১. ইমাম নির্ধারিত হবে প্রকাশ্য নস্ দ্বারা। এ ক্ষেত্রে পূর্বের ইমামের উপর পরবর্তী ইমাম নির্দ্ধারন করা ওয়াজিব। কেননা ইমামত অত্যাবশ্যক কাজের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। সুতরাং এ গুরুত্বপূর্ণ কাজ উম্মাতের উপর ছেড়ে যাওয়া বৈধ নয় বরং রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর উপর তা নির্দ্ধারন করা ওয়াজিব। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কর্তৃক নির্দ্ধারিত ইমাম হলেন, হযরত আলী (রা.)।
২. গদীরে খামের দিন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আলীর ইমামত প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন।
৩. শী'আদের ধারনা যে, হযরত আলী (রা.) স্বীয় পুত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইনের ইমামত প্রকাশ্যে বলে গেছেন। ঠিক এমনিভাবে প্রত্যেক ইমাম তাঁর পরবর্তী ইমামকে নির্ধারন করে যান অসীয়াতের মাধ্যমে।
৪. প্রত্যেক ইমামের ভুল ভ্রান্তি হতে পারে। কিন্তু তিনি হবেন, মাসূম তথা পবিত্র এবং সগীরা ও কবীরা গুনাহ মুক্ত।
৫. প্রত্যেক ইমামকে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর তরফ হতে ইলম প্রদান করা হয়েছে। যার দরুন তিনি শরী'আতকে পূর্ণতায় পৌছিয়ে দেন। ইমাম ইলমে লাদুন্নীর মালিক। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমামের মধ্যে শুধুমাত্র ওহীর পার্থক্য। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমামদের কাছে শরী'আতের ভেদ বাক্য আমানত রেখে গিয়েছেন যেন তারা সময়মত মানুষের কাছে তা পৌছে দিতে পারে।
৬. ইমামের হতে মু'জিযা পাওয়া বৈধ। যদি ইমাম পরবর্তী ইমামের ব্যাপারে কোন প্রমাণ না রেখে যান, তবে মু'জিযার ভিত্তিতে ইমাম নির্দ্ধারন করা ওয়াজিব।
৭. শি'আদের মতে দ্বাদশ ইমাম আল্-মুনতাযির মাহদী হয়ে সত্যিকারভাবে ইসলামের পুনারুদ্ধারকারী হবেন। তিনি সমগ্র বিশ্বজয় করবেন ও কিয়ামতের পূর্ববর্তী সহস্রাব্দের সূচনা করার জন্য আর্বিভূত হবেন।
৮. তাকিয়া নীতি অবলম্বন করা বৈধ। তাকিয়া নীতির অর্থ হল, কথায় ও কাজে প্রকৃত অবস্থার বিপরীত ভাব প্রদর্শন করা এবং আপন বিশ্বাস ও মত বিপরীত মত প্রকাশ করা, এভাবে অপরকে প্রতারিত করা। তাকিয়া নীতি শী'আ মাযহাবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং তাদের আকীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আবু জা'ফর (র.) (ইমাম বাকির) বলেন, তাকিয়া নীতি আমার ধর্ম এবং আমার পিতৃপুরুষের ধর্ম। যে তাকিয়া নীতি অবলম্বন করে না তার ঈমান নেই।
৯. শী'আ সম্প্রদায়ের মতে নির্দ্ধারিত সময়ের জন্য মুতা (অস্থায়ী বিবাহ) বৈধ তথা উত্তম অভ্যাস। (ইসলাম এ প্রথাকে হারাম বলে ঘোষণা করেছে)।
১০. শী'আদের ধারনা মতে তাদের কাছে 'মোসহাফে ফাতিমা' রয়েছে। আর মোসহাফে ফাতিমার সাথে কুরআনের কোন মিল নেই।
১১. শী'আগণ খুলফায়ে রাশিদার তিনজন খলীফার নির্বাচনকে অবৈধ বলে মনে করে এবং উমাইয়াও আব্বাসীয় শাসকগণকে তারা খিলাফতের অবৈধ দাবীদার হিসেবে মনে করে।
১২. শী'আদের মধ্যে চরমপন্থী কেউ কেউ হযরত আলী (রা.) উলুহিয়্যাতের দরজায় পৌঁছেছে বলে মনে করে। যেমন সাবায়ীয়া ফিরকা (السبيئة)। আর কেউ কেউ ধারনা করে যে জিব্রাঈল (আ.) রিসালত প্রদানে আলীর কাছে না এসে ভুলবশত মুহাম্মদের কাছে এসেছে।
১৩. শী'আরা প্রাচীন ফার্সী সনের নববর্ষের দিনে নওরোজ উৎসব পালন করে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আত ও শী'আদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ও মৌলিক পার্থক্য এই যে সুন্নীগণ একমাত্র আল্লাহ্ ও রাসূলুল্লাহকে শরী'আতের উৎস এবং একমাত্র তাঁকেই মাসূম বা নিস্পাপ বলে আকীদা পোষণ করেন। পক্ষান্তরে ইস্না আশারী শী'আরা মনে করে শরী'আতের উৎস হলেন হযরত আলী (রা.) ও তাঁর এগারজন ইমাম আর দাবী করে যে তারা সকলে নিস্পাপ ছিলেন। এ দাবী তাদের অমূলক যা ইসলামী শরী'আত বর্হিভূত।
উল্লেখ্য যে, নবী (সা.) এর নিকট থেকে বিশ্বস্ত সত্যবাদী এবং ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন ও তাবে-তাবিঈনের মধ্যমে যে শরী'আত এসেছে তাই হক এবং সত্য।
বস্তুত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবায়ে কিরামের যুগে এবং তাবিঈন তাবে-তাবিঈনের যুগকে 'খায়রুল কুরুন' বা সর্বোওম যুগ বলে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ্ আল-কুরআনের বহু স্থানে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সংগী সাথীদের উচ্চ প্রশংসা প্রকাশ করেছেন তাঁদের সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। বস্তুত আমরা তাঁদের বদৌলতেই সত্য ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পেরেছি।