সিদ্রাতুল মোস্তাহায় পৌঁছে জিব্রাইল (আঃ) নবী করিম (দঃ) থেকে বিদায়
لودنوت منها انملة لا حرقت وفي رواية شعرة
অর্থ-"সিদ্রাতুল মোস্তাহা থেকে এক আঙ্গুল-অন্য রেওয়ায়তে চুল পরিমাণ অগ্রসর হলে আমার ছয়শত নূরের পাখা নূরের তাজাল্লীতে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে"।
সোহানাল্লাহ!
যেখানে নূরের ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ) জ্বলে যায়, সেখানে আমাদের প্রিয় নবী (দঃ) সশরীরে স্বচ্ছন্দে সামনে অগ্রসরমান। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রন্থের প্রারম্ভে হযরত জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টির হাদীসখানা আর একবার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- "তিনি আল্লাহর যাতী নূরের জ্যোতি হতে পয়দা হয়েছেন"। বুঝা গেল- তিনি মাটি নন। মাটি হলে তথায় জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যেতেন। জিব্রাইল (আঃ) আমাদের নবীজীর (দঃ) নূরের সামান্যতম অংশের তাজাল্লী দিয়ে সৃষ্টি। যেখানে জিব্রাইলের গতি শেষ, সেখান থেকে আমাদের নবীজীর (দঃ) যাত্রা শুরু। হাকিকতে মোহাম্মদী (দঃ) সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হলে হযরত জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করতে হবে- সিদ্রাতুল মোস্তাহার পরে জিব্রাইল (আঃ) নবীজীকে কেমন দেখেছিলেন। জিব্রাইলও বলতে পারবেনা-তার পরের ঘটনা কি ঘটেছিল। ফিরতি পথে হুযুর (দঃ)-এর স্বরূপ কেমন ছিল-তা জানতে হবে মুছা (আঃ)-এর কাছে। সেদিন তিনি প্রকৃতপক্ষে কাকে দেখেছিলেন?
বিদায়ের সময় জিব্রাইল (আঃ) নবী করিম (দঃ)-এর কাছে একটি আরয পেশ করেছিলেন- "আল্লাহ যেন হাশরের দিনে জিব্রাইলকে পুলছিরাতের উপর তার ছয়শত নূরের পাখা বিছিয়ে দেয়ার অনুমতি দান করেন"। উম্মতে মোহাম্মদী যেন উক্ত পাখার উপর দিয়ে পুলসিরাত পার হয়ে যেতে পারে। নবী করিম (দঃ) আল্লাহর দরবারে জিব্রাইলের এই ফরিয়াদ পেশ করলে আল্লাহ তায়ালা ছাহাবায়ে কেরাম ও আহলে মহব্বতের লোকদের জন্য তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। আল্লাহ্ পাক বলেছিলেন- غذا لمن صحیک واهل محبتک (মাওয়াহেব লাদুন্নিয়া)। অর্থ-"জিব্রাইলের পাখার ওপর দিয়ে পুলছিরাত অতিক্রম করার আরজি মঞ্জুর করা হলো-আপনার সাহাবী এবং আশেকানদের জন্য"। এই দুই শ্রেণীর লোক জিব্রাইলের পাখার উপর দিয়ে পুলছিরাত পার হয়ে যাবে।
জিব্রাইল (আঃ) থেকে বিদায় হওয়ার পর রফরফ নামে এক বাহন এসে নবী করিম (দঃ) কে আরশে আযিমে পৌছিয়ে দেয়। এ পথে নবী করিম (দঃ) সত্তরটি নূরের পর্দা ভেদ করেন। এক এক পর্দার ঘনত্ব ছিল পাঁচশত বৎসরের রাস্তা। এ হিসাবে ৩৬ হাজার বৎসরের রাস্তা অতিক্রম করে নবী করিম (দঃ) আরশে মোয়াল্লায় পৌঁছলেন। এ পথে যখন তিনি একাকীত্ব অনুভব করছিলেন, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর আওয়াষ শুনতে পেয়ে শান্ত হয়েছিলেন। আর একটি আওয়াজও তিনি শুনতে পেয়েছিলেন:
قف يا محمد فَإِنَّ رَبَّكَ يُصَلَّى
অর্থ-"হে প্রিয় মোহাম্মদ (দঃ), আপনি একটু থামুন, আপনার রব সালাত পাঠ করছেন"।
আল্লাহর সাথে দীদারের সময় নবী করিম (দঃ) এ দু'টি বিষয়ের রহস্য জানতে চাইলেন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমার সালাত অর্থ আপনার উপর দরূদ পাঠ করা। আর আবু বকরের সুরতে এক ফেরেস্তা সৃষ্টি করে আবু বকরের আওয়াজ নকল করা হয়েছিল- যেন আপনি শান্ত হন। মহিউদ্দিন ইবনে আরবী (রঃ)-এর তাফসীরে বলা হয়েছে- হযরত আবু বকর সিদ্দিকই (রাঃ) রুহানীভাবে ফিরিস্তার সূরতে তথায় উপস্থিত ছিলেন। এটা ছিল তাঁর কারামত। কেননা, তিনি ছিলেন রাসুলে পাকের নিত্যসঙ্গী। তিনি দুনিয়াতে, মাযারে, হাশরের ময়দানে এবং জান্নাতেও নবী করিম (দঃ)-এর সঙ্গী থাকবেন। সুতরাং মি'রাজে রূহানীভাবে উপস্থিত থাকা খুবই স্বাভাবিক (দেখুন ইরফানে শরিয়ত)।
আরশে পৌঁছার পর লাওহে মাহফুয অবলোকনকালে নবী করিম (দঃ) দেখতে পেলেন, তথায় শেষ বাক্যটি লেখা ছিল এরূপ:
قد سبقت رحمتى على غضبي
অর্থ-"আমার গযবের উপর আমার রহমত প্রাধান্য বিস্তার করে রয়েছে"
উক্ত হাদীসে কুদসীর মধ্যে উম্মতের জন্য একটি গোপন ইশারা নিহিত রয়েছে। তা হলো- কিছু শাস্তি ভোগ করার পর সমস্ত হকপন্থী, উম্মতই আল্লাহর রহমতে নাজাত পাবে।
নবী করিম (দঃ) আরশকে জিজ্ঞেস করলেন- আমি সমগ্র জাহানের জন্য রহমত- তোমার জন্য কিরূপে রহমত? আরশ তখন আরয করলো আল্লাহ তায়ালা যখন আমার মধ্যে কলেমার প্রথম অংশ 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' লিখলেন, তখন আল্লাহর জালালী শানে আমার মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন আমি টুকরো টুকরো হয়ে যাব। তারপর যখন তার পার্শ্বে। আপনার জামালী নামের অংশটুকু 'মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ' লিখে দিলেন- তখন আমার কম্পন বন্ধ হয়ে গেল (শানে হাবীব)। সুতরাং আপনি আমার জন্য বিরাট রহমত।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০৩৯) মি'রাজের দ্বিতীয় পর্যায় | (০৪১) লা মাকানের উদ্দেশ্যে রওনা |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |