فَتَلَقَّىۤ اٰدَمُ مِنۡ رَّبِّهٖ كَلِمٰتٍ فَتَابَ عَلَيۡهِؕ اِنَّهٗ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيۡمُ
(পারা-১, সূরা বাকারা, রুকু৪)
অর্থাৎ- "অতঃপর হযরত আদম (আঃ) তাঁর প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলেন, আর আল্লাহ তাঁর প্রতি ক্ষমা পরবশ হলেন, নিশ্চয়ই তিনি খুবই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"
এই পবিত্র আয়াতখানাতে হযরত আদম (আঃ) এর তওবা কবুল হওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) স্বীয় বিচ্যুতির পর তিন শত বছর পর্যন্ত আসমানের প্রতি মাথা উঠাননি। এভাবে কেঁদেছেন যে, যদি সমগ্র মানবজাতির চোখের পানিকে একত্রিত করা হয়, তবুও তাঁর চোখের পানির সমান হবে না। (খাযেন, মাদারেক, রুহুল বায়ান) পাঁচ জন বান্দা দুনিয়ায় বেশী কেঁদেছেন কারবালার ঘটনার পর হযরত ইমাম যয়নুল আবেদীন (রাঃ), প্রিয় নবী (দঃ) এর ওফাত মুবারকের পর খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা যুহরা (রাঃ), আল্লাহর ভয়ে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ) এবং হযরত আদম (আঃ) স্বীয় বিচ্যুতির উপর। অতঃপর হযরত আদম (আঃ) এর অন্তরে আল্লাহর পক্ষ হতে কিছু বাণী জাগরিত হল। আর যখন তিনি সে বাণী দ্বারা ফরিয়াদ করলেন, আল্লাহর রহমত তাঁকে টেনে নিল। এখন কথা হচ্ছে সেই ফরিয়াদের বিশেষ বানী বা ভাষা কি ছিল? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী (রঃ) তাঁর 'মাদারেজুন নবুয়্যত' কিতাবের দ্বিতীয় খন্ডের প্রারজে, তাফসীরে রুহুল বায়ানে এ আয়াতের বর্ণনায় এবং তিবরানি, হাকেম, আবু নাঈম ও বায়হাকী হযরত আলী (রাঃ) হতে একটি রেওয়ায়েত নকল করে বলেছেন যে, একদিন কাঁদতে কাঁদতে হযরত আদম (আঃ) এর অন্তরে স্মরণ হলো, যখন আমি সৃষ্টি হয়েছিলাম, তখন আমি মহান আরশে মুআল্লার উপর লিখিত দেখেছিলাম-
لا إله إلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ
তখন বুঝতে পারলাম, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) আল্লাহর দরবারে এতই প্রিয় যে, আল্লাহ তাঁর নাম মুবারক নিজের মহান নামের সাথে মিলিয়ে আরশের উপর লিখে রেখেছেন। আর তখনই হযরত আদম (আঃ) আল্লাহর দরবারে আরয করলেন, হে খোদা। আমি সেই মহান সত্ত্বার ওসীলায় আমার বিচ্যুতির ক্ষমা চাই, আমাকে ক্ষমা করুন। সে মূহর্তে আল্লাহর রহমতের সমুদ্রে তরঙ্গের সৃষ্টি হলো এবং আল্লাহ হযরত আদম (আঃ) কে ক্ষমা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ। কি রহমত পূর্ন নাম মুবারক। যার সম্মানার্থে একবার সমস্ত ফেরেশতাদের দ্বারা হযরত আদম (আঃ) কে সিজদা করালেন। আবার এ নাম দ্বারাই তাঁকেও বিপদ হতে বাঁচালেন।
[উর্দূ]
অর্থাৎ-"যদি হযরত আদম (আঃ) স্বীয় তওবা কবুলের জন্য হুযুর আকরম (দঃ) কে ওসীলা না বানাতেন, তাহলে না তাঁর তাওবা কবুল হতো, আর না হযরত নূহ (আঃ) এর নৌকা ডুবে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতো।"
এখন হযরত আদম (আঃ) এর সন্তানদেরকেও এটাই হুকুম দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা গুনাহ কর, কুফরী কর, জুলুম কর, তবে মুহাম্মদ মুস্তাফা আহমদ মুজতবা (দঃ) এর দরবারে হাজির হয়ে শাফায়াতের দরখাস্ত কর এবং সেখানে গিয়েই রাথুল আলামীনের কাছে তওবা কর। সাথে সাখে আল্লাহর মাহবুব (দঃ)ও যদি তোমাদের জন্য শাফায়াত করে, তবেই তখন তোমাদের তওবা কবুল হবে।
[আরবী]
(পারা:৫ সূরা: নিসা; রুকু:৯)
অর্থাৎ যখন তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করে তখন তারা আপনার নিকট আসলে এবং আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করলে আর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে, তারা আল্লাহকে পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালুরূপে পাবে।
আবার এ আয়াতের অর্থ এমন নয় যে, মদীনা শরীফেই চলে আসতে হবে। বরঞ্চ সেই মহান সত্ত্বার দিকে নিজেকে রুজু করে দাও। কেননা তিনি সর্বস্থানেই উপস্থিত আছেন, অনুপস্থিততো আমরাই। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পরে আসবে।
[উর্দূ]
অর্থাৎ-'অন্তরের আয়নাতেই বন্ধুর ছবি বিদ্যমান। একটু মাথা নিচু করলেই দেখা যাবে।'
এই আয়াত দ্বারা এটাও প্রমাণিত হল, সাধারণ মানুষ কোথায়। সকল নবীগণই হুযুর পাক (দঃ) এর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ হচ্ছেন রাবুল আলামীন বা তামাম আলমের প্রতিপালক। আর হুযুর পাক (দঃ) হচ্ছেন রাহমাতুল লিল আলামীন অর্থাৎ তামাম আলমের জন্য রহমত। অর্থাৎ যার পরওয়ারদেগার আল্লাহ তার জন্য হুযুর পাক (দঃ) রহমত।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০০৭) আয়াতঃ ৪ | (০০৯) আয়াতঃ ৬ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |