يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقُوۡلُوۡا رَاعِنَا وَقُوۡلُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوۡاۚ وَلِلۡكٰفِرِيۡنَ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
(পারা; ১ সূরা বাকারা, রুকু ১৩)
অর্থাৎ 'হে মুমিনগণ। তোমরা رَاعِنَا (রাইনা) বলোনা, বরঞ্চ আরয কর, আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি দিন। আর শুনে রাখ কাফিরদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।'
বাহ্যিকভাবে এ আয়াতে কারিমায় মুসলমানদেরকে একটি বিষয় সম্পর্কে নিষেধ এবং অন্য একটি সম্পর্কে আদেশ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মূলতঃ এটি হুযুর আকরম (দঃ) এর মহান সম্মানের একটি অত্যুজ্জ্বল দলীল। এই আয়াতের শানে নুযুল এ যে, সাহাবাগণের নিয়ম ছিল যখন হযুর আকরম (দঃ) কিছু বলতেন এবং তাদের কোন একটি বিষয় বুঝতে অসুবিধা হত; তখন তাঁরা এ বলে আরয করতো,
[আরবী] “পুনঃ বলার ব্যাপারে আপনি বিবেচনা করুন”। 'অর্থাৎ আমাদের সুবিধার্থে আপনি পুনরায় বলুন। কিন্তু এই [আরবী] (রা'ইনা) শব্দটি ইহুদীদের ভাষায় একটি গালি ছিল। আর ইহুদীরাও প্রিয় নবীর দরবারে এসে খারাপ নিয়তে এ শব্দটি বলার সুযোগ নিত। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত খানা নাযিল হয়েছে। এবং মুসলমানদেরকে এই শব্দ বলতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে বলা হলো, হে মুমিনগণ। তোমরা এই শব্দটির পরিবর্তে [আরবী] “আমাদের প্রতি কৃপাদৃষ্টি দিন” বলিও। কেননা যদিওবা তোমরা ভাল নিয়ত সহকারে পূর্বের শব্দটি বল, এবং তদ্বারা তোমাদের উদ্দেশ্যও ভাল থাকে, কিন্তু ইহুদীরা তা থেকে বেয়াদবী করার সুযোগ পেয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ। এই আয়াতের মাধ্যমে মাহবুব (দঃ) এর কত সর্বোচ্চ সম্মানই না সুপ্রমাণিত হল। পরওয়ারদেগার আলম তাঁর প্রিয় হাবীব (দঃ) এর মর্যাদা এভাবে বৃদ্ধি করতে চান যে, কাউকে এমন কথা উচ্চারণের ও অবকাশ দিচ্ছেন না, যে শব্দ দ্বারা অন্য কেউ তার মাহবুব (দঃ) সম্পর্কে সামান্য খারাপ ধারণা করারও সুযোগ পেতে পারে।
এ মাসয়ালা দ্বারা বুঝা গেল, হুযুর পাক (দঃ) এর শানে সামান্যতম খারাপ মন্তব্য করা, বদ নিয়তে না হলেও কুফরী। ফিকাহবিদগনের সিদ্ধান্ত এই যে, যদি কেউ হযুর পাক (দঃ) এর জুতো মুবারকের সাথেও সামান্যতম বেয়াদবী করে সে কাফির হয়ে যাবে। 'শরহে ফিকহে আকবর" কিতাবে ইমাম আবু ইউসুফ (রাঃ) এর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বাদশাহ হারুনুর রশীদের মেহমানখানাতে লাউ পাকানো হয়েছিল। কেউ মন্তব্য করল যে, প্রিয় নবী (দঃ) লাউ খুব ভালবাসতেন। এর উপর অন্য একজন মন্তব্য করল, আমি কিন্তু লাউ পসন্দ করি না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) তাকে কতল করার উদ্দেশ্যে তলোয়ার বের করে ফেললেন, এবং ফতোয়া প্রদান করলেন, তুমি মুরতাদ অর্থাৎ ইসলাম হতে বেরিয়ে গেছ। কেননা তুমি তোমার অনিচ্ছাকে হুযুর পাক (দঃ) এবং ইচ্ছার মুকাবিলায় ব্যক্ত করেছ। তখন সে ব্যক্তি তওবা করল এবং ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) তাকে ছেড়ে দিলেন।
মিসরবাসীরা মনে করত যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) মিসরের বাদশাহর গোলাম। তাই তারা হযরত ইউসুফ (আঃ) এর উপর গোলাম হওয়ার অপবাদ আনল। পরওয়ারদেগারে আলম এদের উপর এমন এক দুর্ভিক্ষ পাঠালেন যে, মিসরের লোকেরা জমিজমা, গৃহপালিত জীবজন্তু এবং সর্বস্ব বিক্রি করার পর শেষ পর্যন্ত নিজেরাও হযরত ইউসুফ (আঃ) এর হাতে বিক্রি হয়ে গেল। তিনি সকলকে মুক্ত করে দিলেন। এখন সবাই তার মুক্ত করা গোলাম হয়ে গেল। আর তিনি সকলের মনিব হয়ে গেলেন। এখন কে আছে যে, তাঁকে আর গোলামের অপবাদ দিতে পারে। এতে বুঝা গেল, এ যুগেও যারা হুযুর পাক (দঃ) এর শানে বেয়াদবী মূলক আচরণ বা ভাষা ব্যবহার করে অথবা লিখে, তারাও মুরতাদ বা দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৮) আয়াতঃ ৫ | (০১০) আয়াতঃ ৭ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |