পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ছয় বৎসর বয়সেই নবী করিম (দঃ) মায়ের বুক হারান। বিবি আমেনাকে (রাঃ) আয়া নামক স্থানে দাফন করে উম্মে আয়মন (রাঃ) কিশোর নবীকে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। মায়ের অসিয়ত অনুয়াযী নবী করিম (দঃ) বিবি উম্মে আয়মনকে (বারাকাহ্) মা বলে সম্বোধন ও সম্মান করতেন এবং বলতেন- "আমার মায়ের ইনতিকালের পর উম্মে আয়মনই আমার মা"।
পরবর্তীকালে বিবি খাদিজার (রাঃ) সাথে হুযুরের বিবাহের পর উম্মে আয়মনকে আযাদ করে দিয়ে নবী করিম (দঃ) নিজ পালিত পুত্র (বিবি খাদিজা (রাঃ) কর্তৃক দানকৃত গোলাম) যায়েদ ইবনে হারেছা (রাঃ)-এর সাথে তাঁকে দ্বিতীয়বার বিবাহ দেন। সে ঘরে উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) জন্ম গ্রহণ করেন। নবী করিম (দঃ) উসামা (রাঃ) কে আপন নাতিতুল্য আদর করতেন। মক্কা বিজয়ের দিনে তিনি আপন উটের পিছনে যুবক উসামাকে (রাঃ) বসিয়েছিলেন। নবী করিম (দঃ) ইনতিকালের পূর্বমূহুর্তে উসামা (রাঃ) কে সেনাপতি করে এক অভিযান প্রেরণ করেছিলেন-৮ম হিজরীতে সংঘটিত মুতার যুদ্ধের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। কিন্তু হুযুর (দঃ)-এর শেষ অবস্থার সংবাদে পথিমধ্য হতে উসামা (রাঃ) মদিনায় ফিরে আসেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফা নিযুক্ত হয়ে রবিউল আউয়াল মাসের শেষের দিকে উসামার (রাঃ) নেতৃত্বে স্থগিত অভিযানটি পুনরায় প্রেরণ করেন। যুদ্ধে রোম বাহিনীকে পরাজিত করে মুতার যুদ্ধের প্রতিশোধ নিয়ে এবং বিপুল গনিমতের মাল নিয়ে তিনি মদিনায় ফিরে আসেন। এই বিজয়ে মুসলমানদের মধ্যে নূতন শক্তির সঞ্চয় হয়েছিল এবং পরবর্তী অভিযানসমূহে এই বিজয় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল।
যা হোক- মক্কায় ফিরে আসার পর নবী করিম (দঃ)-এর লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন দাদা আবদুল মোত্তালিব। দুই বৎসর দাদার আপত্যস্নেহে লালিত পালিত হয়ে ৮ বৎসর বয়সে নবী করিম (দঃ) দাদার ছায়া থেকেও বঞ্চিত হন। আবদুল মোত্তালিব আপন নাতী কিশোর নবীকে কত ভালবাসতেন, তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন ইবনে কাছির তাঁর বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে। খানায়ে কা'বার মোতাওয়াল্লী হিসেবে আবদুল মোত্তালিবের ছিল বিরাট প্রতাপ। হেরেম শরীফের চত্বরে আবদুল মোত্তালিবের জন্য ফরাশ বিছানো হতো এবং ঐ বিছানায় অন্য কেউ বস্তে পারতোনা। কিন্তু কিশোর নবী দাদার আগমনের পূর্বেই এসে ঐ ফরাশে বসে যেতেন। আবদুল মোত্তালিবের আগমন হলে হুযুরের চাচাগণ তাঁকে টেনে সরিয়ে আন্তে চেষ্টা করতো। কিন্তু আবদুল মোত্তালিব তাদেরকে বারন করতেন এবং নবী করিম (দঃ)-এর পিঠে হাত বুলিয়ে নিজের কাছে টেনে নিতেন আর বলতেন- "মোহাম্মদ (দঃ)-এর মর্যাদা অনেক অনেক উঁচু হবে"। আবদুল মোত্তালিবের মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে একদিন উম্মে আয়মনকে ডেকে বললেন- "হে বারাকাহ্, আমার এই সন্তানের যত্ন করতে তুমি ভুলে যেয়োনা। কেননা, আমি আহলে কিতাবদেরকে বলাবলি করতে শুনেছি যে, আমার এই সন্তান শেষ যামানার নবী হবেন"। (বেদায়া ও নেহায়া)
পূর্ববর্তী পেইজ | পরবর্তী পেইজ |
(০২১) শিশুকালে মদিনায় গমন | (০২৩) পিতৃব্য খাজা আবু তালিবের প্রতিপালনে |
সূচীপত্র | এরকম আরো পেইজ |