পবিত্র কা'বাগৃহ পৃথিবীর মধ্যে সর্বপ্রথম মসজিদ। সপ্ত আকাশের উপরে ফিরিস্তাগণের মসজিদের নাম বাইতুল মা'মুর। তার সোজা নীচে জমিনের বুকে খানায়ে কা'বা 'নির্মিত হয়। এই পবিত্র কা'বাগৃহ সর্বপ্রথম ফিরিস্তাগণ নির্মাণ করেন। দ্বিতীয়বার নির্মাণ করেন হযরত আদম (আঃ)।
নূহ (আঃ)-এর তুফানের পর পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম ও হযরত ইসমাইল (আঃ)। কোরআন মজিদে এই নির্মাণের কথা অতি গুরুত্বের সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। সর্বপ্রথম হজ্বের আদেশ দেয়া হয় হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে। একারণেই এই নির্মাণ প্রসিদ্ধি লাভ করে। এরপর মেরামত করা হয় আমালেকা গোত্র কর্তৃক। এরপর মেরামত করে জুরহাম গোত্র। এরা ইয়েমেনের বাসিন্দা এবং মক্কায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী। এরপর কুশাই ইবনে কিলাব কর্তৃক মেরামত করা হয়। এরপর কাবাগৃহ পুনঃনির্মাণ করা হয় কোরেশগণ কর্তৃক। ৯ম বার হাতীমে কা'বাসহ পুনঃনির্মাণ করেন হয়রত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) ৬৪ হিজরীতে এবং দশমবার ও শেষবারের মত হাতীমকে বাদ দিয়ে উমাইয়া শাসক আবদুল মালিকের নির্দেশে তাঁর পূর্বাঞ্চলীয় গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ পুনঃনির্মাণ করে। নবম ও দশমবার নির্মাণ এবং পুনঃনির্মাণের কারণ বিস্তারিতভাবে ইতিহাসে বর্ণিত আছে (রুহুল বয়ান)। এরপর শুধু মেরামত হয়েছে-পুনঃনির্মাণ হয়নি। শুধু মসজিদে হারাম বারবার বর্ধিতকরণ করা হয়েছে। আমরা উমাইয়া নির্মিত কা'বা ঘরের হজ্ব করছি। ইমাম মালেক (রঃ) আব্বাসীর খলীফা মনসুরের যুগে কা'বা ভাঙ্গার অনুমতি দেননি।
অষ্টমবার কাবাগৃহ পুনঃনির্মাণের সময় অর্থ ও সামগ্রী সংকট দেখা দিলে কোরেশগণ কিয়দাংশ বাদ রেখে কা'বাগৃহ পুনঃনির্মাণ করে। এই অংশটুকুকে হাতীমে কা'বা বলা হয়। যখন নবী করিম (দঃ)-এর বয়স ৩৫ বৎসর, তখন, এই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। অন্যদের সাথে নবী করিম (দঃ) নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পাথর বহন করে এনে যোগান দিতেন। ২ গৃহের ভিত উঁচু হলে হাজরে আসওয়াদ (কাল পাথর) স্থাপন নিয়ে কোরাইশ সর্দারগণের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। প্রত্যেক গোত্রই নিজেরা হজরে আসওয়াদ স্বস্থানে স্থাপন করার জন্য জিদ ধরতে থাকে। এমনকি-এক পর্যায়ে দাঙ্গা হাঙ্গামারও উপক্রম হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন বুদ্ধিমান লোক পরামর্শ সভার আয়োজন করে। এ ব্যাপারে মীমাংসার পথ বের করার জন্য প্রস্তাব আহবান করলে সকলে মিলে এই প্রস্তাব পাশ করলো যে, আগামীকাল ভোরে যিনিই কা'বাগৃহে সর্বাগ্রে আগমন করবেন- তাঁর ফয়সালাই সকলে মেনে নেবে।
আল্লাহর অসীম কুদরতে পরদিন ভোরে সকলের আগে আল্লাহর হাবীব (দঃ) কা'বাগৃহে আগমন করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক হুযুর আকরাম (দঃ)-এর উপর হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের মীমাংসার ভার ন্যাস্ত হয়। নবী করিম (দঃ) আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানে জ্ঞানী ছিলেন। তিনি একখানা চাদরের উপর পাথরখানা স্থাপন করে সকল সর্দারকে চাদরের কোণা ধরতে বললেন। সকলেই চাদরের কোণা ধরে নির্ধারিত স্থানে পাথরখানা নিয়ে যান। এরপর নবী করিম (দঃ) নিজ পবিত্র হাতে পাথরখানা তুলে যথাস্থানে স্থাপন করে দেন। সকল সর্দার এই কৌশলী ব্যবস্থায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন এবং নবীজীর প্রজ্ঞার প্রশংসা করতে লাগলেন। প্রকৃতপক্ষে সে দিনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল-ভবিষ্যতে মক্কার সুযোগ্য নেতৃত্ব দেবার মত উপযুক্ত মহান ব্যক্তিত্ব কে হবেন। একদিকে আল্লাহর পবিত্র গৃহের পবিত্র পাথর স্থাপনে শরিক হয়ে বিরল গৌরব অর্জন করে কোরেশ সর্দারগণ ধন্য হলো, অন্যদিকে রাহমাতুল্লিল আলামীনের পবিত্র হাতের পরশ পেয়ে হাজরে আসওয়াদও ধন্য হলো।
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২৫) বিবাহ জীবনে প্রবেশ | (০২৭) আত্মপ্রকাশের পূর্বাভাস- নির্জন সাধনা ও গিরিগুহায় চিল্লাকাশী |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |