ইসলামী শরী'আতের বিধান মতে মানুষের কাজগুলো দু'ভাগে বিভক্ত: ১. মাশরু- শরী'আত সম্মত, ২. গাইর মাশরু'-শরী'আত পরিপন্থী। শরী'আত সম্মত কার্যাবলী ৬ ভাগে বিভক্ত। ১. ফরয, ২. ওয়াজিব, ৩. সুন্নাত, ৪. মুস্তাহাব, ৫. নফল ও ৬. মুবাহ্।
ফরয অর্থ অবশ্য পালনীয়। আল্লাহ্ তা'আলার অলঙ্গণীয় আদেশ। যা দলীলে কাঙ্গ (অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত)। আল্লাহ্ তা'আলা সকল মুসলমানের প্রতি তা অপরিহার্য কর্তব্য বলে ঘোষণা করেছেন। যার অস্বীকারকারী কাফির বলে গণ্য হবে। এর তরককারীর জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। শরী'আতের পরিভাষায় তাকে 'ফাসিক' বলা হয়।
ইসলামী শরী'আতের চারটি রুকনঃ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রামাযান মাসে রোযা, বাৎসরিক উদ্ধৃত্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের যাকাত দান, সামর্থ হলে ব্যক্তির জীবনে একবার হজ্জ আদায় করা ফরয।
১. ফরযে আইন যা প্রত্যেকের উপর ফরয। এ শ্রেণীর ফরয কাজ এককভাবে অথবা সমষ্টিগত-ভাবে আদায় করতে হয়। যেমন নামায, রোযা ইত্যাদি।
২. ফরযে কিফায়া যা সমাজের সকলের প্রতি এ কাজ ফরয। তবে সমাজের কিছু লোক তা আদায় করলে সকলে পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ যদি আদায় না করে, তবে সমাজের সকলেই গুনাহগার হবে। যেমন: জিহাদ, জানাযার নামায ইত্যাদি।
ওয়াজিবও ফরযের ন্যায় অবশ্য পালনীয়। তবে গুরুত্বের দিক থেকে ফরযের পরে ওয়াজিবের স্থান। বিনা কারণে তা পারিত্যাগ করলে ফাসিক হবে এবং কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধী বলে বিবেচিত হবে।
শরী'আতের ওয়াজিব বিধানকে গুরুত্বহীন মনে করা সরাসরি গোমরাহী। তবে কোনরূপ ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়ে অথবা সন্দেহ মূলে ওয়াজিবকে ইনকার (আস্বীকার) করলে কাফির হবে না। কেননা, ফরয বিধানের ন্যায় দলীলে কাঈ (অকাট্য) প্রমাণ দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় নি। ওয়াজিব সাবিত হয়েছে দলীলে যন্ত্রী (সন্দেহযুক্ত প্রমাণ) দিয়ে। যেমন বিত্রের তিন রাক'আত নামায। নামাযের প্রত্যেক রাকা'আতে সূরা ফাতিহা পড়া।
ফরয এবং ওয়াজিব ব্যতীত দীনের যে সকল কাজ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) নিজে করেছেন, করার নির্দেশ দিয়েছেন বা অনুমোদন করেছেন শরী'আতের পরিভাষায় একে সুন্নাত বলা হয়। এ ছাড়া খুলাফায়ে রাশেদীন দীনের যে সকল কাজ প্রবর্তন করেছেন সে গুলোকেও রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তা অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, হাদীস শরীফে
বর্ণিত আছে,
عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين..
তোমাদের প্রতি অবশ্য কর্তব্য আমার সুন্নাত হেদায়েত প্রাপ্ত ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের অনুসরণ করা।
সুন্নাত দুই প্রকারঃ ১. সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা, ২. সুন্নাতে গাইরে-মুওয়াক্কাদা।
সে সব কাজ যা হয়রত নবী করীম (সা.) ইবাদত হিসাবে নিয়মিতভাবে তবে ওযরবশত কখনো ছেড়েও দিয়েছেন। আমলের দিক থেকে সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা ওয়াজিবের কাছাকাছি। বিনা কারণে তা বর্জন করা বা বর্জন করার অভ্যাস করে নেওয়া অনুচিত ও গুনাহের কাজ।
সে সকল কাজ যা হযরত নবী করীম (সা.) অভ্যাসগতভাবে নিয়মিত করেছেন এবং বিনা কারণে কখনো তা ছেড়েও দিয়েছেন। এ কাজ যাঁরা করবেন তাঁরা সাওয়াবের অধিকারী হবেন, না করলে শাস্তি হবে না।
সে সব কাজ হযরত রাসুলে আকরাম (সা.) কখনো কখনো অন্যদেরকে করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। মুস্তাহাব কাজ আদায় করলে সাওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। তবে না করলে কোন গুনাহ হবে না। ফকীহগণের পারিভল্লা মুস্তাহাবকে নফল মান্দুব ও তাতাওউও বলা হয়ে থাকে।
যে সব কাজ উলামায় মুতাকাদ্দিমীন ও মুতাআখিরীন (পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শরী'আত বিশেষজ্ঞগণ) পবিত্র কুরআন হাদীস ও সুন্নাতের আলোকে ভাল বলে গ্রহন করেছেন। মুস্তাহ্সান পালনে সাওয়াব আছে, তবে ছেড়ে দিলে কোন গুনাহ নেই।
যে কাজ করাতে কোন সাওয়াব নেই। আর না করাতে কোন গুনাহ নেই। শরী'আতের পরিভাষায় সে সব কাজকে মুবাহ্ বলা হয়। ইচ্ছা করলে তা করতে পারে, আবার ইচ্ছা করলে তা নাও করতে পারে। উল্লেখ্য যে নফল, মুস্তাহাব, মুস্তাহ্সান, মান্দুব, তাতাওউ' সবই ঐচ্ছিক ইবাদত। এসব খেয়াল খুশীমত সুযোগে সময়ে যত ইচ্ছা করা যায়। যত বেশী করবে, ততই অধিক সাওয়াব লাভ করবে।
শরী'আতের দৃষ্টিতে যে সকল বস্তু ব্যবহার করা বৈধ তাকে হালাল বলা হয়। গাইরে-মাশর'-শরী'আত পরিপন্থী) কাজগুলো দুই ভাগে বিভক্তঃ ১. মাকরূহ, ২. হারাম।
মাকরূহ্ (অপসন্দনীয় কাজ) দুই প্রকারের: ১. মাকরুহ তাহরীমী ও ২. মাকরূহ্ তানযীহী।
যে সকল কাজ নিষিদ্ধ হওয়া অকাট্য দলীল দারা প্রমাণিত নয়। বিনা ওযরে এ সব কাজ করা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সে সকল কাজ বর্জন করাতে সাওয়াব লাভ হয়, না করলে গুনাহগার হবে না।
যে সকল কাজ নিষিদ্ধ হওয়া অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত, একে হারাম বলা হয়। বিনা ওযরে যে এমন কাজ করে সে ফাসিক। কঠিন আযাব তার জন্য নির্ধারিত। হারামের অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে। ফরয এবং হারাম প্রমাণের একই দিক দিয়ে একই পর্যায়ের। ফরয কাজ করা ফরয আর হারাম কাজ বর্জন করা ফরয। অনুরূপ ওয়াজিব এবং মাকরূহ তাহরীমীও প্রমাণের দিক দিয়ে এক পর্যায়ের; তেমনি মুস্তাহাব এবং মাকরূহ তানযীহী একই ধরনের। জায়িয এবং হালাল অভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। নাজায়িয এবং হারামও সমার্থবোধক। (কাওয়াইদুল ফিকহ্ঃ মুক্তী সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান (র.) এবং ইসলামী ফিকহ, ১ম খণ্ড, মাওলানা নজীবুল্লাহ্ নদভী (র))
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২৩) উসূলুল্-ফিকহ্ (ফিকহের মূলনীতি) | (০২৫) রাসমুল মুফতী এবং মাসআলা ও ফাতওয়ায় ব্যবহৃত পরিভাষাসমূহ |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |