আরশ মোয়াল্লা হতে এবার লা-মাকানের দিকে-অজানার পথে রওনা দিলেন। নবী করিম (দঃ)-যেখানে স্থান, কাল বলতে কিছুই নেই। সমগ্র সৃষ্টিজগতই তখন নবীজীর কদমের নীচে। আসমান, জমিন, চন্দ্র-সূর্য্য আরশ কুৰ্ছি-সবকিছু, এমন কি-আলমে খালক (সৃষ্টি জগত) ও আলমে আমর (নির্দেশ জগত) সবকিছুই তখন নবী করিম (দঃ)-এর পদতলে রয়ে গেল। তিনি সমস্ত কিছু। অতিক্রম করে আল্লাহর এত নিকটবর্তী হলেন যে, দুই ধনুকের চার মাথার ব্যবধান বা তার চেয়েও কম ব্যবধান রয়ে গেল। এটা রহস্য জগত। এ অবস্থাকে মুতাশাবিহাত বা দুর্বোধ্য অবস্থা বলা হয়। কোরআন মজিদে এই মাকামকে قاب قوسین বলা হয়েছে। শারিরীক সান্নিধ্য এখানে উদ্দেশ্য নয়।" আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য ও ঘনিষ্ট সান্নিধ্য বুঝানো।
তাফসীরে রুহুল বয়ান ৩য় পারা প্রথম আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে যে, "নবী করিম (দঃ)-এর নূরানী সুরতের বহিঃপ্রকাশ হয়েছিল সে সময়। তাঁর বাশারিয়াত সে সময় উন্নত হতে হতে নূরে ওয়াহ্দানিয়াতের মধ্যে মিশে গিয়েছিল" যেমন মিশে যায় পানিতে চিনি। এই মকামকে তাছাওফের ভাষায় 'ফানা' বলা হয়। রুহুল বয়ানের এবারতটুকু নিম্নে পাঠকদের জন্য উদ্ধৃত করা হল।
أَنَّهُ عَلَيْهِ السلام ما بقى فِي مَكَانٍ وَلَا فِي الإمكان في " ليلة المعراج لأنَّهُ كَانَ فَإِنيَا عَنْ ظُلْمَةٍ وُجُودِهِ - بَاقِيَا بِنُورِ وجُودِهِ-وَلَهُذَا سَمَّاهُ اللَّهُ نُورًا فِي قَوْلِهِ تَعَالَى قَدْ جَاءَ كُم مِنَ اللهِ نُورٌ وَ كِتَابٌ مُّبِينٌ (صفحه ۳۹۵ پاره تلک الرسل)
অর্থ-"নবী করিম (দঃ) লাইলাতুল মি'রাজে কোন স্থানে বা সৃষ্টি জগতে সীমাবদ্ধ ছিলেননা। কেননা, তখন তিনি তাঁর জড় অস্তিত্বের অন্ধকার ভেদ করে ফানা হয়ে আল্লাহর নূরের অস্তিত্বে অস্তিত্ববান হয়েছিলেন। এ কারণেই কোরআন মজিদে (সুরা মায়েদা-১৫ আয়াত) আল্লাহ তায়ালা তাঁকে 'নূর' বলে আখ্যায়িত করে এরশাদ করেছেন, হে জগতবাসী, তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রথমে এক মহান নূর ও পরে একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে"।
বুঝা গেল- তিনি দুনিয়াতে আগমনকালেই নূর ছিলেন- মাটি নয়। যারা মাটি বলে-তারা ভ্রান্ত। (তাফসীরে রুহুল বয়ান পৃঃ ৩৯৫ তৃতীয় পারা ১ম আয়াত)। উক্ত আয়াতের পূর্ণ বিকাশ হয়েছিল "ক্বাবা কাওছাইন" মাকামে।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৪০) মি'রাজের তৃতীয় পর্যায়: সিদ্রা হতে আরশে আযীম পর্যন্ত | (০৪২) আল্লাহর সাথে কালাম |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |