ঈমান কেন আনেনি বা অমুক ব্যক্তি ভাল কাজ কেন করেনি।
হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করাহবে যে, তোমার সন্তানসন্ততি তোমার স্ত্রী এবং তোয়ার অধিনস্থ কর্মচারীরা কেন হেদায়ত প্রাপ্ত হলনা। কিন্তু সরওয়ারে দোআলম (দঃ) থেকে এ ধরণের কোন প্রশ্ন করা হবে না। উপরন্তু অন্যান্য নবীগণের উন্মতরা কিয়ামত দিবসে আরয করবে- হে আল্লাহ! আমাদের কাছে কোন পয়গম্বর আসেন নাই। তখন পয়গম্বরগণ আরয করবেন, আল্লাহ। আমরা তোমার হুকুম আহকাম তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এখন সকল নবীগণ হবেন বাদী এবং তাঁদের উম্মতেরা হবেন বিবাদী, আর হুযুর আকরম (দঃ) এর উম্মতগণ হবেন নবীদের পক্ষে সাক্ষী। কিন্তু কোন বিধর্মী বা কোন কাফিরের কিয়ামতের ময়দানে হুযুর আকরম (দঃ) এর বিরুদ্ধে কোন প্রকারের অভিযোগ আনার সুযোগ বা সাহসও হবে না। এবং তাঁর থেকেও এধরণের কোন প্রশ্ন করা হবে না।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৯) আয়াতঃ ৬ | (০১১) আয়াতঃ ৮ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |